ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: স্কুল ঘরের চাবি চুরির অভিযোগে প্রায় ২ বছর ধরে সামাজিক বয়কটের (Social Boycott) শিকার বোলপুরের এক আদিবাসী পরিবার। নির্যাতনের শিকার হয়ে এবার জেলার পুলিশ সুপারের কাছে সুরাহা চেয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছিল ওই পরিবার। আর অভিযোগ পেয়েই বীরভূমের (Birbhum) ‘দাবাং’ SP নগেন্দ্র সিং ত্রিপাঠী ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেন। শনিবার তিনি লাভপুরের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। আইনের পথেই যা করার করব।” এই আশ্বাসে স্বস্তি পেয়েছে ওই আদিবাসী পরিবার।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৯ সালের নভেম্বর। শান্তিনিকেতনের বালিপাড়া আদিবাসী (Tribal) গ্রামের এক পরিবারের বিরুদ্ধে স্থানীয় স্কুলঘরের চাবি চুরি করার অভিযোগ তুলে বসে সালিশি সভা। অভিযোগ, সভায় মোড়ল সুনীল হাঁসদা ৭ জনের ওই পরিবারকে এক ঘরে করার নিদান দেন। এমনকী পরিবারের মহিলা সদস্য কালীদাসী চোড়েকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। এছাড়াও সালিসি সভার মাধ্যমে ওই পরিবারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। প্রায় ২ বছর ধরে পরিবারের কারও সঙ্গে গ্রামের কেউ কথা বলে না৷ যাঁরা কথা বলবে, তাঁদেরও সামাজিকভাবে বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সালিসি সভায়৷ শুধু কথা বলা বন্ধ নয়, ওই পরিবার গ্রামের নলকূপ, পুকুর ব্যবহার করতে পারেন না৷ গ্রামের দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতেও পারেন না।
[আরও পড়ুন: মেঝেতে পড়ে স্বামী, বিছানায় স্ত্রীর দেহ, পুরুলিয়ায় বন্ধ ফ্ল্যাটে বৃদ্ধ দম্পতির রহস্যমৃত্যু]
দৈনন্দিন জীবনে একাধিক সমস্যার মুখে পড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল পরিবারটি। প্রশাসনিক স্তরে অভিযোগ জানিয়েও বয়কটের ‘শাপমুক্তি’ হয়নি বলে অভিযোগ। জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করছিলেন। পরিবারের সদস্যা কালীদাসী চোড়ে নিজে চিঠি লিখে এসপি-র কাছে সুরাহা চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “নির্মমভাবে আমাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে৷ আমাকে, আমার বাবাকে মারধর করছে। গ্রামের কেউ মোড়লের নির্দেশে আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। কেউ মেশে না। ২ বছর ধরে সব জায়গায় জানিয়েছি। কাজ না হওয়ায় আবার এসপি স্যারের কাছে অভিযোগ করলাম।” আর তাতেই কাজ হল। বীরভূমের এসপি নগেন্দ্র ত্রিপাঠী জানালেন, ”আমার নজরে এসেছে বিষয়টি। ওখানকার মোড়লের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আছে। ওসব আমরা খতিয়ে দেখছি। আইন অনুযায়ী সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই পরিবার যাতে ভালভাবে থাকতে পারে, তা অবশ্যই দেখব।”