সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: অরণ্য সুন্দরী পুরুলিয়ায় বেড়াতে এসে চাঁদার জুলুমের মুখে পড়লেন পর্যটকরা। আশেপাশের দর্শনীয় স্থান থেকে ঘুরে এসে দাবি মতো চাঁদা মেটাবেন বলে আশ্বাস দিলেও জুলুমবাজি থেকে রেহাই মেলেনি। বাইকে ধাওয়া করে চালককে গাড়ি থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে চোখরাঙায় একদল যুবক। অভিযোগ, চাঁদা না দিলে চালককে মেরে গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা। চালককে বাঁচাতে গেলে অভিযুক্তরা পর্যটকদের উপরও চড়াও হয় বলে অভিযোগ। বাঘমুন্ডি ব্লকের খয়রাবেড়া এলাকার এই ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত পর্যটকেরা।
আক্রান্ত পর্যটকরা তাঁদের অভিজ্ঞতা সোশ্যাল সাইটে সেদিনের ঘটনার ভিডিও সমেত পোস্ট করায় তা এখন ভাইরাল। যদিও সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল সেই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি। এদিকে এই ঘটনায় পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন পদক্ষেপ করেছে বলে দাবি। পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, “এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগণ বলেন, “খোঁজ নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
[আরও পড়ুন: ‘বাবার শরীর ভাল নেই, ১০০ থেকে ৭ বাদ দিলে কত, ভেবে বলতে হয়’, মুকুলকে নিয়ে চিন্তিত শুভ্রাংশু]
চলতি মাসের ২২ তারিখ আক্রান্ত পর্যটক রাজীব ঘোষ সোশ্যাল সাইটে চাঁদার একটি রসিদ পোস্ট করেন। রসিদে লেখা আছে, “বুড়দা মধ্যপুয়া ষোলো আনা কমিটি। বুড়দা, বাঘমুন্ডি, পুরুলিয়া।” সঙ্গে আরও লেখা, “বুড়দা মধ্যপুয়া ষোলোআনা গ্রাম উন্নয়নকল্পে চাঁদা/অনুদান বাবদ ১০০ টাকা ধন্যবাদের সহিত গৃহীত হইল l” অভিযোগ, চাঁদা আদায়কারী যুবকরা মহিলা ও বয়স্ক পর্যটকদেরকেও হেনস্তা করে। পর্যটকদের দাবি, “চাঁদা আদায়কারী যুবকরা বলছিল, যখন পয়সা খরচা করে পুরুলিয়া বেড়াতে এসেছেন তখন চাঁদা দিতে হবে।” এই কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যান ওই পর্যটকের দল। এ প্রসঙ্গে নাকতলার বাসিন্দা রাজীব ঘোষ বলেন, “পুরুলিয়া বেড়াতে গিয়ে এভাবে চাঁদার জুলুমবাজির মুখে পড়ে হেনস্তা হতে হবে ভাবতেও পারিনি। এই বিষয়ে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে না হলে পুরুলিয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ বাংলার পর্যটনকেন্দ্রে এই শিল্প মার খাবে।” পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আরজিও জানান তাঁরা।
পর্যটকদের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরেই এই এলাকায় ছোট ছেলেমেয়েদেরকে সামনে রেখে চাঁদা আদায় চলছে। ওই এলাকার ছোট-ছোট ছেলেমেয়েরা বাঁশ নিয়ে গাড়ি আটকে চাঁদা আদায় করছে। বাঘমুন্ডি ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কখনও ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকাও চাঁদা নেওয়া হত। কিন্তু এবার একেবারে রসিদ ছাপিয়ে ১০০ টাকা চাঁদার অভিযোগ পেয়েই পদক্ষেপ করে ব্লক প্রশাসন। বাঘমুন্ডির বিডিও দেবরাজ ঘোষ বলেন, “এই ঘটনার দু’দিন আগে থেকে এই চাঁদা আদায় চলছিল। এই ঘটনার পরেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
[আরও পড়ুন: বড়দিনে সেলফি তুলতে গিয়ে বিপত্তি, চার্চের জ্বলন্ত মোমবাতি থেকে আগুন তরুণীর চুলে]
এই ঘটনা ভাইরাল হতেই সমগ্র পুরুলিয়া জুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। এই জেলার হোটেল অ্যাসোসিয়েশন ও পর্যটন শিল্পে যুক্ত ব্যবসায়ীরা এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন l তাঁরাও প্রশাসনের কাছে উপযুক্ত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু কোথায় পদক্ষেপ? রবিবারও যথারীতি ওই খয়রাবেড়া সাইট সিয়িং-এ গাড়ি পিছু ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ l