গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন ছোট্ট শহর টাকির মানচিত্রে 'উইকএন্ড-ডেস্টিনেশন' হিসাবে স্থান করে নেওয়া ইছামতী নদীর কোল ঘেঁষা আকাশে-বাতাসে আজও ভাসে সেই আমলের 'জমিদারি গল্প'। এপার ও ওপার বাংলার রেশ বয়ে চলা সেই শহরকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে রাজ্যের নগরোন্নয়ন দপ্তরের সহযোগিতায় এবার তৎপর হল টাকি পুরসভা। বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা।
জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই জলপ্রকল্প ও বাড়ি বাড়ি জল পরিষেবা পৌঁছে দিতে বরাদ্দ হয়েছে ৪১ কোটি ও ১৩ কোটি ২১ লক্ষ টাকা। রাস্তার জন্য টেন্ডার হয়েছে। খরচ ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ কোটি। ছোট-বড় মিলিয়ে ৩২ টি রাস্তার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরসভা এলাকায় যতগুলি মেন রোড রয়েছে, সেগুলিরও সংস্কার হবে বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, গ্রিন সিটি প্রকল্পের উদ্যোগে পুরসভার বিভিন্ন এলাকায় ১৯৮০ টি সৌরশক্তি চালিত বাতি লাগানো হয়েছে। তার জন্য খরচ হয়েছে ১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা। এখনও ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার কাজ বাকি রয়েছে।
আগামী দিন প্রতিটি ল্যাম্প পোস্টে গ্রিন সিটির লাইট লাগানোর পরিকল্পনার কথাও জানান টাকি পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান ফারুক গাজি। বলেন, "টাকির মূল আকর্ষণ ইছামতী, তাই ইছামতীর পাড়কে আরও সুন্দর করে সাজানোর জন্য নগর উন্নয়ন দপ্তরের কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তা গৃহীত হলেই অবিলম্বে কাজ শুরু হবে।" নদীর ধার বরাবর যে রাস্তা সীমান্তের দিকে চলে গিয়েছে, সেই রাস্তা চওড়া করার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। যাতে দুটো গাড়ি পাশাপাশি যেতে-আসতে পারে। কারণ উৎসবের মরশুমে পর্যটকদের চাপে রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। তাই এই উদ্যোগ। এছাড়াও রয়েছে ইছামতীর ঘাট সংস্কার, নদীর পাড়ে সবুজায়ন সহ একাধিক কাজ শুরু হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে উৎসবের মরশুম ছাড়াও যেভাবে দুই বাংলার মধ্যবর্তী ইছামতীর টানে ও ঐতিহাসিক শহর টাকিতে জমিদার বাড়ি, মিনি সুন্দরবন, গোলপাতার জঙ্গল, ছোট মিউজিয়াম, রামকৃষ্ণ মিশন, প্রাচীন কুলেশ্বরী কালীমন্দির, জোড়া মন্দির-সহ বিভিন্ন ঐতিহ্য দেখতে প্রতিনিয়ত এখানে ভিড় জমান দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। সেই সঙ্গে, টাকির ১৬ টা ওয়ার্ডে ৬০ হাজারের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে। তাই বর্জ্যবাহিত দূষণের কথা মাথায় রেখে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের জন্য পাঁচ বিঘা জমি কেনা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ভাইস-চেয়ারম্যান। পুরসভার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। তাঁদের কথায়, “শহর যত সুন্দর সাজানো গোছানো ও পরিচ্ছন্ন থাকবে স্থানীয়দের থাকতেও সুবিধা হবে। উন্নয়নের জেরে পরিষেবা পেতে সুবিধা হবে। বাইরে থেকে পর্যটক যত আসবে তত শহরের হাল ফিরবে। কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে।”
