সন্দীপ্তা ভঞ্জ: সিনেমায় হোক বা বাস্তব জীবনে রূপান্তরকাম অথবা রুপান্তরিত অভিনেতাদের নিয়ে দর্শকমনে কৌতূহল চূড়ান্ত। অনেকক্ষেত্রেই সিনেমায় তাঁদের চরিত্রকে তুলে ধরা হয় অন্যরকমভাবে। কারও কাছে তা অতিরঞ্জিত মনে হয়, আবার কারও কাছে তা সংজ্ঞা পায় বিকৃত হিসেবে। কিন্তু, বাস্তব জীবনে তাঁরা কী মনে করেন এধরনের চরিত্র প্রসঙ্গে? এখানেই আসছে ‘সিজনস গ্রিটিংস’ এবং শ্রী ঘটক মুহুরির কথা।
ঋতুপর্ণ ঘোষকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তৈরি হচ্ছে পরিচালক রামকমল মুখোপাধ্যায়ের ‘সিজনস গ্রিটিংস‘। বলিউডের ইতিহাসে প্রথম ফ্লোর ম্যানেজার নিয়োগ করার জন্য দিন কয়েক আগেই এছবির নাম উঠে এসেছিল খবরের শিরোনামে। আর এবার জানা গেল আরেক চমক। এই প্রথম কোনও বলিউড ছবিতে দেখানো হবে বাস্তবের রূপান্তরিত অভিনেতাকে। ‘সিজনস গ্রিটিংস’-এর একটি বিশেষ চরিত্রের জন্য এক রুপান্তরকাম বা ট্রান্সজেন্ডার অভিনেতার খোঁজে ছিলেন পরিচালক। আর রামকমলের সেই সন্ধানের অবসান ঘটল নিজের শহর কলকাতায়। তিনি খোঁজ পেলেন তাঁর ‘চপলা’র। রামকমলের চপলার রিয়েল লাইফ নাম শ্রী ঘটক মুহুরি। শ্রী একজন রুপান্তরিত অভিনেতা। বড়পর্দায় তাঁর হাতেখড়ি হল ‘সিজনস গ্রিটিংস’-এর হাত ধরে। সোজা বলিউডের ময়দানে। উচ্ছ্বসিত তো বটেই আবার আবেগপ্রবণও তিনি! নতুন জার্নি থেকে বাস্তবের রূপান্তরিত অভিনেতাদের জীবন… এসবই প্রতিদিন ডিজিটালের সঙ্গে শেয়ার করলেন শ্রী ঘটক মুহুরি।
এই প্রথম কোনও ছবিতে অভিনয়?
– থিয়েটারের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই যুক্ত আমি। তবে, ছবিতে এই প্রথম অভিনয়।
[আরও পড়ুন: রাজস্থান পুলিশের মাদকবিরোধী প্রচারে ‘কলঙ্ক’ মিম, মুগ্ধ বরুণ]
প্রথম ছবিতে অভিনয়, তাও আবার বলিউডে.. কেমন অনুভূতি?
– বড় পর্দায় ফার্স্ট ব্রেক এবং তা বলিউডে, নিঃসন্দেহে আনন্দিত আমি। উচ্ছ্বসিত এবং আবেগপ্রবণও। সেলিনা জেটলি, লিলি দুবের মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গে স্ক্রিন স্পেস শেয়ার করতে পেরেছি, তাতে আমি অভিভূত এবং আপ্লুত।
চপলার চরিত্রটা সম্পর্কে একটু বলুন…
– ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে এই মানুষগুলোকে এতদিন প্রোট্রে করেছে, বা যেভাবে দেখিয়েছে। সেখানে চপলার চরিত্র একদম ছকভাঙা। আমাদের সমাজে একসঙ্গে নানানরকম মানুষের বাস। এই প্রত্যেকটা মানুষের চরিত্রগত হোক কিংবা স্বভাবগত শেডও আলাদা। সেটা নিয়েই ছবির গল্প।
সুযোগটা এল কীভাবে?
– আমি একটা অন্যরকম প্রোজেক্টের কাজ নিয়ে কোরিওগ্রাফার সুদর্শনদার (চক্রবর্তী) বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানেই ছবির প্রযোজক অরিত্রর সঙ্গে আলাপ আমার। এরপর হঠাৎ-ই একদিন ফোন আসে অরিত্রর। তখনই জানতে পারি রুপান্তরকামী একটা চরিত্রের জন্য ভাবা হয়েছে আমাকে। আমি প্রথমটায় এধরনের চরিত্রে অভিনয় করব না বলেই ভেবেছিলাম। কারণ, যেভাবে তাঁদের পোর্ট্রে করা হয়, সেটা আমার নাপসন্দ।
তারপর?
– কিন্তু তারপরেও ওদের কথায় আমি গল্পটা শুনি। চপলার চরিত্রটার সম্বন্ধে বুঝি। বিশ্বাস করুন, আমার মনে হয়েছিল এই চরিত্রটা বোধহয় আমার জন্যই লেখা হয়েছে। মনে পড়ল রামদা বলেছিলেন, একজন পুরুষ কিংবা মহিলাকে এধরনের চরিত্রের জন্য কাস্ট করা মুশকিল ছিল। জেন্ডার স্পেসিফিক চরিত্র না থাকলে অনেকেই এড়িয়ে যান। যে চপলার চরিত্রটাকে বুঝবে এবং এই তাকে যথাযথভাবে জাস্টিফাই করতে পারবে। আমার মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস জন্মাল যে, চপলাকে বুঝে আমি সেটাকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারব।
সেলিনা জেটলির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
– ও ভীষণ কোঅপারেটিভ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। শুটিংয়ে মেক-আপে সাহায্য করেছে। লাঞ্চের সময়ে ডাকত আমায়। ছবিতে একটা নাচের সিকোয়েন্স আছে আমার আর সেলিনার। প্র্যাকটিস করার সময় আমার কোনও ভুল হলে, দেখিয়ে দিত।
[আরও পড়ুন:মিমির সঙ্গে সেলফিতে ‘না’ তৃণমূলের, গোঁসা দলের নিচুতলার কর্মীরা]
আচ্ছা, এই প্রান্তিক মানুষগুলোর চরিত্র যেভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে উঠে, আসছে সে ব্যাপারে আপনার কী মত?
– এদের পরিণতিটা যেভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখানো হয়, এই ধরুন এধরনের মানুষদের কোনও সম্পর্ক তৈরি হয় না বা সেগুলো ঠিকঠাক পরিণতি পায় না, এরা জীবনে হতাশ বা অবসাদগ্রস্ত কিংবা গল্পের শেষে মরে গেল… এই নেতিবাচক দিকগুলো দেখানোতে আমার আপত্তি রয়েছে। এরা শুধু হিজড়েবৃত্তিই করে এধরনের ধারণাটাও সমাজের বদলানো উচিত। আমি নিজে রুপান্তরিত ব্যক্তি হিসেবে বলছি, বাস্তবজীবনে সবক্ষেত্রে কিন্তু এগুলো সত্যি নয়। আমার কাছে এরকম প্রচুর উদাহরণ রয়েছে যারা নিজেরা লড়ে তাঁদের জায়গা করে নিয়েছে। এক্ষেত্রে, সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের কথাই বলব। যিনি একজন ভাল অভিনেতা তো বটেই, সঙ্গে ভাল বাচিক শিল্পীও।
The post বাঙালি পরিচালকের হাত ধরে বলিউডে পদার্পণ রূপান্তরিত শ্রী ঘটকের appeared first on Sangbad Pratidin.