সুকুমার সরকার, ঢাকা: কুষ্টিয়ার শাপলা চত্বরে বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের মূর্তি ভাঙা নিয়ে উত্তপ্ত বাংলাদেশ (Bangladesh)। শনিবারের ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুক্তমনারা। এহেন পরিস্থিতিতে সোমবার ভাষ্কর্যবিরোধী বক্তব্য দেওয়ার দায়ে দেশের তিন শীর্ষ মুসলিম ধর্মীয় নেতা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মহম্মদ জোনায়েদ ওরফে জুনায়েদ বাবুনগরী ও সৈয়দ ফয়জুল করিম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস নেতা মাওলানা মহম্মদ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: রেলপথে আরও কাছাকাছি ভারত-বাংলাদেশ, চালু হচ্ছে হলদিবাড়ি থেকে চিলাহাটি ট্রেন চলাচল]
ঢাকার মুখ্য-মহানগর হাকিম আদালতে সোমবার এই মামলাটি দায়ের করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। পরে এই মামলার বিষয়ে শুনানি হয়। মামুনুল হক গত ১৩ নভেম্বর রাজধানী ঢাকার তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনের মিলনায়তনে বলেছিলেন, “যারা বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারে না। এই মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তৌহিদী জনতা নিয়ে শাপলা চত্বর পুনরায় কায়েম হবে।” আসামি সৈয়দ ফয়জুল করিম একইদিন ঢাকার ধোলাইখালের নিকটে গেন্ডারিয়ায় তার নসিহত শুনতে আসা সাধারণ মুসলমানদের হাত উঁচু করে শপথ পড়িয়ে নেন যে, “আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জেহাদ করব”। ফয়জুল করিম বলেন, “রক্ত দিতে চাই না। কিন্তু দেয়া শুরু করলে বন্ধ করব না। রাশিয়ার লেলিনের বাহাত্তর ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে আমি মনে করি শেখ সাহেবের এই মূর্তি আজ হোক অথবা কাল হোক খুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে।” মহম্মদ জোনায়েদ ওরফে জোনায়েদ বাবুনগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বলেন, “মদিনা সনদে যদি দেশ চলে তাহলে কোনো ভাষ্কর্য থাকতে পারে না।” তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “ভাস্কর্য নির্মাণ পরিকল্পনা থেকে সরে না দাঁড়ালে আরেকটি শাপলা চত্বরের ঘটনা ঘটবে এবং ওই ভাষ্কর্য ছুড়ে ফেলা হবে।”
উল্লেখ্য, গত শনিবার কুষ্টিয়ার শাপলা চত্বরে বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের একটি নির্মীয়মাণ মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা, মাশায়েখ ও মুফতিরা যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন ফের ভাস্কর্য তৈরির বিরোধিতা করেছেন। ওই উগ্র মৌলবাদীদের বক্তব্য, ‘মানুষ বা অন্য যে কোনও প্রাণীর ভাস্কর্য অথবা মূর্তি নির্মাণ, স্থাপন ও সংরক্ষণ পূজার উদ্দেশ্যে না হলেও সন্দেহাতীতভাবে কঠোরতম অপরাধ। আর যদি পূজার উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তা স্পষ্ট ধর্মবিরোধী আচরণ। এ ধরনের শরিয়ত বিরোধী কাজ মুসলমানদের জন্য অনুসরণযোগ্য নয়। যারা বলছেন মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়, তারা ভুল বলছেন। সত্য গোপন করছেন।’ সব মিলিয়ে বাংলাদেশে উগ্র ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা জোরদার করে তুলেছে বিভিন্ন মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন ও শক্তিগুলি।