স্টাফ রিপোর্টার: সোমবার গভর্নিং বডির মিটিংয়ের পর যা পরিস্থিতি দাঁড়াল, তাতে উয়াড়ি এবং টালিগঞ্জ আগ্রগামী নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য চার সদস্যর কমিটি তৈরি হলেও আর্থিক জরিমানা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলা হয়েছে। যা রূপায়িত হবে এই চার সদস্যদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে। এদিন গভর্নিং বডির মিটিংয়ের পর ময়দানে হালকা কথা উঠেছে, তাহলে গড়াপেটার প্রতিবাদ করে হাস্যকর শাস্তির অর্থ কী?
ফেডারেশন থেকে যে মেল আইএফএ-কে পাঠানো হয়েছে, তাতে কোনও ফুটবলার কিংবা কোনও কর্তার নাম না দিয়ে পরিষ্কার জানানো রয়েছে, টালিগঞ্জ আগ্রগামী এবং উয়াড়ি গড়াপেটার সঙ্গে জড়িত। ফেডারেশনের কাছে প্রমাণ রয়েছে। ফেডারেশনের থেকে এই মেল পাওয়ার পরেই সরাসরি দুই ক্লাবকে শাস্তি দিতে পারত আইএফএ। সেটা না করে ফের পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পুরো বিষয়টি। এটা নিয়েই মূল প্রশ্ন। ফেডারেশন যদি জানিয়েই দেয়, দুটি ক্লাব গড়াপেটায় জড়িত, সেই ভিত্তিতেই শাস্তি দেওয়া যায়। পুলিশের কাছে পুরো বিষয়টি পাঠিয়ে দেওয়ার অর্থ, আইএফএ নিশ্চিত নয়, ফেডারেশনের রিপোর্টের ব্যাপারে। অথচ পুলিশের সিদ্ধান্ত আসার আগেই শাস্তি দিয়ে রাখা হয়েছে। এখন এই ইস্যুতে পুরো ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাচ্ছেন আইফএ কর্তারা। পুলিশের রিপোর্ট আসেনি। অথচ সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, কীভাবে শাস্তি তুলবেন। সঙ্গে কিছু উপার্জনও হয়ে যাবে।
[আরও পড়ুন: এক্সিট পোল মানছেন না মমতা, তৃণমূলের অন্দরের রিপোর্ট কী?]
ঠিক ছিল সোমবারই আইএফএ গভর্নিং বডির সদস্যরা গত মরশুমে গড়পেটা কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়া কলকাতার দুই ক্লাব টালিগঞ্জ অগ্রগামী ও উয়ারি ক্লাবের অনির্দিষ্ট কালের জন্য নির্বাসনের বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সোমবারও গভর্নিং বডির বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না অনির্বাণ দত্তরা। পরিবর্তে গভর্নিং বডি চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে তাদের হাতে ছেড়ে দিলেন সিদ্ধান্তের ভার। কমিটিকে চার সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে। চার সদস্য হলেন আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, সচিব অনির্বাণ দত্ত ও কোষাধ্যক্ষ দেবাশিস সরকার। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না তিন প্রধানের কোনও প্রতিনিধি।
সোমবার সভায় উয়াড়ি আর টালিগঞ্জের নির্বাসনের বিষয়টি নিয়েই বেশি সময় খরচ করেন গভর্নিং বডির সদস্যরা। ফেডারেশনের ইন্টিগ্রিটি অফিসারের পাঠানো স্পোর্টস র্যাডারের রিপোর্টের বিশেষ বিশেষ অংশ তুলে ধরেন আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত। সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, স্পোর্টস র্যাডারের পাঠানো রিপোর্টে স্পষ্ট করে উল্লেখ আছে কয়েকটি ম্যাচে গড়াপেটা হয়েছে। গড়াপেটায় জড়িত কয়েকজনের নামও উল্লেখ রয়েছে এই রিপোর্টে। উপস্থিত সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন এদিনই সিদ্ধান্ত হোক বিষয়টির। গভর্নিং বডির কয়েকজন সদস্য বলতে থাকেন, রিপোর্টে যখন অপারাধীর কথা বলাই হয়েছে, তাহলে ক্লাবকে কেন নির্বাসনে পড়তে হচ্ছে। সভায় দুই অভিযুক্ত ক্লাবেরই কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাননি সুব্রত দত্তরা। তিনি বলেন, “দুই ক্লাবই শাস্তি মুকুবের আবেদন করার পাশাপাশি বলেছিল আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চায়। ওদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। চার সদস্যের কমিটির সিদ্ধান্তই বিষয়টি এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে।”
আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত বলেন, “কমিটি গঠন হয়েছে। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে বিষয়টির। আমি চাই অপরাধীরা অবশ্যই শাস্তি পাক।” গভর্নিং বডির বৈঠক শুরুর আগে আইএফএর শীর্ষকর্তারা দীর্ঘ বৈঠক করেন। ছিলেন সচিব অনির্বাণ দত্ত, চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সহ-সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, সৌরভ পাল সহ শীর্ষ কর্তারা। সেখানেই স্বরূপ বিশ্বাস প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যদি স্পোর্টস র্যডারের রিপোর্ট হাতে এসে থাকে তাহলে চরম শাস্তি দেওয়া হোক দুই ক্লাব সহ যারা জড়িত সবাইকে। নয়তো এই দুই ক্লাবের শাস্তি মুকুবের আবেদনে সাড়াই দেওয়া উচিত নয়। যদি শাস্তি মুকুবের হলে সবার শাস্তিই মুকুবের পথে হাঁটা উচিত।” এই নিয়ে কর্তাদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক হয়। তারপর শুরু হয় গভর্নিং বডির বৈঠক। সুব্রত দত্ত আরও জানিয়েছেন, আইএফএ সংবিধানের ৩৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে যারা অভিযুক্ত সব ব্যক্তিদের কঠিন শাস্তির কথা বলা থাকলেও ক্লাবের শাস্তির কথা উল্লেখ নেই।