দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। শাসক থেকে বিরোধী প্রায় সবপক্ষ কোমর বেঁধে সারছে প্রচার। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাঙড় বিধানসভা। আর সেই ভাঙড়ের ‘ভোট মেশিনারি’ আরাবুল ইসলাম। তিনি এবার ভোটের ময়দানে নেই। বর্তমানে বারুইপুর জেলে বন্দি। তাঁর মুক্তির দাবিতে আদালত চত্বরে ধুলোয় গড়াগড়ি খেয়ে বিক্ষোভ দেখালেন এক তৃণমূল কর্মী। তিনি সোশাল মিডিয়ায় আরাবুলের মুক্তির দাবিতে সরবও হয়েছেন।
লোকসভা ভোটের (West Bengal Lok Sabha Election 2024) প্রাক্কালে আইএসএফ কর্মী খুনের ঘটনায় ৮ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা প্রাপ্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। জামিন পাওয়া তো দূর অস্ত। তাঁকে একের পর এক মামলায় কখনও পুলিশ হেফাজত তো আবার কখনও জেল হেফাজতে রাখা হচ্ছে। তাঁর অনুগামী থেকে সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা কার্যত মুষড়ে পড়েছেন। আরাবুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে ইতিমধ্যেই সোশাল মিডিয়ায় সরব বহু তৃণমূল কর্মী। কেউ ফেসবুক পোষ্ট করে লিখছেন, “আরাবুল ইসলাম নির্দোষ তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।” আবার কেউ ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করছেন, “আরাবুল ইসলামকে মিথ্যা মামলায় জেলে ঢোকানো হয়েছে। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক।”
[আরও পড়ুন: ধর্ষণ করে খুন? গৃহকর্তার বাড়ি থেকে নাবালিকা পরিচারিকার দেহ উদ্ধারে কেতুগ্রামে উত্তেজনা]
এক আরাবুল (Arabul Islam) ঘনিষ্ঠ তৃণমূল নেতা বলেন, “দাদাকে প্রথমে আইএসএফ কর্মী খুনের ঘটনায় উত্তর কাশীপুর থানা গ্রেপ্তার করে। তার পর জিরেনগাছার ঝামেলায় পোলেরহাট থানা দাদাকে পুলিশ হেফাজতে নেয়। এখন শুনছি ভাঙড় থানার একটি পুরনো মামলায় দাদাকে জড়ানো হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ভাঙড় ১ ব্লকের প্রাণগঞ্জ এলাকার তৃণমূল নেতা ফজলে করিমের বাড়িতে কবে, কারা বোমা মেরেছিল সেই মামলায় এখন আরাবুলদাকে গ্রেপ্তার করেছে। এসব চক্রান্ত চলছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও এক আরাবুল ঘনিষ্ঠ তৃণমূল কর্মী বলেন, “এসব চক্রান্ত। আরাবুলদাকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে সরিয়ে দিতে চক্রান্ত চলছে।”
সোশাল মিডিয়াতে প্রতিবাদের পাশাপাশি বারুইপুর আদালত চত্বরে আরাবুল ইসলামের মুক্তির দাবিতে ভাঙড়ের বামনঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য দিলীপ পাত্র ধুলোয় গড়াগড়ি খেয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাঁর দাবি, “দাদাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। দাদার মুক্তির জন্য ঠাকুরের কাছে মানত করেছি। কোর্ট চত্বরে ধুলোয় গড়াগড়ি খেয়েছি।” যদিও এ বিষয়ে ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক সওকত মোল্লা বলেন, “এটা বিচারাধীন বিষয়। মন্তব্য করা ঠিক হবে না।” উল্লেখ্য, গত বিধানসভা নির্বাচনে ভাঙড় বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয় আইএসএফ। সুতরাং একদা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি ভাঙড় পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া তৃণমূল নেতৃত্ব। ভাঙড় ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় আরাবুল ইসলামের প্রভাব যথেষ্ট। তাঁর এক ডাকে কয়েক হাজার তৃণমূল কর্মী মিটিং-মিছিলে উপস্থিত হয়ে যেতেন। কিন্তু এই ভোটের ময়দানে নেই আরাবুল। সুতরাং কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উৎসাহ কিছুটা কম। আরাবুলের অনুপস্থিতি যে একটা ফ্যাক্টর তা মানছেন ভাঙড়ের স্থানীয় নেতৃত্বও।