সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মানুষের প্রাণ বোধহয় সত্যিই তুচ্ছ। যদি তিনি বয়স্ক হন, তবে তো তাঁর প্রাণের দাম নেই প্রায়। অন্তত এমনটাই বোধহয় মনে করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী (British PM) বরিস জনসন। সোমবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ব্রিটেনে লকডাউন প্রত্যাহারের পক্ষে জনসনের এই যুক্তির কথাই প্রকাশ্যে আনলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ ডমিনিক কামিন্স (Dominic Cummings)। এই বিস্ফোরক বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে নানা মহলে ফের শুরু হয়েছে সমালোচনা। তবে কি বৃদ্ধদের প্রাণের কোনও দামই নেই? বরিস জনসনের উদ্দেশে কেউ কেউ এই প্রশ্নই ছুঁড়ে দিয়েছেন।
সোমবার থেকে ব্রিটেনে লকডাউন (Lockdown) প্রত্যাহার করা হয়েছে সম্পূর্ণভাবে। খুলে গিয়েছে সব। মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলায় কোনও বাধ্যবাধকতা নেই আর। দেশের অধিকাংশ মানুষ করোনা ভ্যাকসিনের জোড়া ডোজ পেয়েছেন। ফলে তাঁদের প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে, এই যুক্তি দেখিয়ে সর্বত্র ছাড় দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তাঁর এই সিদ্ধান্তে ফের সংক্রমণ বৃদ্ধির অশনি সংকেত দেখেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বরিস কিছু শোনার পাত্রই নন। আর কোনওভাবেই ইংল্যান্ডে লকডাউন জারি রাখবেন না তিনি। শুধুই কি জোড়া ডোজ ভ্যাকসিনের (Corona Vaccine) রক্ষাকবচের উপরই এত ভরসা তাঁর? মোটেই তা নয়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ভাবনায় যে আরও অন্য কিছু ছিল, তা জানা গেল সম্প্রতি।
[আরও পড়ুন: ইদের আনন্দ বদলে গেল স্বজন হারানোর শোকে, ইরাকে ফিদায়েঁ হামলায় মৃত অন্তত ৩৫]
গত বছর পর্যন্তও প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের (Boris Johnson)মূল উপদেষ্টা ছিলেন ডমিনিক কামিন্স। অক্টোবরে তিনি সেই পদ থেকে সরে আসেন। আর চলতি বছর দেশ থেকে লকডাউন সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের পর মুখ খুললেন তিনি। আর মুখ খুলেই বিস্ফোরক সব কথাবার্তা প্রকাশ্যে আনলেন। কামিন্সের দাবি, বরিস বলতেন যে কোভিডে ৮০ ঊর্ধ্বদের বেশি মৃত্যু হচ্ছে। শুধু এর জন্য দেশে লকডাউন জারি রাখার পক্ষে তিনি একেবারেই নন। তাই গত বছরও তিনি দ্বিতীয় লকডাউন চালিয়ে যেতে চাননি। পরবর্তী সময়ে ফের সংক্রমণ বাড়ায় ফের কড়া বিধিনিষেধে বাধ্য হয়েছে ব্রিটিশ প্রশাসন।
[আরও পড়ুন: নজরে Taliban, আফগানিস্তান সীমান্তে সামরিক মহড়ার প্রস্তুতি রাশিয়ার]
এ প্রসঙ্গে বরিস জনসনের সঙ্গে তাঁর টেক্সটে কী কথাবার্তা হয়েছিল, তাও প্রকাশ্যে এনেছেন একদা উপদেষ্টা। জনসন নাকি মজা কর বলেছিলেন, ৮০ বছরের বেশি মানুষজন জীবনের অনেকটাই বেঁচেছেন। কোভিডে তাঁদের মৃত্যু হলে তাই কিছু যায় আসে না। বরং কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধদেরই হোক, এমনও মনে করছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, যাঁর নিজের বয়স ষাটের কাছাকাছি। কামিন্সের আরও দাবি, করোনার কামড়ে যখন জর্জরিত গোটা দেশ, সেসময় রানি এলিজাবেথের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন বরিস। কোনও বিধিই তিনি মানতে চাননি। প্রধানমন্ত্রীর একদা উপদেষ্টার এসব বিস্ফোরক দাবি স্বভাবতই বিরোধী শিবিরে অস্ত্র জুগিয়েছে। তাঁরা আবারও লকডাউন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভুল সময়ে নেওয়া হয়েছে, এই অভিযোগে সরব হয়ে উঠেছেন। তবে বরিসের বিরুদ্ধে কামিন্সের এসব অভিযোগ সত্যি হলে দেশের বয়স্ক নাগরিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাব যে কতটা অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিল, তা বলাই বাহুল্য।