বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: তিস্তার বিধ্বংসী রূপ এবার গভীরভাবে প্রভাব ফেলতে চলেছে উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের পর্যটন শিল্পে! অন্তত এবার বর্ষার শুরু থেকে একের পর এক ভূমিধসের ঘটনার জেরে পরিস্থিতি সেদিকেই এগোচ্ছে। প্রবল বর্ষণে রাস্তা, সেতু ভেঙে যেতে দেখে আতঙ্কিত টুর অপারেটর সংস্থাগুলো শনিবার একদফায় ভারচুয়াল বৈঠকে বসে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত পুজোর মরশুমে পর্যটকদের উত্তর সিকিমের বুকিং নেওয়া হবে না। কেউ বুকিং চাইলে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিস্থিতির কথা জানিয়ে অপেক্ষা করতে পরামর্শ দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়। আপাতত তারা উত্তর সিকিমকে প্রাধান্য না দিয়ে সেখানকার নির্মাণকাজে সুবিধাজনক পরিবেশ রাখতে চাইছেন। উত্তর সিকিমের বাসিন্দাদের সেকথা জানিয়ে দেওয়া হবে।
টুর অপারেটর সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে উত্তরে দুর্গাপুজোর (Durga Puja) বুকিংয়ের জন্য খোঁজ শুরু হয়েছে। এবারও পর্যটকদের উত্তর সিকিমের (North Sikkim) চুংথাং, ফোদং গুম্ফা ও সেভেন সিস্টার্স ফলস, লাচুং, ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার’ ইউমথাং, লাচেন, গুরুদোংমা লেক ঘুরে দেখার জন্য বুকিংয়ের খোঁজ চলছে। কিন্তু গত জুন মাসে উত্তর সিকিমে ভূমিধসে ৬ জনের মৃত্যু, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, মঙ্গন জেলার লাচুংয়ে ১৫ জন বিদেশি-সহ প্রায় দেড় হাজার পর্যটকের আটকে পড়ার ঘটনার পর থেকে টুর অপারেটর মহলে চিন্তাভাবনা শুরু হয় এতটা ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকদের উত্তর সিকিমে পাঠানো ঠিক হচ্ছে কিনা!
[আরও পড়ুন: হার্দিক-নাতাশার বিচ্ছেদের জল্পনায় সিলমোহর! অভিনেত্রীর ভিডিও ঘিরে চাঞ্চল্য]
এর পর বর্ষা বাড়তে তিস্তা (Teesta River) রীতিমতো ফুঁসে উঠছে। পর পর ভূমিধসে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে রাস্তাঘাট। এখন মঙ্গন থেকে গ্যাংটক (Gangtok) হয়ে ফোডং রোডে শুধুমাত্র হালকা যানবাহন চলছে। মঙ্গন-চুংথাং হয়ে টুং নাগা রুট, সংকলং রোড হয়ে মঙ্গন থেকে চুংথাং রোড অবরুদ্ধ আছে। সংকলং সেতু ভেঙে পড়েছে। লাচেন থেকে চুংথাংয়ের মধ্যে ধস নেমেছে এজন্য মুন্সিথাংয়ের রাস্তা বন্ধ হয়েছে। লাচেন, টু, থাঙ্গু রোড জিমা-১-এ অবরুদ্ধ হয়েছে। শনিবার লাচেন-থাঙ্গু সংযোগকারী নির্মীয়মাণ সড়ক তিস্তা ভাসিয়ে নিয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। টুর অপারেটর সংস্থা ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, "উত্তর সিকিমের পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। পুজোর মরশুমে উত্তর সিকিমের জন্য কোনও পর্যটক বুকিংয়ে এলে আমরা অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছি। সিকিম সরকার যতক্ষণ না জানাচ্ছেন রাস্তা, সেতু মেরামত সম্পূর্ণ হয়েছে ততক্ষণ বুকিং নেওয়া হচ্ছে না।"
[আরও পড়ুন: রোহিতরা পারলেও ব্যর্থ যুবরাজরা, পাক কিংবদন্তিদের কাছে হার ভারতীয় লেজেন্ডদের]
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত চলতে পারে। ট্যুর অপারেটর সংস্থাগুলো ওই তথ্য জানার পর আরও বেশি থমকে গিয়েছে। সংস্থার কর্তারা জানান মঙ্গন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের অবস্থা লোনার্ক হ্রদ কাণ্ডের পর থেকে এমনিতে খুবই খারাপ। সেখানে কেউ হাতে তিন-চারদিন সময় নিয়ে যেতে পারবেন না। ভূমিধসের কারণে এক সপ্তাহ আটকে থাকতে হতে পারে। ওই পরিস্থিতিতে কি বুকিং নিয়ে পর্যটকদের (Tourism) বিপাকে ফেলা ঠিক হবে? শনিবার টুর অপারেটরদের ভারচুয়াল বৈঠকে ওই প্রশ্ন বারবার উঠেছে। এর পরই সিদ্ধান্ত হয়, তড়িঘড়ি না করে নির্মাণ সংস্থাকেও কাজের পরিবেশ ও সময় দেওয়া দরকার। পর্যটকদের যাতায়াত থাকলে সেটা তাঁরা করতে পারবেন না। যখন তারা সরকারের মাধ্যমে জানাবেন কাজ শেষ হয়েছে। যাতায়াতের সমস্যা হবে না। তখনই বুকিং নেওয়া হবে। ওই পরিস্থিতিতে পুজোর মরশুমে উত্তর সিকিমের পর্যটনে কী ছবি দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার।