ধীমান রায়, কাটোয়া: ক্ষমতা পাওয়ার পর থেকেই একাধিক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন ব্যয়ের অভিযোগ উঠেছে। শুধু কী তাই, তাঁদের বাড়ি-ঘর দেখেও চোখ কপালে উঠেছিল আমজনতার। কিন্তু ব্যতিক্রমও রয়েছে। আউশগ্রামের বেরেণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বনাথ সিংয়ের দৈনন্দিন জীবনসংগ্রাম কার্যত এক দৃষ্টান্ত। ভোরের আলো ফুটতেই সাইকেলে চড়ে ঘুরে ঘুরে শাকসবজি ফেরি করেন তিনি। তারপর পঞ্চায়েতের দায়িত্বও সামলান। দিনরাত এক করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যাওয়া এই জনমজুর মানুষটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ এলাকাবাসী।
আউশগ্রামের মাজেরগ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ সিং পেশায় জনমজুর। পাশাপাশি সংসার চালাতে শাকসবজি ফেরিও অনেকদিন ধরেই। এরমধ্যে ২০১৮ সালে ভোটে জিতে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন। এখনও তিনি তার পেশা ছাড়েননি। তবে পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁর খাটনি বেড়েছে। বেরেন্ডা পঞ্চায়েতের মাজেরগ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ সিংয়ের বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ও দুই ছেলে। তাঁর স্ত্রী মানবী সিংও জনমজুরি করেন। বড় ছেলে রানা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। তাই অল্প পড়াশোনা করে এখন বাড়িতেই থাকে। ছোট ছেলে সায়ন নবম শ্রেণিতে পড়ে।
[আরও পড়ুন: কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে রাজ্যের হাতিয়ার ‘জব ফেয়ার’, মেলা থেকে ৯ হাজার চাকরি হয়েছে, দাবি মন্ত্রীর]
মাটির দেওয়াল অ্যাসবেসটসের ছাউনি এক কুঠুরি ঘরেই সপরিবারে থাকেন বিশ্বনাথবাবু। রোজ ভোর সাড়ে তিনটের মধ্যেই ঘুম থেকে উঠে পড়েন বিশ্বনাথবাবু। তারপর সাইকেল চালিয়ে চলে আসেন গুসকরা শহরে। পাইকারি দোকান থেকে শাকসবজি কেনেন। এরপর ঘুরে ঘুরে গুসকরা শহর ও আশপাশের গ্রামে বিক্রি করেন। বিক্রি হয়ে গেলে বাড়ি ফিরে যেতে হয় অফিস। বিশ্বনাথবাবুর জীবন দেখলে মনে হতেই পারে আর পাঁচটা শ্রমজীবীর সঙ্গে পঞ্চায়েত উপপ্রধানের কোনও পার্থক্য নেই। বিশ্বনাথবাবুর স্ত্রী মানবী সিং বলেন,” আগে আমার স্বামী শাকসবজি বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পর মাঠে কাজে যেতেন। এখন উপপ্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর সবদিন কাজে যেতে পারেন না। তবে আমি এখনও কাজে যাই। নাহলে সংসার চলবে কী করে?”
[আরও পড়ুন: পরপুরুষে মজেছেন স্ত্রী! সন্দেহের বশে বছরদুয়েকের সন্তানের সামনেই গৃহবধূকে ‘খুন’ স্বামীর]
মাজেরগ্রাম থেকে পঞ্চায়েত অফিসের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। বিশ্বনাথ সিং জানান, “কখনও সুযোগ পেলে কারও বাইকে চড়ে যাই। তা নাহলে বাসে যাতায়াত করি। আবার সাইকেলেও মাঝেমধ্যে যেতে হয়।” তিনি আরও বলেন,”আমি জনপ্রতিনিধি হয়েছি মানুষের জন্য কাজ করার জন্য। আমার সংসারের জন্য রোজগার করতে হবে। তাই সবজি বিক্রির কাজটা করতেই হয়। মাঝেমধ্যে খুব চাপ পড়ে যায়। তবে গাসওয়া হয়ে গিয়েছে।” এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের আউশগ্রাম ১ ব্লকের কার্যকরী সভাপতি প্রশান্ত গোষ্বামী বলেন,”বিশ্বনাথ সিংয়ের মতন ব্যক্তি যেমন আমাদের দলের কাছে সম্পদ। পাশাপাশি সমাজে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে এক প্রেরণা। দিনরাত সততার সঙ্গে তিনি কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। এটা সকলের কাছে শিক্ষনীয়।”