সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বিজেপিকে (BJP) ভোট নয়। প্রকাশ্যে মিছিল-সহ বিক্ষোভ সমাবেশ করে জানিয়ে দিল ভারতীয় আদিবাসী সমন্বয় সমিতির পুরুলিয়া শাখা। রবিবার বিকালে শহর পুরুলিয়ায় তাঁরা মিছিল করে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সেই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকেই তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, আদিবাসী বিরোধী কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপিকে একটিও ভোট নয়। স্লোগান ওঠে, 'নো ভোট টু বিজেপি'। কেন বিজেপিকে ভোট দেওয়া যাবে না, এদিনের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তা তুলে ধরা হয়। এদিন ওই সমাবেশে পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর জন্ম দিবস উপলক্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান আদিবাসী মানুষজন।
সম্প্রতি পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে আদিবাসী ভূমিজ সমাজ রেয়ার উদ্যোগে শারুল উৎসবের আয়োজন হয়। সেই উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু ওই সভায় ভিড় না হওয়ায় তাঁকে ফিরে যেতে হয়। সামাজিক অনুষ্ঠানকে বিজেপি রাজনীতিতে রূপ দেওয়ায় শুভেন্দু অধিকারীকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছিল অল ইন্ডিয়া ভূমিজ সমাজ। কার্যত বয়কট করেছিলেন তারা। আর এবার ভারতীয় আদিবাসী সমন্বয় সমিতির পুরুলিয়া শাখা প্রকাশ্যে মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিজিপিকে ভোট না দেওয়ার আহ্বান জঙ্গলমহলের ভোটের আগে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
[আরও পড়ুন: আচমকা ‘বেঁচে’ উঠল মৃত কিশোর! কাটোয়া হাসপাতালে ধুন্ধুমার]
ভারতীয় আদিবাসী সমন্বয় সমিতির পুরুলিয়া শাখার আহ্বায়ক লক্ষ্মী নারায়ণ সিং সর্দার বলেন, "১০ বছর ধরে এই কেন্দ্রীয় সরকার আদিবাসীদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সব দেখে নিয়েছি, আর নয়। আদিবাসী বিরোধী কেন্দ্রীয় সরকারকে আর চাই না। তাই আমাদের স্লোগান, নো ভোট টু বিজেপি। বিজেপিকে একটা ভোটও নয়। মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আমরা সেই বার্তা দিলাম।" তবে তিনি জানান, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলিকে তাঁরা ক্লিনচিট দিচ্ছেন এমন নয়। সব রাজনৈতিক দল ও তাদের কার্যকলাপের প্রতি ভারতীয় আদিবাসী সমন্বয় সমিতির তীক্ষ্ণ নজর থাকবে। তাহলে কি শাসকদলকে সমর্থন? এই বিষয়টি অবশ্য সরাসরি ভাঙতে চাননি ওই সংগঠনের আহ্বায়ক। তিনি বলেন, "সেটা আমরা আদিবাসী মানুষজনের উপর ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু আমাদের ঘোষণা পরিষ্কার, বিজেপিকে ভোট দেওয়া যাবে না। এই বিজেপি আদিবাসী বিরোধী। ফরেস্ট রাইট অ্যাক্ট ২০০৬ সংশোধন করে ফরেস্ট রাইট অ্যাক্ট ২০২৩ আইনসভায় পাস করানো হয়েছে। যাতে বনের অধিকার থেকে আদিবাসীদের বঞ্চিত করা যায় এবং প্রকৃতিপ্রেমী আদিবাসীদের বনাঞ্চল থেকে সরিয়ে দিয়ে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া যায়। তাছাড়া এনআরসি এবং সিএএ-র মত আইন বলবৎ করে যেভাবে এই ভারতবর্ষের মূলনিবাসী, আদিনিবাসী আদিবাসীদের নাগরিকত্ব পরীক্ষার লাইনে দাঁড় করানোর চক্রান্ত হচ্ছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। এই কারণেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত।"
এদিন শহর পুরুলিয়ায় মিছিল শেষে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে জমায়েতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে মহিলাদের ভিড় নজর কাড়ে। জমায়েত হওয়া আদিবাসী মানুষজনের হাতে ছিল ট্র্যাডিশনাল তীর, ধনুক। এই ভারতীয় আদিবাসী সমন্বয় সমিতি মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিজেপিকে ভোট না দেওয়ার আহবানে চাপে পড়ে গিয়েছে পুরুলিয়া জেলা গেরুয়া শিবির। বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, "সংগঠন ও সমাজ এক নয়। প্রশাসন প্রভাবিত করে ওই সংগঠনকে দিয়ে এইসব কথা বলা করাচ্ছে। জঙ্গলমহলে আদিবাসী মানুষজন বিজেপির পাশে রয়েছেন। তার কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আদিবাসী মানুষজনদের জন্য ঢালাও উন্নয়ন করেছেন। ভোটের ফলাফলেই তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।"