দীপঙ্কর মণ্ডল: করোনা আবহে স্কুল, কলেজ বন্ধ। ঘরবন্দি পড়ুয়াদের ক্লাস করতে হচ্ছে অনলাইনে। ছাত্রজীবনে আচমকা এই বদলে অনেকের মানসিক স্থিতি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে পাঠদানের পাশাপাশি এ ধরনের অবসাদগ্রস্ত পড়ুয়াদের সুরাহায় এগিয়ে এসেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্যের প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয় সিধো-কানহো-বিরসাও পডুয়াদের মনের যত্ন নিতে পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মনোবিজ্ঞান (Psychology) এবং ফলিত মনোবিজ্ঞান (Applied Psychology) বিভাগের অধ্যাপকরা ছাত্রছাত্রীদের মনের পরিচর্যা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।
কলকাতার উপাচার্য অধ্যাপক সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমাদের ছাত্রছাত্রীরা ফোন করে মনোবিদদের পরামর্শ পাচ্ছেন। নিখরচায় তাঁদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।” সিধো কানহোর উপাচার্য অধ্যাপক দীপক কর জানিয়েছেন, “আমরা স্কুলস্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সবার কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। মেল করে, হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে নিখরচায় মনের অসুখ সারানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: শেষবার ছেলেকে দেখার অপেক্ষায় রাত জাগছে সবংয়ের শহিদের পরিবার]
স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝাঁপ এখনও বন্ধ। শুধু ক্লাস নয়, স্থগিত বিভিন্ন পরীক্ষাও। ফাইনাল সেমিস্টারের পর অনেকেরই বিভিন্ন সংস্থায় যোগ দেওয়ার কথা। কেউ বা বিদেশে যাবেন বলে ঋণ নিয়েছে। সব এখন বিশ বাঁও জলে। মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন জুলাই মাসেও স্কুল বন্ধ থাকবে। এমতাবস্থায় বহু ছাত্রছাত্রী মানসিক উদ্বেগ ও অশান্তিতে ভুগছে। গভীর অবসাদও গ্রাস করছে কাউকে। ‘নিউ নরমাল’ জীবনকে গ্রহণীয় করতে প্রতিষ্ঠানগুলি অনলাইন কাউন্সেলিংয়ের দরজা খুলেছে।
কলকাতার ১৩ জন অধ্যাপক প্রক্রিয়াটিতে কাজ করছেন। গত দু’মাসে প্রায় দশ হাজার ফোন এসেছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোমদেব মিত্র জানিয়েছেন, “দীর্ঘ লকডাউনে ছাত্রছাত্রীরা নানা রকম সমস্যা নিয়ে যোগাযোগ করছে। অনেকে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছে। কেরিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা করছে। আছে পরীক্ষা নিয়ে উৎকণ্ঠা। আমরা মানসিকভাবে তাদের ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। দরকারে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছেও পাঠানো হচ্ছে।”
প্রথম যৌবনে পা দেওয়া অনেকেরই সমস্যা, তাদের মনের কথা বলার এবং শোনার উপযুক্ত সঙ্গী থাকে না। অনেকে বুঝতে পারে না সমস্যার কথা কাকে বলবে। সেই অভাব পূরণ করতে ফোনে ধৈর্য ধরে সমস্যার কথা শুনে সমাধান বাতলে দিচ্ছেন অধ্যাপকরা। সোমদেববাবু জানিয়েছেন, “কয়েকদিন আগে এক ছাত্রী বলল, তার মনে হচ্ছে যে তার হাতের উপর দিয়ে সবসময় যেন পোকা হেঁটে যাচ্ছে। আরেকজন বলল, সে ভুলে যাচ্ছে দরজা বন্ধ করেছে কিনা। হাত ধুয়েছে কিনা। এগুলো অবসেসিভ ডিসঅর্ডার। আমি তাদের সাইকিয়াট্রিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। তারা ওষুধ খেয়ে আপাতত ভাল আছে।”
[আরও পড়ুন: পদ্মার চরে ঘাস কাটতে যাওয়ার ‘শাস্তি’, ৫ যুবককে উলঙ্গ করে মার BSF জওয়ানদের]
কিছু ক্ষেত্রে প্রেমাস্পদের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় মন খারাপের কথা উঠে আসছে। এই ধরনের মনোকষ্টে এক অধ্যাপকের বক্তব্য, “উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে দেখা না হওয়া খুব বড় সমস্যা নয়। ভিডিও কলে কথা বলার পরামর্শ দিচ্ছি। ছাত্রছাত্রীদের কাছে বড় সমস্যা তাদের উচ্চশিক্ষা, চাকরি, এডুকেশন লোন, পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যাওয়া-সহ আরও অনেক কিছুই।” সেইসব সমস্যারই সমাধান করে পড়ুয়াদের দিশা দেখাচ্ছেন অধ্যাপকরা, একেবারে বিনামূল্যে।
The post অবসাদ বাড়ছে ঘরবন্দি পড়ুয়াদের, দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে এবার নিখরচায় কাউন্সেলিং appeared first on Sangbad Pratidin.