নন্দন দত্ত, সিউড়ি: খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগে লোকসভার দিন ঘোষণা করে দিলেন লোকসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা। শনিবার সিউড়িতে দলের জেলা কার্যালয়ে কর্মীদের নিয়ে বৈঠক চলাকালীন বিজেপি নেতা সুজিত দাস ঘোষণা করলেন এপ্রিল মাসের কবে থেকে ভোট। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সরকারিভাবে মুখ খোলার আগেই এভাবে আগাম দিন ঘোষণায় স্বভাবতই তুমুল চাঞ্চল্য রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) কথায়, ‘‘নির্বাচন কমিশন যে বিজেপির কাজে ব্যবহৃত হয়, তা প্রমাণিত সত্য। ফলে কবে ভোট তার আগাম খবর বিজেপি নেতাদের কাছে থাকবে, এটা স্বাভাবিক।’’
আগামী ২২ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন সারা দেশে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন ঘোষণা করেছে। তার পরই লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা করবে তারাই। যদিও তার আগে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। তার আগেই শনিবার সিউড়িতে দলীয় কর্মীদের বৈঠকে লোকসভা নির্বাচনের জেলা ইনচার্জ সুজিত দাস কর্মীদের জানিয়ে দেন, ‘‘১০ এপ্রিল থেকে লোকসভা নির্বাচন শুরু হবে। আট দফায় সেই ভোট চলবে। রাজ্যের ৪২টি আসনের লোকসভা নির্বাচনে পাঁচটি করে লোকসভা আসনের ভোট নেওয়া হবে।’’ জেলা বৈঠকের সেই ভিডিও রাতেই ভাইরাল হয়ে যায়। যা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কারণ বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতে এই ভিডিও বিজেপি ইচ্ছে করে ভাইরাল করেছে। দলের কর্মীদের প্রস্তুতি সভায় বিজেপির মতো শৃঙ্খলাপরায়ণ দলের পক্ষে এভাবে ভিডিও ভাইরাল সম্ভব নয়।
[আরও পড়ুন: ক্রমশ দেশজুড়ে দাপট বাড়ছে করোনার, বাংলায় JN.1 আক্রান্ত ৯৬]
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কর্মীদের সুজিত দাস বলছেন ‘‘আগামী ১০ এপ্রিল সম্ভবত নির্বাচন শুরু হচ্ছে। ১৫ মে এই সময়সীমার মধ্যে আট দফায় আমাদের রাজ্যে লোকসভা নির্বাচন হতে চলেছে। সেখানে দু-একটা তারিখের হেরফের হতে পারে।’’ তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিজেপি নেতার এই দাবিকে কটাক্ষ করা হয়েছে। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘উনি অবান্তর সবজান্তা ভাব করছেন, নাকি আগাম খবর বিজেপির কাছে থাকছে, সেটা সময় বলবে। কিন্তু এটা তো প্রমাণিত সত্য যে, নির্বাচন কমিশন পুরোদস্তুর বিজেপির কাজে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে কবে ভোট তার আগাম খবর তাদের কাছে পৌঁছে যাবে, এটা তো স্বাভাবিক।”
শাসকদলের বীরভূম জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি এই চমকের রাজনীতি করতেই অভ্যস্ত। গত দিনে দেখা গিয়েছে কার বাড়িতে ইডি, সিবিআই যাবে, কখন রেড হবে, তার আগাম ঘোষণা করেন বিজেপি নেতারা। জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ক্ষেত্রেও সেই পথে হাঁটছে। তাদের দিন ঘোষণার আগেই বিজেপি দলীয় কর্মীদের জানায় কী করে। ফলে নির্বাচন কমিশন লোকসভা নির্বাচনকে একটা হাস্যকর পরিস্থিতিতে নিয়ে গিয়ে ফেলছে।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘দেশের নিরপেক্ষতাকে ধ্বংস করছে বিজেপি। গণতন্ত্রের যে সৌন্দর্য, যে গরিমা তা লুণ্ঠিত হচ্ছে বিজেপির হাতে। তাই সব ক্ষেত্রেই তারা আগ বাড়িয়ে ঘোষণা করছে। ফলে কমিশনের কাজেও তারা দখলদারি করছে, এই ঘোষণা থেকে সেটা স্পষ্ট।’’