টিভি সিরিয়ালের খুব প্রিয় মুখ সন্দীপ্তা সেন। সামনে প্রীতিকা দত্ত।
পুজোর শপিং শুরু করে দিয়েছেন?
সন্দীপ্তা: এখন শপিং সারা বছরই টুকটাক চলতে থাকে। তবে হ্যাঁ, পুজো স্পোশাল কিছু তো কিনতে হয়। এ বছর কোনও ডিজাইনারকে বলে নিজের জন্য কিছু বানিয়ে নেব।
ট্র্যাডিশনাল পোশাক? না অন্য কিছু?
সন্দীপ্তা: দেখুন, সিরিয়ালের দৌলতে শাড়ি পরতে হয় সারা বছর। তাই আমি পুজোয় ট্র্যাডিশনাল কিছু পরতে ইন্টারেস্টেড নই। একটু অন্য ধরনের আউটফিট চাই। আমার যেমন পালাজো আর কুর্তা বেশ স্টাইলিশ লাগে। জিনস-টিশার্টেও খুব কমফর্টেবল ফিল করি। আমি ঘড়ি, সানগ্লাস, ডিজাইনার জুতো কিনতে খুব ভালবাসি। কিন্তু কী জানেন তো, আমি পুজোয় কলকাতায় থাকি না। বেড়াতে চলে যাই।
পুজোয় তা হলে কলকাতার বাইরে?
সন্দীপ্তা: ছোট থেকেই তাই। শুধু গত বছর শহরে ছিলাম। এ বছরও বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান আছে। তবে কোথায় যাচ্ছি, সেটা সারপ্রাইজ থাক।
[ মোহনবাগানের বিশ্বকর্মা, পুজোর দিন শোনালেন নিজের প্রেমকাহিনি ]
কফি হাউসের পাঠকরা কিন্তু জানতে চাইবেন, সন্দীপ্তা পুজোয় কোথায় যাচ্ছেন!
সন্দীপ্তা: তা হলে ওঁদের জন্য বলছি। আপাতত যা প্ল্যান, বন্ধুদের সঙ্গে কেরল যাচ্ছি। কোচি থেকে আমাদের সারপ্রাইজ ট্রিপ শুরু হবে। বাকিটা ঘুরে আসার পর সবাই জানতে পারবেন।
আপনি ঘুরতে যেতে ভালবাসেন। আপনার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল দেখলেই সেটা বোঝা যায়।
সন্দীপ্তা: ঠিক ধরেছেন (হাসি)। গত বছর চুটিয়ে ঘুরেছি। ইউএস দিয়ে শুরু করেছিলাম। তার পর ফিরে কেরল, পুদুচেরি, হিমাচলপ্রদেশ। ব্যাংকক। পুরি তো আছেই। আসলে ‘তুমি আসবে বলে’ আর ‘প্রতিদান’, দু’টো সিরিয়ালের মাঝে এক বছরের একটা গ্যাপ নিয়েছিলাম। তখন প্রচুর ঘুরেছি।
সোলো ট্রিপে গিয়েছেন?
সন্দীপ্তা: হ্যাঁ। বারো দিনের হিমাচলপ্রদেশ স্পিতি ভ্যালির ট্রিপ আমার প্রথম সোলো ট্রিপ। ইট ওয়াজ পারফেক্ট। আসলে মা-বাবা-কাজিনরা মিলে গত বছর এত ঘুরেছি যে আর কেউ ছুটি পাচ্ছিল না। তাই একাই বেরিয়ে পড়েছিলাম।
আজকাল অনেক মেয়ে সোলো ট্রিপে যাচ্ছেন। তাঁদের কোনও টিপস?
