ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম: আলিপুরদুয়ারের পর এবার বীরভূম (Birbhum)। ফের আদিবাসীদের উপর সামাজিক ফতোয়া জারির ঘটনা প্রকাশ্যে। মোট ১২টি পরিবারকে ‘একঘরে’ করার নিদান দিলেন গ্রামের মোড়লরা। ঘটনা ঘিরে তপ্ত লাভপুরের গড়াইপুর গ্রাম। ঘটনা জানাজানি হতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।
ঘটনা দিন কয়েক আগের। গড়াইপুরের এক আদিবাসী তরুণীর বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিলেন অন্যান্য পরিবারগুলি। নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে সেখানে যাওয়ার পর থেকেই ঘনিয়ে আসে বিপদ। অভিযোগ, ওই অনুষ্ঠান অংশগ্রহণের জন্য ১২টি পরিবারকে বয়কটের নিদান দেন গ্রামের মোড়লরা। শুধু তাই নয়, গ্রামের পুকুর পর্যন্ত তাঁদের ব্যবহার করতে দিতে নারাজ গ্রামের অন্যান্যরা। মিলছে না পানীয় জলও। সকলকে সামাজিক বয়কটের (Social boycott) মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সালিশি সভা বসিয়ে এই ‘শাস্তি’ দেওয়া হয়েছে তাঁদের।
[আরও পড়ুন: বিজেপির ভারচুয়াল শিবিরে ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’! লিংক ফাঁস হয়ে বড়সড় বিপত্তি]
কিন্তু হঠাৎ কী কারণে এমন নিদান? জানা যাচ্ছে, বছর খানেক আগে গ্রামবাসীদের অমতে এক তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন গড়াইপুরের সুমন সোরেন নামে এক ব্যক্তি। সেসময়ই তাঁর উপর নেমে এসেছিল ফতোয়ার খাঁড়া। ‘একঘরে’ হয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। এবার সেই সুমনের আত্মীয়ার বিয়েতে তিনি অন্যান্য আদিবাসী পরিবারকে নিমন্ত্রণ করেন। আর তা রক্ষা করতে গিয়েই নিন্দনীয় ফতোয়ার মুখে পড়ল মোট ১২টি পরিবার। এই ঘটনার পর কার্যত হতবাক তাঁরা সবাই। দেখা গেল, গ্রামের রাস্তা ফাঁকা। নিজেদের মহল্লায় বেজার মুখে জোট বেঁধে বসে রয়েছেন তাঁরা। সামান্য জলটুকুও না পেলে কীভাবে দিন কাটাবেন, তা ভেবেই আকুল তাঁরা। তবে এই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই সমাজকর্মীরা কড়া নিন্দায় মুখর। এ ধরনের নিদান ‘মধ্যযুগীয়’ বলে মনে করছেন তাঁরা। দ্রুত প্রশাসনেক সাহায্যের আরজি জানিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসায় ঘরছাড়া BJP কর্মীরা, দার্জিলিংয়ে রাজ্যপালের কাছে নালিশ জন বার্লার]
এর আগে আলিপুরদুয়ারেও (Alipurduar) এমনই এক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে এক মহিলাকে মারধরের পর রাস্তায় ফেলে রাখার অভিযোগ ওঠে গ্রামের মোড়লদের বিরুদ্ধে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে চিহ্নিত করেন মহিলা। তাদের গ্রেপ্তার করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এই ঘটনায় ব্যাপক নিন্দার ঝড় উঠেছিল। এবার বীরভূমেও সেই একই ছবি প্রকাশ্যে এল। যা আজকের আধুনিক জগতের লজ্জা।