অভিষেক চৌধুরী,কালনা: গভীর বন্ধুত্ব, সেখান থেকে তীব্র ভালবাসা। বিয়ে না করে একসঙ্গেই জীবনটা কাটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন তাঁরা। সম্পর্ক ছিল এমনই গভীর, একে অপরকে চোখের আড়ালও হতে দিতেন না। এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় একজনের উপস্থিতিতে দু’জনের মধ্যে অশান্তির সূত্রপাত। এরপরই মঙ্গলবার অস্বাভাবিক মৃত্যু হল সুশান্ত বারুই (২১) নামের সমকামী যুবকটির। বোতল পরিষ্কার করার পাউডারের মতো বিষাক্ত কিছু খেয়ে তাঁর সঙ্গীর মৃত্যু হয়েছে বলে অন্য সমকামী যুবক শংকর ঢালি দাবি করলেও মৃতের পরিবার তা মানতে নারাজ। ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যু (Unnatural death) মামলা রুজু করে পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কালনা (Kalna) শাসপুর পশ্চিম দিঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত বারুইয়ের সঙ্গে হুগলির গুপ্তিপাড়া মীরডাঙা কলোনির বাসিন্দা শংকর ঢালির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পূর্ব সাতগাছিয়ার একটি ব্যাগ তৈরির কারখানায় দুই যুবক একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে সম্পর্কের গভীরতা আরও বাড়ে। তাঁদের এই একসঙ্গে থাকা, ঘনিষ্ঠতা ভালভাবে মেনে নেয়নি তাঁদের পরিবার। যদিও দুই যুবকের সম্পর্ককে নিয়ে পরিবার ও প্রতিবেশীদের গুঞ্জনকে পাত্তা দিতে রাজি ছিলেন না ওই দুই যুবক।
[আরও পড়ুন: শেয়ারে বিপুল ধসের ধাক্কা, বিশ্বের ধনীর তালিকায় প্রথম ১০ থেকে ছিটকে গেলেন গৌতম আদানি]
শংকর ঢালির মা নিভাদেবী জানাচ্ছেন, “দুজন একে অপরকে ছাড়া থাকত না। একে অপরের কোলে ও গলা জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকত। দুজন দুজনকে খাইয়ে দিত।” এছাড়াও তাঁরা দু’জন একসঙ্গে একে অপরের বাড়িতে পর্যন্ত থাকতেন বলেও দাবি করেন তাঁরা। এদিকে মৃতের মাসি রেবা দাসের কথায়, ”কোলে পিঠে করে ওকে মানুষ করেছি। তা সত্বেও তিন বছর ধরে এই বন্ধু পেয়ে ও সব শেষ করেছে। ওই বন্ধুকে ছাড়ার কথা বললেও ও ছাড়ত না। একে অপরকে ওরা খাইয়েও দিত।”
কিন্তু জানা যাচ্ছে, এমন গভীর সম্পর্কে আচমকাই প্রবেশ ঘটে ‘তৃতীয় ব্যক্তির’। সরস্বতী পুজোর দিন আকিব খান নামে এক তরুণ কাশ্মীর থেকে শংকরের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। আর সেই থেকেই সুশান্ত ও শংকরের মধ্যে অশান্তির সূত্রপাত। আকিব যাতে তাড়াতাড়ি চলে যান সেজন্য শংকরের উপরে জোর খাটাতে থাকেন সুশান্ত। কিন্তু আকিব জানান, তাঁর কাছে এই মুহূর্তে ফের কাশ্মীরে ফিরে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত টাকা নেই। ফলে অশান্তি বাড়তেই থাকে বলে জানাচ্ছে স্থানীয় সূত্র।
[আরও পড়ুন: শিষ্যাকে ধর্ষণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপুর, দিতে হবে জরিমানাও]
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার সকাল ৬টা নাগাদ শংকরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গুপ্তিপাড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সুশান্ত বোতল পরিষ্কার করার পাউডার খান। শংকর বন্ধুকে ফোন করলে জানতে পারেন, তিনি বিষ খেয়েছেন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে কালনা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
শংকর জানাচ্ছেন, “আমরা দু’জন একে অপরকে খুব ভালবাসতাম। সমকামী আমরা। ফেসবুকে পরিচয় হওয়া এক বন্ধু কাশ্মীর থেকে আমার বাড়িতে এলে দু-তিনদিন আগে কথা কাটাকাটি হয়। ওকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বলে সুশান্ত। আমি ওকে চলে যাওয়ার জন্য বলি। এটাই সুশান্তর রাগ ছিল।” যদিও এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মনে করছে না মৃতের পরিবার। তাদের অভিযোগ, “এই মৃত্যু আমাদের স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। ওর বন্ধুরা কিছু করেছে বলেই আমাদের মনে হয়। তাই সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।” এদিন কালনা হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়।