সম্যক খান: গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুর (Pashchim Msdinipur) জেলার ১৫টি আসনের মধ্যে ১৪টিই ছিল তৃণমূলের দখলে। বিজেপির দিলীপ ঘোষ একমাত্র জিতেছিলেন খড়গপুর সদর কেন্দ্র থেকে। সেই বিজেপিই গত লোকসভা নির্বাচনে ১৫টি আসনের মধ্যে সাতটি আসনে লিড দেয়। যদিও পরে খড়গপুর সদরের উপ-নির্বাচনে জয়ী হয় তৃণমূল (TMC)। ‘স্বাস্থ্যসাথী’ থেকে শুরু করে ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের সাফল্যে অনেকটাই জমি শক্ত হয়েছে তৃণমূল শিবিরের। জমি ছাড়তে নারাজ বিজেপিও। জেলার ১৫ আসনে কে কোথায় দাঁড়িয়ে দেখে নিন–
মেদিনীপুর: এখানে দু’বারের বিধায়ক তৃণমূলের মৃগেন মাইতি বর্তমানে প্রয়াত। তাঁর জায়গায় এবার তৃণমূলের তারকাপ্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়া। তাঁর বিপরীতে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী খোদ জেলা সভাপতি সমিত দাশ। তারকা মুখ এবার তৃণমূলের পক্ষে কতটা কাজে লাগে সেদিকেই নজর সকলের।
খড়গপুর (গ্রামীণ): জেলায় যতগুলি আসন আছে তার মধ্যে তৃণমূলের পক্ষে অন্যতম নিশ্চিত আসন এটি। গতবারের বিধায়ক দীনেন রায় এবারও তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। অপরদিকে বিজেপিও এই আসনে প্রার্থী করেছে তাদের সাংগঠনিক নেতা তপন ভুঁইয়াকে।
[আরও পড়ুন: উলটপুরাণ! মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনায় পুজো দিলেন বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা]
খড়গপুর সদর: জেলার মধ্যে অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র এটি। এই আসনে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জিতেছিলেন। পরে তিনি সাংসদ হওয়ায় উপ-নির্বাচনে বিজেপির কাছ থেকে আসনটি ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। বিধায়ক প্রদীপ সরকার এবারও তৃণমূলের প্রার্থী। অপরদিকে বিজেপি প্রার্থী করেছে অভিনেতা হিরণকে।
নারায়ণগড়: গত বিধানসভা নির্বাচনে এখানে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রদ্যোৎ ঘোষ। কিন্তু এবার তিনি টিকিটই পাননি। নারায়ণগড়ে এবার তৃণমূল প্রার্থী করা হয়েছে ভূমিপুত্র সূর্য অট্টকে। বিজেপি রমাপ্রসাদ গিরিকে প্রার্থী করায় কোন্দল তুঙ্গে। আবার বামফ্রন্টের হয়ে সিপিএমের পরিচিত মুখ তাপস সিনহা ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
কেশিয়াড়ি (তফসিলি উপজাতি): গতবারের বিধায়ক পরেশ মুর্মুকে এবার দল টিকিট দেওয়ায় ক্ষোভে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী দলত্যাগ করেছেন। বিজেপির প্রভাব এখানে যথেষ্ট। গত লোকসভা নির্বাচনে এখানে বিজেপির প্রায় ১১ হাজার ভোটে লিড আছে।
দাঁতন: ওড়িশা সীমান্তের এই আসনে গতবারের বিধায়ক বিক্রম প্রধানকে এবারও প্রার্থী করেছে তৃণমূল। দলের মধ্যে এ নিয়ে কিছুটা হলেও অসন্তোষ আছে। এদিকে, কেশিয়াড়ির মতো দাঁতনেও বিজেপির সংগঠন বেশ শক্তিশালী। গত বিধানসভাতেও প্রায় ৭ হাজার ভোটে লিড দিয়েছে বিজেপি।
শালবনি: নানা জল্পনা থাকলেও ফের জঙ্গলমহলের এই আসনটিতে তৃণমূলের টিকিট পেয়েছেন বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোই। একসময় সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি ছিল এই শালবনি। এবার এখানে সিপিএমের বিতর্কিত নেতা সুশান্ত ঘোষ দাঁড়ানোয় এটি অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র হতে চলেছে।
