টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: বাঙালির পায়ের তলায় সর্ষে। কখনও পাহাড় কখনও সমুদ্র তো কখনও আবার জঙ্গলের টানে দেশ থেকে বিদেশে ছুটতে ভালবাসেন তাঁরা। তার উপর যদি থাকে ইতিহাসের হাতছানি, তাহলে তো কথাই নেই! ভ্রমণপিপাসুদের সেই ভাললাগাকে উসকে দিতে কোমর বেঁধে নামছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। এমনিতেই পাহাড়-নদী-জঙ্গলে ঘেরা এই জেলা এখন পর্যটকদের কাছে হটকেক।স্বাধীনতা সংগ্রামে এই জেলার ইতিহাস সেই কেকে যেন চেরি অন দ্য টপ।আর তাই অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের স্মৃতি বিজড়িত দক্ষিণ বাঁকুড়ার গুহার খোঁজে উদ্যোগী বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।
[আরও পড়ুন : যেন অবিকল লতা, সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপাচ্ছে খুদের ভিডিও]
এলাকায় কান পাতলে আজও শোনা যায়, বাঁকুড়ার জঙ্গলঘেরা রানিবাঁধ ব্লকের ছেঁদাপাথরের এই গুহায় শহিদ ক্ষুদিরাম বসু-সহ একাধিক বিপ্লবীর গোপন ঘাঁটি গেড়েছিলেন। অতীতের সেই ইতিহাসকে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগী প্রশাসন। এবার রানিবাঁধ থানা এলাকার এই গুপ্ত ঘাঁটি খুঁজে বের করতে আর্কিওলজি সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার দ্বারস্থ হচ্ছে বাঁকুড়া জেলা পর্যটন বিভাগ। জেলার পর্যটন বিভাগের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক পার্থসারথী সাধুখাঁ বলছেন, “আমরা লিখিতভাবে আবেদন করা প্রস্তুতি নিচ্ছি।” এদিকে ইতিমধ্যেই রানিবাঁধের ব্লক সমস্টি উন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিক শুভদীপ পালিত জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ছেঁদাপাথরের তসরবাগান থেকে এসকেএসটি স্কুল পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকা এবং ওই সুড়ঙ্গের বন্ধ হয়ে যাওয়া মুখের ছবি তুলেছেন। পাশাপাশি গুহাটি খুঁজে বের করার জন্য পর্যটন দপ্তরে লিখিত আকারে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন :সুন্দরীদের দেখলেই হৃদকম্প! পুরুষদের জন্য অপেক্ষা করছে এই বিপদ]
ঐতিহাসিকরা বলছেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঁকুড়ার মানুষের বিশেষ কৃতিত্ব থাকলেও ইতিহাসের পাতায় ততটা উজ্জ্বল স্থান পায়নি এই জেলা। অথচ বিপ্লবীরা গোপন ঘাঁটি গড়ার জন্য বাঁকুড়াকে যে আদর্শ স্থান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন, তাঁতে দ্বিমত নেই। স্বাধীনতা সংগ্রামী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, নরেন গোস্বামী, বিভূতি সরকাররা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য রানিবাঁধ থানার ছেঁদাপাথরে একটি গুপ্তঘাঁটি তৈরি করেছিলেন। যার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন অম্বিকানগরের রাজা রাইচরণ ধবল। সেখানে লুকিয়ে রাখা হত আগ্নেয়াস্ত্র। ক্ষুদিরাম বসুর সঙ্গেও এই গুপ্ত ঘাঁটির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল বলে জানা যায়। ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ কলকাতায় ‘অনুশীলন সমিতি’ প্রতিষ্ঠা হয়। চট্টোগ্রামের বিপ্লবী চারুবিকাশ দত্ত এবং বিপ্লবী নীরদবরণ দত্ত ও প্রফুল্ল কুণ্ডুর তত্ত্বাবধানে বাঁকুড়ায় গড়ে ওঠে ‘অনুশীলন সমিতি’–র প্রাথমিক সংগঠন। চারুবিকাশ দত্তের প্রত্যক্ষ চেষ্টায় বাঁকুড়ার বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয় বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গোষ্ঠী। বাঁকুড়ায় পর্যটনের প্রসারে অগ্নিযুগের এহেন ইতিহাস কতটা অবদান রাখে তা এখন দেখার।
The post বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটিতে হবে পর্যটন কেন্দ্র, উদ্যোগী বাঁকুড়া প্রশাসন appeared first on Sangbad Pratidin.