সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভোরের দিকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারপাশ। কিন্তু তার মাঝেও যে প্রকৃতি দেখাচ্ছে তার অন্য রূপ। পৌষেই উঁকি দিচ্ছে রাঙা পলাশ! কোথাও কুঁড়ি, আবার কোথাও ফুটছে ফুল। ভরা শীতের মরশুমে শীতের খামখেয়ালিপনাতেই পুরুলিয়ার (Purulia) অযোধ্যা পাহাড়তলি থেকে শিল্পাঞ্চলেও লাল পলাশের আভা। ডিসেম্বরের শেষ লগ্নে লাল পলাশের কুঁড়ি বনমহল পুরুলিয়া শেষ কবে দেখেছিল মনে করতে পারছেন না পরিবেশবিদ থেকে প্রকৃতিপ্রেমী, বনবিভাগ থেকে আবহাওয়া দপ্তর ।
আসলে গত মঙ্গলবার এই জেলার সর্বনিম্ন ১৪.২ ডিগ্রিতে উঠে গিয়েছিল। বড়দিন ছিল কার্যত উষ্ণতম। ওই দিন জেলার সর্বনিম্ন ছিল ১০.৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। শীতের (Winter) এমন ওঠা নামাতেই পলাশের আগমনী। বলছেন অবসরপ্রাপ্ত বনাধিকারিক তথা পরিবেশবিদ সমীর মজুমদার। তাঁর কথায়, “আবহাওয়া রদবদলের কারণেই এমনটা হচ্ছে। তবে ডিসেম্বরের শেষে লাল পলাশের আভা সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি। পলাশ ফুল মূলত হালকা শীত, একটু উষ্ণ ভাব এই অবস্থায় ফোটে।
এখন প্রায় সেই অবস্থাতেই রয়েছে পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলার আবহাওয়া ।”
বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার সর্বনিম্ন এক লাফে প্রায় ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড নিচে নেমে যায়। এদিন পুরুলিয়ার সর্বনিম্ন ছিল ৬.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। যা এই মরশুমের শীতলতম দিন। আবহাওয়ার এমন হেরফেরের কারণে পত্রবিহীন ডালে রাঙা পলাশের আগুন! ফাগুন যদিও অনেক দেরি। এখনও দূরে ভালোবাসার দিনও। তবুও যেন ভরা শীতে এই পলাশ যেন ভালবাসার আগুন ঝরাচ্ছে ফাগুনের আগেই। তাহলে কি ফাগুনের আগেই মন উড়ু উড়ু পুরুলিয়ার? নতুন বছরের আগে “পিন্দারে পলাশের বন, পালাব পালাব মন”?
[আরও পড়ুন: ভিন রাজ্য থেকেও দেওয়া যাবে ভোট, নয়া ইভিএম যন্ত্র আনার প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনের]
ফি বছরই এই জেলায় শীত আগে অনুভূত হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লক্ষ্মী পুজোর সময় থেকেই শিরশিরানি ভাব দেখা যায়। এবার নভেম্বর মাসেই পুরুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আটের ঘরে নেমে গিয়েছিল। এমন ছবি দেখা গিয়েছিল ২০১৭ সালের ২৪ শে নভেম্বর । ওই দিন পুরুলিয়ার সর্বনিম্ন
ছিলো ৯.৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড । ১৯৯৫ সালে ২৭ শে নভেম্বর ছিলো ৯.৮ ডিগ্রি। শীতের এমন ওঠানামা আবহাওয়া দপ্তরও সাম্প্রতিককালে দেখেনি। এবার নভেম্বরে শীতের হাড়কাঁপুনি থাকলেও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। আর সেই কারণেই পুরুলিয়ার পলাশ জঙ্গলে লাল আভায় ‘পালাবো পালাবো মন’।