shono
Advertisement

চা বাগিচার বুক চিরে ইতিহাসের কাছাকাছি, ঘুরে আসুন গুপ্তেশ্বর মন্দির

মন্দিরে শিবের অবস্থান জলের নিচে৷ The post চা বাগিচার বুক চিরে ইতিহাসের কাছাকাছি, ঘুরে আসুন গুপ্তেশ্বর মন্দির appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:43 PM Mar 29, 2019Updated: 12:26 PM Jul 19, 2019

অরণ্য-পাহাড় আর সিঙ্গরির শিব। অসমের পথে সবুজ চা বাগিচার মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে যাওয়া রাস্তা পেরিয়ে বিশাল তোরণদ্বার। যেখানে গুহায় জলের মধ্যে ডুবে রয়েছে গুপ্তেশ্বর শিব। ভ্রমণ আড্ডায় অমর নন্দী৷ 

Advertisement

অসমের ৫১ নং জাতীয় সড়কের উপর ছোট্ট জনপদ ঢেকিয়াজুলি। শহরের কিছু আগেই সবুজ মখমলের মতো চা বাগিচার মাঝখান দিয়ে বাঁধানো রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে সিঙ্গরির দিকে। প্রবেশ পথেই বিশাল তোরণদ্বার। গাড়ি নিয়ে ঢেকিয়াজুলি টি-এস্টেটের মঝখান দিয়ে এক স্বপ্ন – সবুজ প্রান্তর পার হতে হতে পথে দেখা হবে বেলাসিরি নদীর এক শাখানদীর সঙ্গে। একে একে পার হবে সিরাজুলি টি-এস্টেট, দু’পাশে সবুজ ধানের খেত, অসম রাইফেলস-এর ক্যাম্প। তার মাঝে চিত্রকরের নিখুঁত ছবির মতো বোড়ো উপজাতিদের সাজানো গ্রাম। আর একটু দূরে চোখে পড়বে অনুচ্চ পাহাড় শ্রেণি আর ঘন সবুজ পহাড় শ্রেণি ও অরণ্য। বনপথে যেতে যেতে ‘পথ’ যেন কোথায় হঠাৎ হারিয়ে যায়। তখনই বুঝে নেবেন আপনি ঢুকে পড়েছেন কোর ফরেস্টে।

                           আরও পড়ুন :  বাজেটের মধ্যে ওয়েডিং ডেস্টিনেশন খুঁজছেন? নজরে রাখতে পারেন এই জায়গাগুলি]

গুপ্তেশ্বর শিব এখানে সিঙ্গরি গুহার মধ্যে জলে ডুবে আছেন। একটু দূর দিয়ে বইছে ব্রহ্মপুত্র। গভীর জঙ্গলের মাঝে পাহড়ের কোলে, এই গুপ্তেশ্বর শিবের অধিষ্ঠান। তেজপুর ডিএফও-র অধীনে সিঙ্গরির ৪৮৫ হেক্টর সেগুন, গামারি, বনটুন আর শালের অরণ্যে বার্কিং ডিয়ার, লাজুকি হনুমান, বন কুকুরা (মুরগি), দারিক (সাদা মুরগি) আর নানা পাখির দেখা মেলে।

মন্দিরের ইতিহাস
আর্কিওলজিক্যাল সার্ভের মতে সপ্তম শতকে তৈরি হয় এই গুপ্তেশ্বর শিবের মন্দিরটি। প্রাচীন এই মন্দিরটির উল্লেখ অছে মহাভারতে। শিবের উপাসক বানাসুরের কন্যা ঊষার প্রেমে আসক্ত শ্রীকৃষ্ণ পৌত্র অনিরুদ্ধ। বানরাজ এই সম্পর্কের তীব্র বিরোধী। তাই তাঁর রাজ্য শোণিতপুরে আটকে রাখলেন অনিরুদ্ধকে। অনিরুদ্ধকে কারামুক্ত করতে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকা থেকে এসে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন শোণিতপুরে। কিন্তু অন্যদিকে প্রতিপক্ষ শ্রীকৃষ্ণ হওয়ায় শিব তাঁর একান্ত ভক্ত বানাসুরকে সরাসরি এই যুদ্ধে মদত দিতে পারলেন না। দেবাদিদেব মহাদেব অর্থাৎ শিব তখন সিঙ্গরির কাছে পাহাড়ের পাদদেশে এই গুহার আড়াল থেকে কৌশলে বানাসুরের হয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।

                              আরও পড়ুন :  নির্জন সমুদ্রতট ও নৈসর্গিক দৃশ্যপট উপভোগ করতে গন্তব্য হোক দারচিনি দ্বীপ]

 

