অভিরূপ দাস: কেউ পুরুষ পরিচয় নিয়ে জন্মগ্রহণ করেও এখন সম্পূর্ণ নারী। কেউ বা সমলিঙ্গের মানুষকে ভালবেসে বাড়িছাড়া। জীবন যুদ্ধের লড়াই যাঁদের কাছে গা সওয়া, রক্তের হাহাকার মেটাতে তাঁরাই একজোট হলেন। শহরে তো বটেই, রাজ্যেও প্রথম অভিনব এলজিবিটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন হল।
করোনার কারণে বাতিল হয়েছে একাধিক শিবির। রক্ত সংকটের এই পরিস্থিতিতে এক জোট হলেন রূপান্তরকামীরা। স্বাধীনতা দিবসের দিন ৬৩ জন এলজিবিটি (LGBT) রক্ত দিলেন ঢাকুরিয়ায়। এই প্রথম ব্লাড ব্যাংকের নথিতে পুরুষ-নারীর পাশাপাশি ঠাঁই পেল তৃতীয় লিঙ্গ। করোনা আবহে ব্যাপক রক্তসংকটে ভুগছে রাজ্য। প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গের জন্য ১৫ লক্ষ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সে চাহিদাও পূরণ হয় না। দেখা গিয়েছে, একাধিক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেও ১৩ লক্ষ ইউনিটের বেশি রক্ত সংগ্রহ করা যায়নি। এবছর করোনার কারণে সে সংখ্যা আদৌ ১০ লক্ষ ছোঁবে কি না সেটাই সন্দেহ।
[আরও পড়ুন: হাতে সিরিঞ্জ-কম্বল নিয়ে SSKM থেকে উধাও করোনা রোগী, ধরা পড়ল সিসিটিভি ফুটেজে]
জেন্ডার অ্যাক্টিভিস্ট অপ্রতীম রায়ের কথায়, এমন একটা চিন্তা থেকেই এই রক্তদান শিবির। যার নাম সঞ্চারণ ২০২০। ঢাকুরিয়া তরুণ মহলে আয়োজিত এই রক্তদান শিবিরে ‘হিজরে’ সম্প্রদায়ের এমন অনেকেই এসেছিলেন পেশাগতভাবে যাঁরা ভিক্ষুক। “এই করোনা আবহে যাঁরা দু’মুঠো মুড়ি খেয়ে রয়েছেন তাঁরাও রক্তের সংকট রুখতে একজোট হয়েছেন। এই মানুষগুলো যে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নন, এটাই তার প্রমাণ।” জানিয়েছেন অপ্রতীম।
বেসরকারি ব্লাড ব্যাংকগুলির ভাঁড়ার শূন্য। দাতা নিয়ে গেলে তবেই সেখান থেকে মিলছে রক্ত। সরকারি ব্লাড ব্যাংক কোনওমতে চলছে পুলিশের রক্তে। এর মধ্যেও রাস্তাঘাটে মুদির দোকান, বাজার খোলা থাকলেও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে যে, শুধু পুলিশই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করতে পারবে! আর কারও শিবিরের আয়োজনের অনুমতি মিলছে না, জানিয়েছেন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ডি আশিস। তাঁর কথায়, রাজ্যের ৫০ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের জন্য লাগে মোট সংগৃহীত রক্তের ৬০ শতাংশ। এবার সেই রক্তের জোগানে ভাটা। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা যেটা করলেন তা যুগান্তকারী বলেই মনে করছেন ডি আশিস।
[আরও পড়ুন: পরিবেশ রক্ষায় ‘নগরবন’ তৈরিতে আগ্রহী বাবুল সুপ্রিয়, জমি চেয়ে আসানসোলের মেয়রকে টুইট]
রক্তের যোগান কমে যাওয়ায় মারাত্মক অসুবিধায় পড়েছেন ক্যানসারের রোগীরাও। নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ত না দিলে ব্লাড ক্যানসারের রোগীকে বাঁচানো সম্ভব নয়। দুর্ঘটনা কিংবা জরুরি অস্ত্রোপচারেও রাখতে হয় রক্তের জোগান। এই বিপুল রক্ত কে জোগাবে, এই প্রশ্ন ঘুরছে চিকিৎসক, রোগীর পরিবার এবং রক্তদান আন্দোলনে যুক্ত কর্মীদের মধ্যে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কাজ করে সমভাবনা। সংস্থার সম্পাদক রূপান্তরকামী দিয়াশা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, রাজ্যে প্রায় আড়াই লক্ষ রূপান্তরকামী রয়েছেন। প্রয়োজনে তাঁরা বৃহত্তর রক্তদান শিবিরের আয়োজন করবেন। অথবা এলাকাভিত্তিক শিবির করা হবে।
The post করোনা কালে কলকাতায় রক্ত সংকট মেটাতে অভিনব উদ্যোগ, রক্তদান করলেন রূপান্তরকামীরা appeared first on Sangbad Pratidin.