অশুপ্রতিম পাল, খড়গপুর: বিদ্যালয়ে পিআইই নির্বাচনে ব্যালট পেপার লুঠের অভিযোগ খড়গপুর পুরসভার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। যদিও ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক শোরগোল খড়গপুরে। ঘটনার পর দুদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও তীব্র আতঙ্কে স্কুলের প্রধানশিক্ষক। ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধেয় খড়গপুর শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চ রোডের ধারে তেলেগু বিদ্যাপীঠমে পিআইই পদে নির্বাচন ছিল। অভিযোগ নির্বাবনে পরাজয়ের পর ক্ষিপ্ত হয়ে পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বানতা মুরলীধর রাওয়ের অনুগামীরা ব্যালট পেপার লুঠ করে চম্পট দেয়। পুরো ঘটনাটি কাউন্সিলর ও তৃণমূলের খড়গপুর শহর কমিটির সভাপতি সূর্য প্রকাশ রাওয়ের উপস্থিতিতে ও প্রত্যক্ষ মদতে হয়েছে বলে অভিযোগ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের। জানা গিয়েছে, এই বিদ্যালয়ে নিয়ম অনুযায়ী পিআইই পদে একজনের মনোনীত হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুযায়ী বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে প্রাক্তন শিক্ষক এম কালীদাসকে মনোনীত করা হয়। ওই শিক্ষক গত তিন বছর ধরে এই পদেই ছিলেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকেই ফের মনোনীত করেন। বিষয়টি জানতে পারেন ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বানতা মুরলীধর রাও। তিনি শনিবার বিদ্যালয়ে গিয়ে এই পদের জন্য নিজের নাম প্রস্তাব করেন। ফলে নির্বাচন অনিবার্য হয়ে ওঠে। সেই নির্বাচন মঙ্গলবার হয়। সেখানে ভোটার ছিলেন মাত্র ১২ জন। তারমধ্যে অভিভাবক প্রতিনিধি ছিলেন ছয় জন। শিক্ষক প্রতিনিধি ছিলেন তিনজন। একজন ছিলেন অশিক্ষক কর্মী। প্রধান শিক্ষক ও একজন সরকার মনোনীত সদস্য ভোটার হিসাবে ছিলেন। সবমিলিয়ে ১২ জন ভোটার। তারমধ্যে সকলেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করলেও প্রধান শিক্ষকের ব্যালট পেপারটি একটি খামের মধ্যে গোপনে রাখা ছিল নিয়মানুযায়ী। একমাত্র টাই হলে তখন প্রধান শিক্ষকের ব্যালট পেপার খোলার নিয়ম।
[আরও পড়ুন: দলবদলের অঙ্কে হামরো পার্টির হাতছাড়া দার্জিলিং পুরসভা, দখল নিল অনীত থাপার দল]
নির্বাচনের পর ব্যালট বাক্স খুলে গণনা করা হয়। তাতে দেখা যায় এম কালীদাস সাতটি ভোট পেয়েছেন। আর বানতা মুরলীধর রাও পেয়েছেন চারটি ভোট। অভিযোগ এই ফল ঘোষণার পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বানতা মুরলীধর রাও। তিনি এই নির্বাচন মানেন না বলে হইচই শুরু করেন। চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয় কাউন্সিলর বানতা মুরলীধর রাওয়ের অনুগামীরা। অভিযোগ, তারপরই কাউন্সিলরের ইঙ্গিতে তাঁর অনুগামীরা ব্যালট বাক্স থেকে বের করে রাখা ব্যালট পেপারগুলি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। তারপরেই দেখা যায় অনিবার্য কারণে এই নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে এই মর্মে একটি নোটিস।
যদিও প্রধান শিক্ষক কে শ্রীরাম চন্দ্রমূর্তি বলেছেন, তাঁকে জোর করে এই নোটিস লিখিয়ে টাঙাতে বাধ্য করা হয়েছে। এদিকে এই গন্ডগোল দেখে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান নির্বাচনের কাজ দেখতে আসা খড়গপুর পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক রজত কুমার পাল। তবে পুরো ঘটনার বিষয়ে এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঙ্গলবার রাতেই খড়গপুর টাউন থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে অভিযোগ হয়েছে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে এই ঘটনার বিষয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ বুধবার বলেছেন ” এসব তো নমুনা। কেমন ভোট হচ্ছে। আর কেমন ভোট হবে তার প্র্যাকটিস চলছে। লুঠ ছাড়া তৃণমূল জিততে পারবে না জেনে গিয়েছে।” তবে অভিযুক্ত কাউন্সিলর বানতা মুরলীধর রাও বলেছেন ” এই নির্বাচন বৈধ নয়। কোনও ভিত্তি নেই। আর কোনও ব্যালট পেপার লুঠ করা হয় নি। সব মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।” যদিও এই ব্যাপারে বারবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেন নি তৃণমূলের খড়গপুর শহরের সভাপতি সূর্য প্রকাশ রাও। তবে তৃণমূলের জেলা কো অর্ডিনেটর তথা বিধায়ক অজিত মাইতি বলেছেন ” বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে।” এদিকে মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পর থেকে তেলেগু বিদ্যাপীঠমের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে বাকি শিক্ষকরা রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন।