দীপঙ্কর মণ্ডল: লোকসভা এবং বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার মতো সাহিত্য, সিনেমা এবং ধারাবাহিকেও থাকে বিরোধী চরিত্র। অনেক সময় সেই নেগেটিভ চরিত্রদের সমাজসেবা ছাপিয়ে যায় নায়ক-নায়িকাদের কর্মকাণ্ডকে। বলিউডের সোনু সুদ (Sonu Sood) তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এবার কলকাতায় পাওয়া গেল দুই ‘লেডি সোনু সুদ’কে। তাঁরা দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রী পৌষমিতা গোস্বামী এবং অর্পিতা মণ্ডল। এই মুহূর্তে দু’জনেই টিভি সিরিয়ালের (Bengali TV Serial) খলনায়িকা। ‘রিমলি’ ধারাবাহিকে লোপা এবং জিনিয়া চরিত্রে যাঁদের অভিনয় নজর কাড়ছে সবার।
গ্ল্যামার জগৎ ছেড়ে দু’জন হঠাৎ পৌঁছে গেলেন পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকা খেজুরিতে। সঙ্গে একটি লরি। তাতে বোঝাই করা খাদ্য সামগ্রী আর পোশাক। সোমবার দিনভর দুই তারকা ঘূর্ণিঝড় যশ (Yaas) ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি গ্রামে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করলেন। সাদামাটা পোশাক। মেকআপের বালাই নেই। তবু স্থানীয়রা চিনে ফেললেন ‘ওগো নিরুপমা’র পৌষমিতা এবং ‘সাঁঝের বাতি’, ‘ধ্রুবতারা’র অর্পিতাকে। মহিলাদের কেউ পেলেন শাড়ি, কেউবা খাবারের জাম্বো প্যাকেট। শিশুরাও পেল জামাকাপড়।
[আরও পডুন: নিত্যযাত্রীদের জন্য সুখবর, বুধবার থেকে চলবে বাড়তি আরও ৬৫টি স্টাফ স্পেশ্যাল ট্রেন]
একদিকে দৈনন্দিন রান্নার সামগ্রী তায় আবার বিতরণ করছেন দুই টিভি তারকা! কন্ঠিবাড়ি, আলাইচক, মুণ্ডমারির রাস্তায় হাজির কয়েক হাজার দুর্গত মানুষ। আবেগ থাকলেও সবাই ছিলেন ধীরস্থির। স্থানীয় শিক্ষক ও দেউলপোতা গ্রাম্য গোষ্ঠীর সমাজকর্মীদের নিখুঁত ব্যবস্থাপনায় সাবলীল ভাবে সম্পন্ন হল ত্রাণের কাজ।টিভি তারকা পৌষমিতা থাকেন কলকাতার লেকটাউনে। খেজুরি যাওয়ার আগে সারারাত জেগে নিজের হাতে প্যাকেট তৈরি করেছেন। অর্পিতার বাড়ি বাগুইআটিতে। এই দু’জনের পাশাপাশি কয়েকজন মিলে তৈরি করেছেন, ‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত’। কোভিড রোগীদের সেবায় তৈরি হয় এই সংগঠন। গত ২৬ মে আছড়ে পড়ে যশ। ক্ষতিগ্রস্ত বাংলার উপকূল এলাকায় যেতে শুরু করেন পৌষমিতারা।
ছোটবেলা কেটেছে শিলিগুড়িতে। তখন থেকেই শুরু সমাজসেবা। অর্পিতাও স্কুলজীবন থেকেই একটু আলাদা। নাচ-গানের প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। ভারতনাট্যম, ক্লাসিক্যাল ও ওয়েস্টার্ন নাচে পারদর্শী। নাচ-গানের মাঝে অভিনয়ে আকর্ষণ জন্মায়। এখন রীতিমতো তারকা। তবু দু’জনের পা আছে মাটিতে। কয়েকবছর আগে ‘জগজ্জননী মা সারদা’ ধারাবাহিকে সারদাদেবীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অর্পিতা। খেজুরির গ্রামে ত্রাণ দেওয়ার সময় এক বৃদ্ধা চিনে ফেললেন তাঁকে। নমস্কার করলেন। অভিনেত্রীর চোখে জল। চরিত্রের জন্য অনেক কিছু বাদ পড়ে তাঁদের জীবন থেকে। তেমনই পানও অনেক কিছু।
[আরও পডুন: ‘বিজেপি আমাদের বিশ্বাস করে না’, এবার বেসুরো তৃণমূলত্য়াগী সাংসদ সুনীল মণ্ডল]
পৌষমিতাও খেজুরিতে গিয়ে তাঁকে চিনে ফেলার কথা ভাবেননি। মাস্ক পরা মুখ দেখেও অনেকেই ঘিরে ছবি তোলেন। কলকাতা ফেরার পর তিনি জানালেন, “খেজুরিতে খাদ্য এবং বস্ত্রের হাহাকার দেখে এলাম। তবু মানুষের যা ভালবাসা পেয়েছি আবার যাব।” সফল হয়েও মাটির কাছাকাছিই থাকতে চান অর্পিতা এবং পৌষমিতা।