গুপ্ত অবস্থায় শিব ছিলেন বলে, পাহাড়-গুহায় এই শিবমন্দির গুপ্তেশ্বর শিবের মন্দির নামেই পরিচিত। শুধু মহাভারতে নয়। রামায়ণেও উল্লেখ আছে এই স্থানের। অযোধ্যার কাছেই ছিল এক ছোট্ট রাজ্য লোম্পদ। রামায়ণে বর্ণিত আছে, এই রাজ্যটি দীর্ঘদিন খরা আর দুর্ভিক্ষ পীড়িত ছিল। কিন্তু যখন ঋষি ‘শৃঙ্গ’ এ রাজ্যে প্রবেশ করলেন, তাঁর আশীর্বাদে রাজে্য নেমে এল বর্ষা, খেতে খেতে ভরে উঠল ফসল। মানুষ খরা আর দুর্ভিক্ষ থেকে মুক্তি পেল দীর্ঘদিন বাদে। এই খবর অতঃপর পৌঁছল অযোধ্যা রাজ দশরথের কাছে। তিনি এই ঋষি শৃঙ্গ’—কে তাঁর রাজ্যে স্বাগত জানালেন। এবং তাঁর দর্শন ও আশীর্বাদ লাভের পরই রাজা দশরথের প্রথম পুত্র রাম ও একে একে লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন এর জন্ম সম্ভব হয়েছিল। সেই ঋষি ‘শৃঙ্গের’ জন্ম, মহাভারতের কাহিনি অনুসারে এই পুণ্যভূমি সিঙ্গরিতে। যেখানে স্বয়ং শিব গুপ্তেশ্বর হিসেবে পূজিত হন।

উৎসবের দিনক্ষণ
এই মন্দিরকে ঘিরে শিবরাত্রিতে হয় সাতদিন ব্যাপী বিশাল উৎসব। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তসমাগম ঘটে এই সময়। বসে বিরাট মেলা। এই উপলক্ষে নামঘরে (চারিদিক খোলা প্রার্থনা ঘর) অঙ্কিও ভওনা নামে অসমের প্রচলিত লোকনাট্য পরিবেশিত হয়। এই কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে সারারাত ধরে পুণ্যার্থীরা অনেকগুলি দলে বিভক্ত হয়ে নানা আধ্যাত্মিক গান করেন পালা করে।

সারা দেশের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ ভুটান ও নেপালের ভক্তসমাগম ঘটে। গুপ্তেশ্বর শিবের মন্দিরে এর পরের উৎসব হল নববর্ষের উৎসব। এই দিনও ভক্তেরা নতুন বছরের আশীর্বাদ নিতে আসেন। শ্রাবণ পুর্ণিমার দিন গেরুয়া বসনে সেজে হাজার হাজার পুণ্যার্থী বাঁকে করে জল নিয়ে শিবলিঙ্গে ঢালেন পুণ্যের আশায়। মকর সংক্রান্তি আর অশোকাষ্টমীতেও ভক্তসমাগম ঘটে সিঙ্গরির গুপ্তেশ্বর শিবমন্দিরে।

                            আরও পড়ুন :  ঘরের কাছেই স্বর্গ, সপ্তাহান্তে প্রকৃতির কোলে সময় কাটান এই পাঁচ জায়গায়]

 

বিশ্বকর্মা
গুপ্তেশ্বর শিবমন্দির থেকে ফেরার পথে সিঙ্গরি চা বাগানের উত্তরে দু’কিমি দূরে দেখে নেওয়া যায় বিশ্বকর্মা থানটি। এটি বর্তমানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার দ্বারা সংরক্ষিত। একটি সুন্দর উদ্যানে বিশ্বকর্মা মন্দিরের অসাধারণ স্থাপত্য কীর্তির ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষিত। পুরাণ অনুযায়ী স্বয়ং বিশ্বকর্মা নিজেই এই মন্দিরটি তৈরি করেন। এখানকার স্থাপতে্যর সঙ্গে প্রাচীন ওড়িশার স্থাপত্য কীর্তি বিশেষ করে পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের স্থাপত্যের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এই বিশ্বকর্মা থানে নিয়মিত পূজা হয় না। সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বকর্মা পূজার দিন বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এক অহমরাজার রাজত্বে এই মন্দির চত্বরে একটি বিশাল পুষ্করিণী খোঁড়া হয়। একদিকে চা বাগান অন্য প্রান্তে সিঙ্গরি পাহাড় ঘেরা নিসর্গ এর মাঝে চারিদিকে শাল গাছে ছাওয়া প্রাচীরঘেরা চল্লিশ একরেরও বেশি জায়গা নিয়ে ‘বিশ্বকর্মা থানটি’ প্রকৃতি ইতিহাস পুরাণের এক সুন্দর সহাবস্থান। যার টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে।

কীভাবে যাবেন

ট্রেন বা প্লেনে গুয়াহাটি পৌঁছে সেখান থেকে তেজপুরগামী রাস্তায় ১৩৫ কিমি রাস্তা পার হয়ে সড়ক পথে পৌঁছানো যায় গুপ্তেশ্বর শিবের মন্দিরে।

কোথায় থাকবেন
ডিএফও তেজপুর, জেলা–শোণিতপুর (০৩৭১২—২২০০৯৩) থেকে বন বাংলো বুক করা যায়। তাছাড়া ৩৫ কিমি দূরে তেজপুরে অনেক প্রাইভেট হোটেল পাওয়া যাবে৷

The post চা বাগিচার বুক চিরে ইতিহাসের কাছাকাছি, ঘুরে আসুন গুপ্তেশ্বর মন্দির appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement