ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: কার ঘাড়ে পড়বে কোপ? লোকসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর থেকেই আশঙ্কাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল তৃণমূলের অন্দরে৷ আর সেই শঙ্কাকে সত্যি করে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে দলীয় সংগঠনে দায়িত্বে একাধিক রদবদল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ খারাপ ফলাফল নিয়ে দলনেত্রী প্রশ্ন করলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং বীরভূম জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে৷ দায়িত্ব কমালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের৷
[ আরও পড়ুন: ২৫ বছর পর সুড়ঙ্গে মেট্রোর ট্রায়াল রান, সেক্টর ফাইভ থেকে যাত্রা শুরু জুনেই! ]
যে সমস্ত জেলায় খারাপ ফল হয়েছে, খুব স্বাভাবিকভাবেই কোপ পড়েছে সেই জেলার স্থানীয় নেতৃত্ব এবং পর্যবেক্ষকদের উপরে। জানা গিয়েছে, শুভেন্দু অধিকারীকে সরিয়ে মালদহের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে ও গোলাম রাব্বানিকে। কমানো হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দায়িত্বও৷তাঁর বদলে নদিয়ার পর্যবেক্ষক করা হয়েছে মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ অন্যদিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই এরাজ্যে আরএসএস-সহ অন্যান্য গেরুয়াপন্থী সংগঠনের প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে৷ লোকসভা ভোটে বিজেপির অভূতপূর্ব ফলাফলে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে৷ আরএসএসের বিরুদ্ধে বারবারই সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এমনকী, বৃহস্পতিবার নৈহাটির ধরনা মঞ্চ থেকেও এই সংগঠনের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি৷ ঘোষণা করেন, আরএসএসের মোকাবিলায় ‘জয় হিন্দ বাহিনী’ এবং মহিলাদের সংগঠন ‘বঙ্গজননী’ তৈরি করবে তৃণমূল৷ কোর কমিটির বৈঠকে সেই লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ ‘জয় হিন্দ’ বাহিনীর চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন ব্রাত্য বসুকে। ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ইন্দ্রনীল সেন৷ সেই সঙ্গে সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ অন্যদিকে, ‘বঙ্গজননী’ সংগঠনের চেয়ারম্যান করেন কাকলী ঘোষ দস্তিদারকে৷
এছাড়া আদিবাসী উন্নয়ন কমিটির মাথায় বসানো হয়েছে ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন সাংসদ উমা সোরেনকে৷ হাজি নুরুলকে সরিয়ে সংখ্যালঘু সেলের দায়িত্বে আনা হয়েছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরিকে৷ সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেয়েছেন দার্জিলিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস৷ বীরভূমের দুটি আসনে তৃণমূল জিতলেও, সেখানে গোপনে ভিত মজবুত করেছে আরএসএস এবং বিজেপি, লোকসভার ফলেই স্পষ্ট হয়েছে সেই ইঙ্গিত৷ এমনকী, নিজের ওয়ার্ডেই পিছিয়ে ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা ও বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডল। স্বভাবতই অসন্তুষ্ট দলনেত্রী তাঁর প্রিয়পাত্র ‘কেষ্ট’কেও প্রশ্ন করতে ছাড়েননি।বৈঠকে প্রত্যেক নেতাই দলনেত্রীকে ভাল কাজের আশ্বাস দিয়েছেন৷ অনুব্রত মণ্ডল বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ফলাফল ভাল হবে৷ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, সংগঠনকে মজবুত করতে আরও ভাল কাজ করতে হবে৷
[ আরও পড়ুন: বিদ্রোহের আঁচ বঙ্গ বিজেপিতে, মণিরুল ইস্যুতে অনুপমের নিশানায় দলের নেতারা ]
লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের জন্য দলের নেতাদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজে আগেই স্বমহিমায় ময়দানে নেমেছিলেন, এবার দলের অন্য নেতাদেরও জনসংযোগে জোর দেওয়ার পরামর্শ মমতার। সূত্রের খবর, সে লক্ষ্যেই আগামী ৭ জুন থেকে জেলাওয়াড়ি বৈঠকে বসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সমস্ত জেলার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি৷ ৭ জুন হুগলি জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক দিয়ে শুরু হবে সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের কাজ৷ নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা ছাড়াও হুগলি লোকসভা কেন্দ্রটি হাতছাড়া হল কেন, সেবিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট নেবেন তিনি৷ এছাড়া, এবার থেকে কোর কমিটির সদস্যদের প্রত্যেকদিন একজন করে তৃণমূল ভবনে বসার নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী৷ তৈরি হয়েছে রোস্টার৷
The post খারাপ ফল নিয়ে অরূপ-অনুব্রতকে প্রশ্ন মমতার, দায়িত্ব কমল পার্থর appeared first on Sangbad Pratidin.