নবনীতা দাশগুপ্ত: নাম তার ভুটান৷ কথায় বলে ওয়াংচুক রাজার দেশ৷ বিদেশ হলেও ভুটানে পা রাখতে পাসপোর্ট-ভিসার প্রয়োজন পড়ে না৷ তবে, ওই দেশের অনুমতি নেওয়াটা বাধ্যতামূলক৷ জলপাইগুড়ির জয়গাঁতেই রয়েছে ভুটানে ঢোকার প্রবেশপথ৷ এই দেশের শিল্পশৈলীর কথা অজানা নয় কারওই৷ প্রবেশপথের মূল গেটটিও শিল্পনৈপুণ্যে অনবদ্য৷ গেট পেরোলেই ফুন্টসেলিং৷ ভুটান এখান থেকেই শুরু৷ ফুন্টসেলিং-এ রয়েছে ‘পারমিট অফিস’৷ পারমিট অফিসে বৈধ ভোটার কার্ড, প্যানকার্ড দেখিয়ে করতে হবে ফর্ম ফিলআপ৷ ব্যস, সঙ্গে সঙ্গেই মিলবে ভুটান ঘুরে দেখার ছাড়পত্র৷ ফুন্টসেলিং-এর এদিক-ওদিক ঘুরে দেখতে অবশ্য অনুমতি বা ছাড়পত্রের প্রয়োজন পড়ে না৷
ঘন সবুজ মোড়কে মোড়া ভুটান৷ শান্ত, নিরিবিলি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন৷ সে এক অন্য আবেশ৷ অন্য অনুভূতি৷ সহজ কথায় সাজানো-গোছানো একটা দেশ৷ সড়কপথে ভুটানে যেতে হলে ফুন্টসেলিং হয়েই যেতে হয়৷ কারণ ওখানেই মেলে ছাড়পত্র৷
ফুন্টসেলিং মনাস্ট্রি ‘খরজং’ নামে পরিচিত৷ এর আশপাশেই রয়েছে ‘কুমির প্রকল্প’৷ কুমির আর ঘড়িয়ালদের এখানে রামরাজত্ব৷
ভুটানের রাজধানী থিম্পু৷ চকচকে ঝকঝকে একটা শহর৷ ওয়াং-চু উপত্যকার গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে রাজধানীটি৷ শহরের গা ঘেঁষে বয়ে চলেছে চু নদী৷ ট্যাঙ্গো গুম্ফা, মেমোরিয়াল চার্টেন, মিনি জু– থিম্পুর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্পট৷ শহরের বিভিন্ন রাস্তা থেকেই নজরে পড়ে পাহাড়ের উপর বিশালাকার শখ্যমুনি বুদ্ধের মূর্তি৷
ব্রোঞ্জের উপর সোনার জল দিয়ে তৈরি হয়েছে মূর্তিটি৷ উচ্চতা ১৬৯ ফুট৷
১৯৭৪ সাল নাগাদ তৈরি হয়েছে মেমোরিয়াল চার্টেন৷ ভুটানের রাজা জিগমে দরজি ওয়াং-চু’র স্মৃতির উদ্দেশে তৈরি হয় এই মেমোরিয়াল চার্টেন৷ অন্যান্য গুম্ফাগুলিতে দেখা যায় সোনালি রঙের বুদ্ধমূর্তি৷ গুম্ফার চারপাশের ছবি তোলা গেলেও উপাসনা গৃহের, নৈব নৈব চ৷
মিনি জু৷ মিনি-ই বটে৷ কয়েকটা সম্বর আর হরিণ ছাড়া কিছুই জোটে না কপালে৷
দো-চুলা পাস পড়বে থিম্পু থেকে পুনাখা যাওয়ার পথে৷ শীতল ঝোড়ো হাওয়া উড়িয়ে দেবে আপনাকে৷ আকাশ ভাল থাকলে দো চুলা পাস থেকে পাহাড়ের সৌন্দর্য যেন হাতের মুঠোয় চলে আসে৷
পুনাখা থিম্পু থেকে ঠিক ৭৭ কিলোমিটার দূরে৷ ফো চু (বাবা) ও মো চু (মা) নদীর পাশে লক্ষ্মী মেয়ের মতো সেজেগুজে বসে আছে পুনাখা৷ বর্তমানে ভুটানের শীতকালীন রাজধানী এই পুনাখা৷ ওয়াং ডু উপত্যকার উপরে পুনাখা জং৷ অতিকায় এই জং জুড়ে রয়েছে রাজকীয় স্থাপত্যশৈলী৷ জং-এর চারপাশে জ্যাকারান্ডা গাছ৷ মার্চ-এপ্রিলে এই গাছ ফুলে ভরে থাকে৷
পারো হল ভুটানের অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা৷ কেন? পারো ভ্যালির উপর ছোট্ট একটা গ্রামে ধাপে ধাপে ধান চাষ হয়৷ অবিরাম বয়ে চলেছে ধবধবে সাদা নদী আর মাথায় রয়েছে পরিষ্কার নীল আকাশ– ঠিক যেন লাল-নীল-সবুজের মেলা বসেছে মতো রঙিন এই পারো৷ পারো থেকে সাইট সিইং-এ বেশ কয়েকটি গুম্ফা ছাড়াও রয়েছে পারো মিউজিয়াম৷ পারো জং, টাইগার নেস্ট দেখবার মতো জায়গা৷
থিম্ফু, পারো, দো-চুলা পাস থেকে দেখা বরফে ঢাকা শৃঙ্গের সঙ্গে মোলাকাত করতে চাইলে যেতে হবে চেলিলা পাস৷
পড়ে রইল বুমথাং৷ থিম্পু থেকে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার দূরে বুমথাং৷ ভুটানি ভাষায় ‘বুম’ শব্দটির অর্থ সুন্দরী মেয়ে৷ আর ‘থাং’ হল উপত্যকা৷ বলা বাহুল্য, বুমথাং-এর সৌন্দর্যকে সুন্দরী তন্বীর সঙ্গে তুলনা করা হয়৷
কীভাবে যাবেন
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে যেতে হবে৷ স্পট দেখার জন্যও ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করাই ভাল৷ ফুন্টসেলিং থেকে অহরহ গাড়ি পাওয়া যায়৷ টাটা সুমোতে আটজনের বেশি নেওয়া হয় না৷ ভাড়া ১০০০-১৫০০-র মধ্যে৷
কোথায় থাকবেন
হোটেল পারো, হোটেল তাসিলিং, হোটেল ডেসটিনি, কিংগালিং হোটেল অ্যান্ড স্পা, ফুয়েংসাম-সহ আরও অনেক থাকার জায়গা রয়েছে ভুটান জুড়ে৷ বুক করে যাওয়াই ভাল৷ সাহায্য করবে ইন্টারনেট৷
The post চলুন ওয়াংচুক রাজার দেশে appeared first on Sangbad Pratidin.