[আরও পড়ুন: দীর্ঘ পথ পেরিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়াই কাল! মর্মান্তিক পরিণতি যুবকের]
গড়বেতা: গতবারের বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীকে এবার টিকিট দেয়নি তৃণমূল। প্রার্থী করা হয়েছে জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহকে। বামফ্রন্ট প্রার্থী হয়েছেন তপন ঘোষ।
সবং: অন্যতম নজরকাড়া কেন্দ্র এটি। বিধায়ক ছিলেন গীতা ভুঁইয়া। এবার সেখানে তৃণমূল প্রার্থী খোদ গীতাদেবীর স্বামী তথা রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইয়া। তাঁর বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন গত ডিসেম্বরে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বিজেপিতে যাওয়া অমূল্য মাইতি। মানস ভুঁইয়া ও অমূল্য মাইতির দ্বৈরথ সর্বজনবিদিত। তবে এগিয়ে হেভিওয়েট মানসবাবুই।
পিংলা: এখানকার বিধায়ক ছিলেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তিনি এবার পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক আসনে প্রার্থী। তাঁর জায়গায় দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতিকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। অপরদিকে, বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য।
ডেবরা: এবার এখানে দুই প্রাক্তন আইপিএসের লড়াই। তৃণমূলের হুমায়ুন কবীর বনাম বিজেপির ভারতী ঘোষ। এখানে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল ভাবাচ্ছে হুমায়ুনবাবুকে। ডাকাবুকো ভারতী ঘোষ অনেকটাই ফ্রন্ট ফুটে। গত লোকসভা নির্বাচনেও ঘাটাল কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন তিনি।
কেশপুর (তফসিলি উপজাতি): কথায় আছে রাজ্য যার কেশপুর তার। বামফ্রন্ট আমলে এই আসন থেকে নন্দরানী ডল এক লাখ আট হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতে সারা রাজ্যে রেকর্ড গড়েছিলেন। যা আজও অটুট। পরে তৃণমূলের শিউলি সাহাও জেতেন লক্ষাধিক ভোটে। এবারও তিনি প্রার্থী। পাশাপাশি বিজেপি তলে তলে ভাল সংগঠন গড়তে সমর্থ হয়েছে।
চন্দ্রকোনা (তফশিলি উপজাতি): সিপিএম থেকে তৃণমূলে আসা দু’বারের বিধায়ক ছায়া দোলইকে এবার টিকিট দেয়নি তৃণমূল। টিকিট পেয়েছেন অরূপ ধাড়া। বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন বছর দুয়েক আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা রামজীবনপুর পুরসভার তিনবারের চেয়ারম্যান শিবরাম দাস।
ঘাটাল (তফসিলি উপজাতি): এখানে গত দু’বারের বিধায়ক শংকর দোলুইকে এবারও প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তাঁকে টক্কর দিতে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন শীতল কপাট। গত লোকসভায় এখানে মাত্র তিন হাজার ভোটে এগিয়েছিল তৃণমূল।
দাসপুর: দু’বারের বিধায়ক মমতা ভুঁইয়া এবারও প্রার্থী হয়েছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেও তৃণমূলের এখানে ভাল সংগঠন রয়েছে। বিজেপি প্রার্থী প্রশান্ত বেরাকে নিয়ে দলে অসন্তোষ চরমে। গত লোকসভা ভোটে প্রায় ১০ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকা তৃণমূলের জয় দাসপুরে প্রায় নিশ্চিত।