সোমনাথ রায়: আপনি যেখানেই যান, আমাদের নেটওয়ার্ক পিছু পিছু আসবে।
দশক দেড়েক আগে এক মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানির বিজ্ঞাপনের এই স্লোগান আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল দেশজুড়ে। সেই স্লোগানকেই একটু অদলবদল করে হুগলির শিয়াখালা থেকে জামশেদপুরের উদ্দেশে রওনা দিলেন তিন মোহনবাগান সমর্থক। এতখানি পড়ার পর মনে হতেই পারে, এ আর নতুন কী? ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান সমর্থকরা তো আকছারই এমনটা করে থাকেন। শ্রীনগর থেকে কোঝিকোড়। পানাজি থেকে আইজল। প্রাণের চেয়ে প্রিয় দলকে সমর্থন জোগাতে পৌঁছে যান কলকাতার ফুটবলপাগলরা। ঠিক, তবে তাঁদের সঙ্গে কিছুটা হলেও মৌলিক কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অপূর্বলাল মুখোপাধ্যায় এবং শুভ্র মুখোপাধ্যায়রা। শিয়াখালা থেকে জামশেদপুর এই ২৮১ কিলোমিটার তাঁরা পাড়ি দিচ্ছেন সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিয়ে।
[আরও পড়ুন: পুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু আগামী বছরের প্রস্তুতি, কার হাতে সাজবে কোন মণ্ডপ?]
এই গ্রুপের ‘মোড়ল’ ৪৬ বছর বয়সি প্রকৃতিপ্রেমী কৌশিক সুযোগ পেলেই ছোটেন পাহাড়ে। সেই প্রকৃতির খেয়াল রেখে কার্বন ইম্প্যাক্ট কিছুটা কমাতে চেয়ে এই সিদ্ধান্ত ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের শিক্ষকের। সঙ্গী হিসাবে পেয়ে গিয়েছেন পাড়ারই ত্রিশ বছর বয়সি দুই ভাইকে। অপূর্ব চাকরি করেন দমকল বিভাগে, শুভ্র আর জি করের অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মী। হঠাৎ কেন এই হুজুগ? কৌশিক বলছিলেন, “অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল কোনও অ্যাওয়ে ম্যাচে সাইকেল চালিয়ে যাব। জামশেদপুরের দূরত্বটাই সবচেয়ে সহজ ছিল। তার উপর সবার অফিসের ছুটির বিষয়ও আছে। রবিবার সাইকেল চালানো শুরু করলাম, জামশেদপুর পৌঁছব মঙ্গলবার। পরদিন ম্যাচ দেখে বৃহস্পতিবার আবার রওনা দেব। বাড়ি ফিরব শনিবার। এক সপ্তাহের ছুটির ব্যবস্থাও তো করতে হত।”
শিয়াখালার গ্রাম থেকে রবিবার সকালে রওনা দিয়ে বারুইপাড়া স্টেশন পর্যন্ত আসেন তিনমূর্তি। সেখান থেকে লোকাল ট্রেনে চেপে হাওড়া। ‘মন্দির’ মোহনবাগান তাঁবুতে প্রণাম সেরে ডেবরা, বহড়াগোড়া হয়ে রওনা দিয়েছেন জামশেদপুরের দিকে। ম্যাচের পর মুকুটমণিপুর, বিষ্ণুপুর হয়ে ফিরবেন শিয়াখালা। এই পাগল সমর্থকদের জন্যই এখনও চর্চায় বাংলার ফুটবল। এই আবেগের কারণেই বঙ্গবাসী চিৎকার করে বলে, সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।