সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া:দীর্ঘ ছয় দশক ধরে নকশাল কার্যকলাপে যুক্ত থাকার পর অবশেষে পুলিশের জালে সিপিআই (মাওবাদী) শীর্ষ নেতা প্রশান্ত বোস ওরফে কিষানদা। শুক্রবার সাতসকালে সিপিআই (মাওবাদী) পলিটব্যুরো সদস্য ও তাঁর স্ত্রী শিলা মারান্ডিকে ‘গ্রেপ্তার’ করেছে পুলিশ। তাঁদের সঙ্গে দুই যুবক ও এক বধূকে আটক করা হয়েছে। ওই বধূর কোলে একটি ছোট্ট শিশু রয়েছে বলে খবর। তবে এখনও সরকারিভাবে ঝাড়খন্ড পুলিশের তরফে এই ‘গ্রেপ্তার’ বা ‘আটকের’ কথা স্বীকার করা হয়নি।
কিষানজির মৃত্যুর পর মাওবাদী দমনে ‘কিষানদা’র ‘গ্রেপ্তার’ দেশের কাছে বড় সাফল্য বলেই মনে করছে পুলিশ। সিপিআই (মাওবাদী)-র এই তাত্ত্বিক নেতা ও তাঁর স্ত্রী এদিন সাদা চার চাকা বিলাসবহুল গাড়ি ভাড়া করে ঠিক কোথায় যাচ্ছিলেন তা জানতে এখন মরিয়া পুলিশ। তবে এই বিষয়ে কিছুই বলতে চাইছে না পুলিশl সরাইকেলা-খরসোওয়া জেলার পুলিশ সুপার আনন্দ প্রকাশ বলেন, “এ বিষয়ে এখনই আমি কিছু বলতে পারব নাl”
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার যাদবপুরের বিজয়গড় কলোনির বাসিন্দা কিষানদা সিপিআই (মাওবাদী) গঠনের পর থেকেই কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাই এই নেতাকে নিয়ে মাথাব্যথা ছিল দেশের মাওবাদী উপদ্রুত রাজ্যগুলির। তাই মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়ে কিষানদার মাথার দাম রেখে ছিল ৫০ লক্ষ টাকা। ঝাড়খন্ডে তাঁর মাথার দাম এক কোটি টাকা। ১৯৭০ সাল থেকে কিষানদা মূলত ঝাড়খন্ডেই ছিলেন। ২০০৪ সালের পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ইস্টার্ন রিজিয়ন সম্পাদক পদে সংগঠনের কাজ সামলান। বলা যায়. ঝাড়খণ্ডের সারান্ডার জঙ্গলে বসেই দেশের মাওবাদী কার্যকলাপের পরিচালনা করতেনl তাই তাঁকে সিপিআই (মাওবাদী) থিঙ্ক ট্যাংক বলা হত। তবে মাঝে মধ্যে তিনি ছত্তিশগড়ও যেতেন।
ঝাড়খন্ড পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সাতসকালে গিদ্দিবেড়া টোল ট্যাক্স-র কাছে এই শীর্ষ মাও দম্পতি ঝাড়খন্ড পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। চার চাকার ওই বিলাসবহুল গাড়িতে চালকের পাশে বসেছিলেন এক যুবক। আর সেই গাড়ির মাঝের সিটে ডানদিকে ঠিক চালকের পেছনে ছিলেন প্রায় ৭৫ বছর বয়সী ‘কিষানদা’। পরনে নীল রঙের জামা, সবুজ সোয়েটার, তার ওপরে কালচে জ্যাকেট, সেই সঙ্গে মুখে ডিসপোজাল মাস্ক। মাথায় কালো রঙের মাঙ্কি ক্যাপ। পাশেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী ৬৫ বছর বয়সি শিলা মারান্ডি। গাড়ির বাঁ দিকে তাঁর পরনে ছিল ফুলহাতা হলুদ সাদা সোয়েটার। সেই সোয়েটার ওপরেই একটি হলদে শাল দিয়ে জড়িয়েছিলেন নিজেকে। মাথায় ছিল খয়েরি রঙের টুপি। মাও দম্পতির এভাবে বিলাসবহুল গাড়ি করে পুরুলিয়ার দিকে আসার খবর কারও কাছেই থাকবে না বলেই মনে করেছিলেন তাঁরা। ঝাড়খন্ড পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শীর্ষ নেতা ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোওয়ার এক বাসিন্দার গাড়ি ভাড়া করেছিলেন।
[আরও পড়ুন: ‘গত ৭ বছরে দেশে ১৯ গুণ বেড়েছে ডিজিটাল লেনদেন’, জানালেন প্রধানমন্ত্রী]
একা প্রশান্ত বসু নন, তাঁর স্ত্রী শিলা মারান্ডিও নকশাল নেত্রী ছিলেন। একমাত্র মহিলা হিসেবে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। একাধিক সিদ্ধান্ত নিতেন তিনিই। তবে এই প্রথমবার নয়, ইতিপূর্বে ২০০৬ সালেও গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে অবশ্য রাউরকেল্লা সংশোধনাগার থেকে ছাড়াও পেয়ে যান।
৫ বছর আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের মাওবাদীদের সঙ্গে যুক্ত হল শিলাদেবী। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার পাশাপাশি সারা দেশের মহিলা মাও সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতেন। দলের মধ্যে একাধিক নামে পরিচিত ছিলেন ‘কিষানদা’র স্ত্রী। কোথাও তিনি পরিচিত ছিলেন হেমা নামে। কোথাও আবার পরিচিত ছিলেন বুধানি হিসেবে। কেউ তাকে চিনতেন আশা নামে। বারবার নাম বদলেও শেষরক্ষা হল না।