shono
Advertisement

মায়ের নির্দেশে প্রথম সন্তানকে বলি দিয়েই ভগীরথপুরের চৌধুরিদের দুর্গাপুজোর সূচনা

‘বিসর্জনের আগে আমি তোর বাড়ি যাব,’ স্বপ্নাদেশে এই কথাই বলেছিলেন মা। The post মায়ের নির্দেশে প্রথম সন্তানকে বলি দিয়েই ভগীরথপুরের চৌধুরিদের দুর্গাপুজোর সূচনা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 08:31 PM Sep 26, 2018Updated: 08:31 PM Sep 26, 2018

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ রইল ভগীরথপুরের চৌধুরিদের দুর্গাপুজোর কথা।

Advertisement

অতুলচন্দ্র নাগ, ডোমকল: ভগীরথপুরের চৌধুরিদের পুজোকে কেন্দ্র করে নানান বিধিনিয়ম রয়েছে। মায়ের নির্দেশে পুজো চালু হলেও শুরুর দিকটা বড় বেদনার ছিল। নিঃসন্তান জমিদার ছবিলাল চৌধুরি মায়ের কাছে বংশধর কামনা করেছিলেন। ছবিলালবাবুর সন্তানরা ক্ষণজন্মা হওয়ায় কঠিন মানতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। প্রার্থনায় বলেন, প্রথম সন্তান জন্মালেই তা মায়ের নামে উৎসর্গ করবেন। সেইমতো ফের বাবা হন ছবিলাল। এযাত্রায় শিশুটি প্রাণে রক্ষাও পায়। এরপর ন’বছর কেটেছে। ভক্ত মানত পূরণের জন্য কিছুই করছে না। বুঝতে পেরে মা নিজেই একদিন ছবিলালের স্বপ্নে আসেন। তারপর মায়ের নির্দেশ মেনে নিজের সন্তানকে বলি দেন ছবিলাল চৌধুরি। সেই থেকে ভগীরথপুরের চৌধুরিবাড়িতে দুর্গাপুজো চলে আসছে।

বর্তমান বংশধর গোপাল চৌধুরি জানান, ছবিলালবাবু মায়ের নির্দেশে প্রথম সন্তানকে বলি দেওয়ায় গোটা বাড়িই তখন শোকবিহ্বল। ভক্তের দুঃখের আঁচ পেয়ে মা এবার জমিদার গিন্নির স্বপ্নে আসেন। দুঃখ করতে নিষেধ করেন। সেইসঙ্গে বিসর্জনের দিন বাড়ির সামনের অংশ সাফসুতরো রাখার নির্দেশও দেন। বলেছিলেন, ‘বিসর্জনের আগে আমি তোর বাড়ি যাব। দেখবি আমার দু’চোখে জল থাকবে। তা তুই আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিবি।’ তারপর বহুবছর কেটেছে সেই নির্দেশের আজও নড়চড় হয়নি। নিয়ম মেনে বিসর্জনের দিন প্রতিষ্ঠাতার বাড়ির সামনে থেকেই বিসর্জনে যান মা। বাড়ির মহিলারা স্ত্রী আচার শেষে আঁচল দিয়ে দুগ্গা মায়ের চোখ মুছিয়ে দেন।

[আলিপুরদুয়ারের চৌধুরিবাড়ির দুর্গা প্রতিমার মাটি কোথা থেকে আসে জানেন?]

বলা বাহুল্য, এরপর ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। চৌধুরিদের বংশের আকার বেড়েছে। পেশার টানে অনেকেই আজ ভগীরথপুরে থাকেন না। বিসর্জনের সময় হয়তো মায়ের চোখের জলও আজ আর দেখা যায় না। কিন্তু মায়ের মুখায়ব ছল ছল করে। স্থানীয়রা জানান, নরবলি দিয়ে পুজোর শুরু হলেও পরের বছর থেকে আর কোনওরকম বলি হয়নি। নবমী পুজোয় এখন সন্দেশ বলি হয়ে থাকে। আষাঢ় মাসের রথের দিন থেকেই পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। সেদিন কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে দু্গ্গা মায়ের বচ্ছরকার আগমন নির্দিষ্ট হয়ে যায়। চৌধুরিদের পুজোর শুরু থেকে শেষের প্রতিটা মুহূর্ত এখনও নিয়মের বেড়াজালেই রয়েছে। সেই নিয়ম কাটিয়ে ওঠার সাহস ছবিলাল চৌধুরির উত্তরপুরুষদের কেউই কখনও দেখানোর চেষ্টা করেননি।

বর্তমানে জমিদারদের বংশলতিকা বাড়লেও ভগীরথপুরে মাত্র কয়েকজনই থাকেন। তাঁরাই এখনও ঐতিহ্য মেনে পুজোর কাজ করে আসছেন। যদিও দেশও রাজ্যের বাইরে থাকা সদস্যরাও পুজো উপলক্ষে মোটা টাকা পাঠাতে ভোলেন না। তবে গোপালবাবুর দাবি, ‘মায়ের পুজোর যা মাহাত্ম্য তাতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে একদিন আমরা থাকি বা না থাকি, বাসিন্দারাই ভগীরথপুরের চৌধুরিবাড়ির দুর্গাপুজোকে টিকিয়ে রাখবেন।’ 

[জমিদারদের সিংহবাহিনীর মূর্তি চুরি করেই পুজোর সূচনা করেন রাজা মহেন্দ্র]

The post মায়ের নির্দেশে প্রথম সন্তানকে বলি দিয়েই ভগীরথপুরের চৌধুরিদের দুর্গাপুজোর সূচনা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement