অর্ণব আইচ: প্রতারণা-কাণ্ডে দোসর স্ত্রী! কলকাতায় দু’টি আলাদা ঘটনায় প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই স্বামী। এবার পুলিশের নজর প্রতারণায় অভিযুক্তর স্ত্রীদের উপর। আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকার একটি ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্জয় ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উত্তর শহরতলির নায়ারণপুর থেকে। শেক্সপিয়র থানায় হওয়া অন্য একটি অভিযোগের ভিত্তিতে বিহারের গয়া থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে অনুজ কুমার নামে আরও এক ব্যক্তি।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম ঘটনাটির সূত্রপাত ২০২১ সালে। আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকার এক বাসিন্দার সিকিউরিটি এজেন্সি রয়েছে। সেখানকারই কর্মী সঞ্জয় ঘোষ। শরিকি গোলমালের কারণে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ওই এজেন্সির মালিক সঞ্জয়কে নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে নিজের বাড়িতেই রাখেন। সেই সুযোগেই সঞ্জয় তাঁকে বলে, তাঁর আদিবাড়ি নদিয়ায় প্রচুর জমি বিক্রির জন্য রয়েছে। সস্তায় মিলবে সেই জমি। বেশ কিছু ভুয়ো নথি ও দলিলও হাজির করা হয় অভিযোগকারীর সামনে। এমনকী, কয়েকটি রিয়েল এস্টেট সংস্থা ওই জমিগুলি কিনতে উদগ্রীব, এমন প্রমাণ দিতেও বেশ কিছু জাল নথি হাজির করে সঞ্জয়। জমি কেনার জন্য আগাম টাকা হিসাবে কয়েক দফায় ৪৬ লাখ টাকা নেয়। ওই ব্যক্তি নিজের কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাাকউন্ট থেকে ওই টাকা লেনদেন করেন। ওই টাকার একটি অংশ সঞ্জয়ের স্ত্রী পূর্ণিমা ঘোষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। এমনকী, ওই ব্যবসায়ীর দু’টি ডেবিট কার্ড থেকে ৭০ হাজার টাকাও তুলে নেয় সে। তার মালিক জমির মালিকানা চাইতেই তাঁর বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় সে। জমি বা টাকা কোনওটিই না পেয়ে ওই ব্যবসায়ী আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করে উত্তর শহরতলির নারায়ণপুরের একটি ডেরা থেকে সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করে।
[আরও পড়ুন: খাস কলকাতায় ফের আক্রান্ত পুলিশ, শব্দ তাণ্ডব থামাতে গিয়ে জুটল মার]
অন্য ঘটনায়, বিহারের গয়ার শেরঘাটি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী অনুজ কুমার গত বছরের জুন মাসে একটি বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থা থেকে ব্যবসায়িক ঋণ হিসাবে ১৫ লক্ষ টাকা নেন। শেক্সপিয়র সরণি এলাকায় ওই সংস্থার জোনাল অফিস থেকে ঋণের টাকা অনুজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে। প্রথম দিকে কয়েকটি কিস্তির টাকা দেন তিনি। কিন্তু এর পর থেকে টাকা ফেরৎ দেওয়া বন্ধ করে দেন ওই ব্যবসায়ী। তাঁকে সংস্থার পক্ষ থেকে নোটিস দেওয়া সত্ত্বেও কোনও উত্তর মেলেনি। সংস্থার কর্তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, অনুজ কুমার ছাড়াও তাঁর স্ত্রী শোভা দেবী ওই ব্যবসার অংশীদার। তাই স্বামী-স্ত্রী দু’জনের বিরুদ্ধেই সংস্থার পক্ষ থেকে শেক্সপিয়র সরণি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কলকাতা পুলিশের পক্ষে এই বিষয়টি গয়া পুলিশকে জানানো হয়। তারই জেরে গয়ার শেরহাটি থানার পুলিশ আধিকারিক বলিস্তের রাম তাঁর টিম নিয়ে বাড়ি থেকেই অনুজ কুমারকে গ্রেপ্তার করেন। অনুজকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছে। দুই অভিযুক্তর দুই স্ত্রী পূর্ণিমা ও শোভার ভূমিকা খতিয়ে দেখে তাঁদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।