নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বীরভূমের রাজনীতিতে ফের ওঠাপড়া। কালীপুজোর উদ্বোধনে গিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল। সম্ভবত তারই শাস্তি পেতে হল সিউড়ির ভুরকুনা এলাকার তৃণমূল বুথ সভাপতি খয়রাত মোল্লাকে। তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। উৎসবের মরশুমে এই ঘটনা সিউড়ি বিধানসভা এলাকার রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
শনিবার ১৩ বছরের লালমোহনপুর ৬ নম্বর সংসদ ২৩০ নম্বর বুথের সভাপতি খয়রাত মোল্লাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় তারই তুতো ভাই শেখ গিয়াসউদ্দিনকে। খয়রাতকে সরিয়ে দেওয়ায় তিনি বিস্মিত। ঘটনার সূত্রপাত কালীপুজোর দিন। সেদিন সিউড়ি বিধানসভার ভুরকুনা গ্রামের একটি ক্লাবের কালী পুজো উদ্বোধনে আসেন কাজল শেখ। তাঁর সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গিয়েছিল খয়রাত মোল্লাকে। যে কারণে খয়রাতের এই পরিস্থিতি হল বলে এলাকার তৃণমূল কর্মীরা মনে করছে। তাঁরা জানান, বিধায়ক হিসাবে বিকাশ রায়চৌধুরীর অনুগামী ছিলেন। ক্লাবের উদ্যোগে একটি কালীমন্দির হয়েছে। সেই চত্বরে একটা হাইমাস্ট আলোর দাবি বিধায়ককে জানান ক্লাব তথা তৃণমূল কর্মীরা। অভিযোগ, বিকাশদাকে বলে আলো পাওয়া যায়নি। কিন্তু সভাধিপতি কাজল শেখকে জানাতেই তিনি নির্দিষ্ট এলাকায় আলোর ব্যবস্থা করে দেন।
কালীপুজোর উদ্বোধনে বিকাশ রায়চৌধুরী ও কাজল শেখ - দুজনকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাতে বিকাশ রায়চৌধুরী না এলেও কাজল শেখ আসেন। সেখানেই খয়রাত মোল্লার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তাই কালীপুজোর ছুটির মাঝে 'কোপ' দীর্ঘদিনের পদাধিকারী খয়রাতের উপর। খয়রাত মোল্লার দাবি, ''২০২৪ সালে এলাকায় বুথে ৮০০-র বেশি ভোটে লিড দিয়েছি। আমরা দলের সৈনিক। আমরা বিকাশদা, কাজলভাই দুজনকেই ডেকেছিলাম। কেউ না এলে দোষ আমাদের? তাছাড়া কাজলভাই তো কোর কমিটির সদস্য। দলের নেতা। আমার দোষটা কোথায়?''
প্রশ্ন উঠেছে, কোনও শোকজ নেই, চিঠি নেই, কীভাবে অপসারণ করা হল বুথ সভাপতিকে? সিউড়ি এক ব্লকের সভাপতি প্রশান্ত প্রসাদ লালা জানান, ''শোকজের কোনও প্রশ্ন নেই। অঞ্চল কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানিয়েছে। আমরা বিধায়ককে জানিয়েছি। খয়রাতের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ আসছিল। তাই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।'' যদিও সভাধিপতি কাজল শেখ বলেন, ''খয়রাত খুব ভাল সংগঠক। ২৪ লোকসভা নির্বাচনে ভাল ফল করেছে। কোনও আলোচনা ছাড়া কেন তাঁকে এভাবে পদ থেকে সরানো হল, তা কোর কমিটির বৈঠকে জানতে চাইব।'' যদিও এই পদক্ষেপের পিছনে কাজল-বিকাশের ক্ষমতার লড়াই দেখছে দলের কর্মীদের একাংশ। এ প্রসঙ্গে বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ''কোনও লড়াই নেই। এলাকায় নানা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছিল খয়রাত। দলের ব্লক কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া নিয়মিত কাজলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। কোনও বিভ্রান্তি নেই। আমরা একজোট হয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।''