ধীমান রায়, কাটোয়া: মাকে বিদায় জানানোর সময়, শ্মশানেই তাঁর শেষ ইচ্ছাপূরণ করলেন মেয়ে। ভেজা চোখে প্রেমিকের গলায় মালা পরালেন তরুণী। শোকগ্রস্ত অবস্থায় প্রেমিকও রাঙিয়ে দিলেন প্রেমিকার সিঁথি।
পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা রটন্তিকালী মন্দিরের পাশের শ্মশানে দাহ করার জন্য আনা হয় নীলিমা মুখোপাধ্যায়কে। সেখানে মৃতদেহ পাশে রেখেই বিয়ে করেন তাঁর একমাত্র সন্তান পল্লবী। বিয়ের সাক্ষী থাকলেন কয়েকজন প্রতিবেশী। তাঁরাই বিয়ের সেই দৃশ্য মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করে রাখেন। পরে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
গুসকরা শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লীর বাসিন্দা ভবানী মুখোপাধ্যায় পেশায় ব্যবসায়ী। ভবানীবাবুর স্ত্রী নীলিমাদেবী দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান পল্লবী অঙ্কে অনার্স নিয়ে স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়ার পর কলকাতায় (Kolkata) একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করছেন।
জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন নীলিমাদেবী। তার জেরেই তিনি আত্মঘাতী হন। গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। সবকাজ শেষ করে দেহ নিয়ে আসতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। বুধবার রাতে নিলীমাদেবীর দেহ গুসকরা শহরে রটন্তিকালী শ্মশানে দাহ করা হয়। নীলিমাদেবীর দেহ চিতায় তোলার আগেই পল্লবী ও তাঁর প্রেমিক জয়দীপ অধিকারী একে অপরের গলায় মালা পড়িয়ে দেন। এর পর জয়দীপ তাঁর প্রেমিকা পল্লবীর সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়ে দেন।
[আরও পড়ুন: বলিহারি রিল বানানোর নেশা! ১০০ ফুটের বহুতল থেকে শূন্যে ঝুলে রইলেন তরুণী]
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পল্লবীর সঙ্গে ভাতারের বেরোয়া গ্রামের বাসিন্দা পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী জয়দীপের কয়েকবছর ধরেই সম্পর্ক ছিল। তাঁরা দুজনে বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেই রেখেছিলেন। দুই পরিবার থেকে তাঁদের সম্পর্ক মেনেও নেওয়া হয়েছিল। তবে দুজনেই নিজেদের কেরিয়ারের স্বার্থে আর এক-দুই বছর অপেক্ষা করার, সিদ্ধান্ত নেন।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন নীলিমাদেবীর খুব ইচ্ছা ছিল জয়দীপের সঙ্গে তাঁর মেয়ের বিয়ে দেখে যাওয়ার। এরই মধ্যে ঘটে যায় অঘটন। যা আশাই করতে পারেননি মেয়ে পল্লবী। তাই মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্যই মৃতদেহ পাশে রেখেই শ্মশানে বিয়ে করে নেন তিনি। এদিন কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। জয়দীপ বলেন, "আমি এই বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।" জয়দীপের বাবা মলয় অধিকারী বলেন, "খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা এমনিতেই ছেলের বিয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। তবে যেভাবেই হোক বিয়েটা হয়ে গেল। আমরাও ওই বিয়ে মেনে নিয়েছি।"