সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এলেন, দেখলেন। কিন্তু জয় করতে পারলেন কি? ছুঁতে পারলেন না ‘গান্ধীর ভারত’-এর আবেগ। প্রথম ভারত সফরে এসে গুজরাটের মাটিতে পা রাখামাত্রই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সস্ত্রীক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে গিয়েছিলেন জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত সবরমতী আশ্রমে। সেখানে গিয়ে প্রথা মেনেই শ্রদ্ধা জানানো, চরকা কাটা, আশ্রম ঘুরে দেখার পর্ব ট্রাম্প শেষ করলেন যথাযথভাবেই। কিন্তু শেষমুহূ্র্তের আচরণেই উসকে দিয়ে গেলেন ছোট্ট বিতর্ক। সবরমতীর ভিজিটরস বুকে গান্ধীজি অথবা আশ্রম নিয়ে একটি কথাও লিখলেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বরং সেই পাতাও প্রায় ভরিয়ে দিলেন মোদির প্রশংসায়।
সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ আহমেদাবাদের বিমানবন্দর থেকে সোজা সবরমতীর আশ্রমে পৌঁছে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া। সঙ্গে ছিলেন মোদি। সেখানে মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন দু’দেশের রাষ্ট্রনেতা। এরপর ভিতরের ঘরে গিয়ে আশ্রমের প্রথা মেনে, মাটিতে বসে সেখানকার কর্মীদের সাহায্যে চরকা কাটেন ট্রাম্প, মেলানিয়া। প্রধানমন্ত্রী নিজে দাঁড়িয়ে তাঁদের সেই কাজে উৎসাহ দেন। এরপর তাঁদের আশ্রম ঘুরে দেখান মোদি।
[আরও পড়ুন: প্রতিরক্ষায় ভারতই বড় সঙ্গী, রেকর্ড ৩ বিলিয়ন ডলারের সামরিক চুক্তি করবেন ট্রাম্প]
বেরনোর সময়ে ভিজিটরস বুকে কিছু না কিছু লেখাই প্রথা সবরমতী আশ্রমের। ট্রাম্প চেয়ারে বসে, টেবিলে রাখা খাতায় বেশ কিছুক্ষণ ধরে লিখলেনও। কী লেখেন তিনি, সেদিকে উৎসাহ ছিল আশ্রম কর্তৃপক্ষ থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেরই। দেখা গেল, সুন্দর হস্তাক্ষরে গোটা গোটা লিখেছেন শুধুই মোদির কথা। লিখেছেন, “আমার প্রিয় বন্ধু প্রধানমন্ত্রী মোদি, অশেষ ধন্যবাদ। দারুণ সফর!” একটি শব্দও নেই গান্ধীজি অথবা আশ্রম সংক্রান্ত। বিশিষ্টদের একাংশ তাঁর এই লেখা হাস্যকর বলে মনে করলেও, আশ্রম কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে। ডিরেক্টর অতুল পাণ্ডিয়ার সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “ওনার ভাল লেগেছে আশ্রম ঘুরে।” পরে অবশ্য ট্রাম্প মোতেরা স্টেডিয়াম থেকে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কয়েকটি বাক্য খরচ করেছেন। তখন আবার স্বামী বিবেকানন্দের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে হোঁচট খেলেন। সে যাই হোক, সামলে নিলেন কোনও ক্রমে।
[আরও পড়ুন: ট্রাম্পকে স্বাগত জানিয়ে বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হলেন মোদি]
স্বাধীনতা উত্তর ভারত মহাত্মা গান্ধীর অবদানের জন্য তাঁকে জাতির পিতার আসনে বসিয়েছে। দেশের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত গান্ধীজির সমগ্র জীবন, কর্ম, আদর্শ। যা আজকের প্রগতিশীল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গড়ে ওঠার নেপথ্যে আব্রাহাম লিঙ্কনের ভূমিকার সঙ্গে সমতুল্য। সেকথা অজানা নয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও। অন্তত তেমনটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু গান্ধীজির মূল কর্মস্থল সবরমতী আশ্রমের ভিজিটরস বুকে তাঁর লেখা বুঝিয়ে দিল ট্রাম্পের মনোভাব। কোনও ভারতীয় রাষ্ট্রনেতা যদি আমেরিকায় লিঙ্কনের বাসভবন, কর্মস্থল পরিদর্শনের পর তাঁকে নিয়ে একটি কথাও না লেখেন, বদলে বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানের প্রশংসাতেই ভরিয়ে দেন সেখানকার জন্য নির্দিষ্ট লেখার খাতাটি, তাহলে মার্কিনিদের কাছে তিনি যেমন হাস্যাস্পদ হয়ে উঠবেন, ট্রাম্পের ক্ষেত্রেও তেমনটাই।
The post গান্ধীকে নিয়ে একটিও শব্দ নেই! সবরমতীর ভিজিটরস বুকে মোদিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ট্রাম্পের appeared first on Sangbad Pratidin.