স্টাফ রিপোর্টার: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসুস্থতা নিয়ে দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে সৌজন্য ও শিষ্টাচারের পরিচয় দিলেও চরম নির্লজ্জভাবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে কুৎসা করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার খেজুরিতে বিজেপির সভা থেকে বেলাগাম মন্তব্য ও কুরুচিকর শব্দ প্রয়োগ করে একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন শুভেন্দু। যেভাবে হাত-পা-কোমর নেড়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে এদিন খেজুরির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আঘাত পাওয়া ও রক্তক্ষরণ নিয়ে যে ভাষায় কুমন্তব্য করেছেন তাতে সভায় উপস্থিত মহিলাদের একাংশ লজ্জা পেয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
বিরোধী দলনেতার এমন কুরুচিকর আক্রমণের বিরুদ্ধে এদিন সন্ধ্যা থেকেই শুভেন্দুর আচরণ নিয়ে রাজ্যজুড়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। এমন অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও কুৎসিত শব্দ প্রয়োগে মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে (Mamata Banerjee) কুরুচিকর আক্রমণ করার কড়া জবাব দিয়ে বিরোধী দলনেতাকে পালটা আক্রমণ করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের দাবি, ‘‘শিক্ষা-সংস্কৃতি-শিষ্টাচার কোনওটাই না আছে শুভেন্দুর, না আছে বিজেপির। মাতৃজাতি তথা নারীদের যে বিজেপি বিন্দুমাত্র সম্মান করতে জানে না তার প্রমাণ খেজুরির সভা থেকে ফের বুঝিয়ে দিলেন শুভেন্দু।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে শুভেন্দুর (Suvendu Adhikari) এই কুৎসা ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির কড়া জবাব দিয়েছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী একেবারে চরম নির্লজ্জভাবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে কুৎসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসুস্থতা নিয়ে সকলে তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন। এমনকী, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী থেকে রাহুল গান্ধীও টুইট করে সুস্থতা কামনা করেছেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারী যে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করলেন সেটা বাংলার সংস্কৃতি-বিরোধী। তাঁরা মহিলাদের সম্মান করেন না। মাতৃসম মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান করেন না।”
[আরও পড়ুন: ‘অর্থের পিছনে দৌড়লে সম্মান পাওয়া যায় না’, কর্মিসভায় কেঁদে ফেললেন বিশ্বজিৎ দাস]
এদিন খেজুরিতে বিজেপির এক সভায় হাত-পা নেড়ে কোমর দুলিয়ে শুভেন্দু বলেন, “মাথা ঘুরিয়ে ধপধপ করে পড়ে যাচ্ছে। পড়া শুরু হয়েছে উপর থেকে। নিচ অবধি পড়া শুরু হয়ে যাবে।” এদিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে কুণালের জবাব, “যে কোনও প্রবীণ মানুষের যে কোনও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হঠাৎ রক্তচাপের সমস্যা, হঠাৎ অক্সিজেনের সমস্যা হতেই পারে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও একবার পড়ে গিয়েছিলেন। শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে কুরুচিকর আচরণটা করলেন সেটা কখনও বাংলার মা-বোনেরা বরদাস্ত করবেন না। এটা একমাত্র অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষেই সম্ভব।”
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কুরুচিকর আক্রমণের পরই রাজ্যজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন বিরোধী দলনেতা। সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, সাংসদ ডা. কাকলি ঘোষদস্তিদার, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা পরপর এ নিয়ে সরব হন। পার্থ নিজের এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, ‘বাংলার জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঘাতজনিত অসুস্থতাকে নিয়ে নিম্নমানের কুরুচিকর কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে আক্রমণ কি বিজেপির নারীবিদ্বেষী মনোভাবের পরিচয় বহন করছে না?’ সাংসদ কাকলির কথায়, “মানুষের বিপদে, অসুস্থতায় যাঁরা এইরকম নিম্নরুচির মন্তব্য করতে পারেন, তাঁরা মনুষ্যত্বহীনতায় ভুগছেন। মানুষই এর জবাব দেবেন। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে খেপে উঠেছেন বিরোধী দলনেতা।”