সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: আর জি কর কাণ্ড নিয়ে উত্তাল গোটা রাজ্য। তারই মাঝে আগামী ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ৬ কেন্দ্রে উপনির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে উপনির্বাচনে স্থানীয় নেতাদের উপরেই আস্থা রেখেছে তৃণমূল।
সিতাইয়ের বিধায়ক ছিলেন জগদীশ বর্মা বসুনিয়া। তিনি চব্বিশের লোকসভা ভোটের প্রার্থী ছিলেন। সাংসদ হওয়ার পর এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন। সেখানে প্রার্থী হিসাবে তাঁর স্ত্রী সঙ্গীতা রায়ের উপরেই ভরসা রেখেছে শাসক শিবির। জগদীশ ঘরনি সঙ্গীতা ২০১২ থেকে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয়। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হন। ভোটে জিতে আদাবাড়ি পঞ্চায়েত প্রধান হন। এর পর ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন। কোচবিহার তৃণমূল মহিলা সংগঠনের জেলা সহ সভানেত্রী সঙ্গীতাতেই ভরসা রেখেছে শাসক শিবির।
সিতাইয়ের তৃণমূল প্রার্থী সঙ্গীতা রায়
মাদারিহাটের ভূমিপুত্র জয়প্রকাশ টোপ্পোকে প্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছে তৃণমূল। বীরপাড়া-মাদারিহাট ব্লক সভাপতি তিনি। বুথ স্তর থেকে উঠে আসা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির জয়প্রকাশকে প্রার্থী হিসাবে শাসক শিবির বেছে নেওয়ায় খুশি দলীয় নেতা-কর্মীরা।
মাদারিহাটের তৃণমূল প্রার্থী জয়প্রকাশ টোপ্পো
হেভিওয়েট কোনও বহিরাগত প্রার্থী নন। তালড্যাংরাতেও একেবারে স্থানীয় তরুণ মুখের উপরেই ভরসা রাখল শাসকদল। প্রার্থী হিসাবে সিমলাপাল ব্লকের বিক্রমপুর পঞ্চায়েতের তালদা গ্রামের বাসিন্দা ফাল্গুনী সিংহবাবুকে বেছে নেওয়া হয়েছে। বছর ৪৪ এর ফাল্গুনীবাবু আগে সিমলাপাল ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি ছিলেন। ২০২২ সালে তাঁকে সিমলাপাল ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি করা হয়। এখনও তিনি সিমলাপাল ব্লক তৃণমূল সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। কলেজে ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। প্রথমে কলেজ রাজনীতিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করতেন। এর পর যুব তৃণমূল। তার পর মূল তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি। দক্ষ সংগঠক হিসাবে সিমলাপাল ব্লক এলাকায় তরুণদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় মুখ তিনি। সারেঙ্গার গড়গড়িয়া সুভাষ হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক তিনি। রাজনীতিতে কম বয়স থেকেই বাগ্মী হিসাবে পরিচিত। তবে নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে এবারই প্রথম। জীবনে কোনদিন গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি বা জেলা পরিষদে লড়াই করেননি। প্রথমবারেই একেবারে বিধানসভা উপনির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা হতেই রীতিমতো খুশি তৃণমূলের এই যুব নেতা। রাখঢাক না করেই বললেন, “দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে তালড্যাংরা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসাবে মনোনীত করায় আমি আনন্দিত।"
তালড্যাংরার তৃণমূল প্রার্থী ফাল্গুনী সিংহবাবু
প্রার্থী নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েন চলছিল তৃণমূলের অন্দরে। প্রায় হাফডজন নেতার নাম ঘোরাফেরা করছিল। তাঁদের কেউ প্রাক্তন বিধায়ক তো কেউ আবার যুব নেতা। কিন্তু শেষমেশ সুজয় হাজরা ও নারায়ণগড়ের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষকে নিয়ে লড়াই চলতে থাকে। সুজয় হাজরা মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি। মেদিনীপুরের বর্তমান সাংসদ জুন মালিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তেমন ভালো নয়। তবে শেষমেশ বাজিমাত করলেন সুজয়।
মেদিনীপুরের তৃণমূল প্রার্থী সুজয় হাজরা
সন্দেশখালি কাণ্ডের আবহে হওয়া লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাটে প্রার্থী হিসাবে বেছে নেওয়া হয় হাজি নুরুল ইসলামকে। ভোটের টিকিট পাওয়ার পরই বিধায়ক পদ ছাড়েন তিনি। সাংসদ হওয়ায় হাড়োয়ায় উপনির্বাচন। সেখানে প্রার্থী হিসাবে প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুলের মেজো ছেলে শেখ রবিউল ইসলামকে বেছে নিয়েছে তৃণমূল।
হাড়োয়ার তৃণমূল প্রার্থী শেখ রবিউল ইসলাম
নৈহাটিতে দক্ষ রাজনীতিক সনৎ দে-কে প্রার্থী হিসাবে বেছে নিয়েছে ঘাসফুল শিবির। সনৎ নৈহাটি পুরসভার ১১নম্বর ওয়ার্ডের পর পর দুবারের কাউন্সিলর। ২০০৩ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত শহর যুব তৃণমূল সভাপতি ছিলেন। ২০২২ থেকে শহর তৃণমূলের সভাপতি হন। ২০১৫ পুরসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে পুর বোর্ডের চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে স্বাস্থ্যর সঙ্গে স্বাস্থ্য ও জঞ্জাল বিভাগ যুক্ত হয়।
নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে
আগামী ২৩ নভেম্বর উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশ। বিরোধীদের প্রতিহত হতে কে হাসি হাসেন, সেটাই এখন দেখার।