সন্দীপ্তা: যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার ওয়েদার, খাওয়াদাওয়া, আদবকায়দা নিয়ে একটু হোমওয়ার্ক করে রাখুন। যেমন আমি ভাবছি ‘গ্রেট রন অফ কছ’-এ যাব। এখন থেকেই টুকটাক রিসার্চ শুরু করেছি। তার পর ওখানে গিয়ে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেবেন না গাড়ি ভাড়া করবেন, সেটাও দেখে নেবেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রিভিউ পড়লেই অনেকটা কাজ হবে। ড্রাইভারের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করাটাও জরুরি। আর নিজের ট্রাভেল ডিটেলস (টিকিট, হোটেলের নাম, কবে কোথায় থাকছেন ইত্যাদি) মা-বাবার সঙ্গে শেয়ার করে রাখবেন। না হলে ওঁরা টেনশনে থাকেন।
এ বার একটু ইন্ডাস্ট্রির কথায় আসি। ২০০৮ থেকে আপনার যাত্রা শুরু। ‘দুর্গা’ দিয়ে। তার পর ‘টাপুর-টুপুর’, ‘তুমি আসবে বলে’। এখন ‘প্রতিদান’। এই জার্নিটা কেমন ছিল?
সন্দীপ্তা: খুব ভাল। আমি ব্লেসড যে, মানুষ আমাকে ভালবেসেছেন। আমি ছুটি নিয়ে বাড়িতে থাকলেও ওঁরা আমাকে টিভির পর্দায় দেখার জন্য অপেক্ষা করেছেন। সবার এমন ভাগ্য হয় না।
এখন যাঁরা সবে অভিনয় শুরু করছেন, তাঁদের দেখে কী মনে হচ্ছে?
সন্দীপ্তা: এখন পুরোপুরি আলাদা সময় চলছে। সিনিয়র-জুনিয়র ভাগ করলে পুরোটা ঠিক বলা হবে না। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে জুনিয়রদের মানুষের কাছে পৌঁছনো অনেক ইজি। মনে আছে যখন ‘দুর্গা’ করছি, তখন আমাকে দেখতে মানুষ টিভির সামনে একটা পার্টিকুলার সময় অপেক্ষা করে থাকতেন। এখন ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে সাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারছি আমরা। এটা বেশ পজিটিভ মনে হয় আমার। এক দিকে ছবি বা সিরিয়ালের প্রচার হচ্ছে। অন্য দিকে ফ্যানেদের সঙ্গে কথাও বলা হচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মনে হয় না, পার্সোনাল স্পেসটা কমে যাচ্ছে?
সন্দীপ্তা: এটা আমার মনের কথা জিজ্ঞেস করেছেন। আসলে টিভি বা বড় র্পদায় আমরা যাঁরা কাজ করছি, সাধারণের কাছে আমরা এখনও একটা স্বপ্নের মতো। সেখানে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে আমরা এখন অনেক বেশি অ্যাভেলেবল। বাবার কাছে একটা গল্প শুনেছিলাম। পেট্রোল পাম্পে গাড়ির তেল ভরতে গিয়ে উত্তমকুমার নাকি এক আর্টিস্টকে বলেছিলেন, “ওপেনলি ও ভাবে দাঁড়িয়ে থাকিস না।” এখন আর কেউ অত ভাবে না। পুজো, এক্সারসাইজ, মেকআপের ভিডিও-ছবি সব সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে। আমি এর ঘোরতর বিপক্ষে। আর সত্যি বলতে আমি একটু ডিস্ট্যান্স বজায় রাখতেই ভালবাসি।
‘দুর্গা’, ‘টাপুর-টুপুর’, ‘নন্দিনী’, ‘শিমুল’- আপনার এই চরিত্রগুলো নারীশক্তির কথা বলে। এগুলো কি আপনি নিজে বেছে নিয়েছেন, না কি জাস্ট হয়ে গিয়েছে?
সন্দীপ্তা: ‘দুর্গা’-র অফারটা নিজে থেকেই এসেছিল। তার পর স্টার জলসায় কনট্র্যাক্ট হল। এখন আমি স্টোরি, প্লট শুনে কাজ শুরু করি। নারীশক্তির কথাটা মাথায় রেখেই ভাবি। কান্নাকাটি বা দুর্বল চরিত্র আমার একদম ভাল লাগে না। দর্শকরাও আমাকে পর্দায় সে ভাবে দেখতে চাইবেন না। যে কোনও পরিস্থিতিতে বি স্ট্রং- এই মেসেজটা আমি সবাইকেই দিতে চাই।
আচ্ছা, বড় পর্দার মতো ছোট পর্দাতেও কি অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পে-স্কেলে বৈষম্য আছে?
সন্দীপ্তা: ওরে বাবা, থাকবে না আবার? খুব আছে। এ দিকে মেগায় মেয়েদের দায়িত্ব বেশি থাকে। আমি চ্যানেলকেও এই বৈষম্যের কথা বলেছি। ছেলেদের চরিত্রকে কেন্দ্র করে ক’টা মেগা হয়, বলুন তো? ‘খোকাবাবু’ আর ‘ভজ গোবিন্দ’। কিন্তু টাকা কম পাবে মেয়েরাই।
[ পুজোর আগে নিজেকে ঝরঝরে করুন, নিন ডিটক্স ম্যাসাজ ]
আপনি তো রাহুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বিয়ে করছেন কবে?
সন্দীপ্তা: প্লিজ, আমি না টায়ার্ড হয়ে গিয়েছি এই প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে। আর পারছি না। আমি রাহুল-প্রিয়াঙ্কার মধ্যে ছিলাম না। কোনও ভাবেই নয়। এতক্ষণ সব নতুন কথা বলছিলাম। ওগুলোই ভাল ছিল। রাহুল আমার খুবই ভাল বন্ধু। তবে কাকে বিয়ে করব, কবে করব, সময় হলে সব জানাব।
সিনেমা দেখতে ভালবাসেন?
সন্দীপ্তা: খুবই।
‘ক্রিসক্রস’ দেখেছেন?
সন্দীপ্তা: নাহ। সময় হয়নি।
আচ্ছা, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেটে থাকতে হয়। সব সময় নিজের শুটিং থাকে না। তখন সময় কাটে কী করে?
সন্দীপ্তা: এখন নেটফ্লিক্স দেখেই বেশি সময় কেটে যায়।
কোন সিরিজ দেখছেন এখন?
সন্দীপ্তা: জাস্ট ‘ব্ল্যাক মিরর’ শেষ করেছি। ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ শুরু করব।
হরর ভাল লাগে?
সন্দীপ্তা: হ্যাঁ। রাধিকা আপ্তের ‘ঘুল’ দেখলাম। উফফ… ফাটাফাটি। নেটফ্লিক্সের কনটেন্ট নিয়ে কোনও কথা হবে না।
[ ‘দশ বছরের সম্পর্ক কিন্তু বিয়ে নিয়ে কিছু বলব না’ ]
কিন্তু বাংলা মেগা সিরিয়ালের কনটেন্টে এক্সপেরিমেন্ট হয় না কেন?
সন্দীপ্তা: কারণ এগুলোই আমাদের টিআরপি দেয়। টার্গেট অডিয়েন্স তো সেই মা-ঠাকুমা। ধরতে হয় গ্রামবাংলাকে। ওঁরা যা চান আমাদের সেগুলোই করতে হয়। তবে এখন কিছু কিছু এক্সপেরিমেন্টাল প্রোজেক্ট হচ্ছে।
বড় পর্দায় বা ওয়েব সিরিজে অভিনয় করতে চান?
সন্দীপ্তা: পাগলের মতো চাইছি কাজ করতে। মেগার ঠেলায় করা হয় না। বিশ্বাস করুন, এবার ‘প্রতিদান’ শেষ হলেই আমি ওয়েব সিরিজে মন দেব।
The post ‘রাহুল নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে টায়ার্ড হয়ে গেছি’ appeared first on Sangbad Pratidin.