সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শিশুশ্রম, শিক্ষা এবং শিশুদের মানসিক সুস্থতা- এই তিনটি বিষয়ই দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন ও সমাজের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের উদ্বেগের কারণ।কিন্তু কেবল তাঁরাই নন, আজকের দিনে শহরের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও যে এই নিয়ে উদ্বিগ্ন তা পরিষ্কার হয়ে গেল। ইউনিসেফ এবং রোটারি ইন্ডিয়া স্বাক্ষরতা মিশন আয়োজিত একটি সাম্প্রতিক অনলাইন আলোচনায় বক্তৃতা দেওয়ার সময়, ছাত্রছাত্রীরা সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের শিশুদের প্রতি তাদের সহানুভূতি ব্যক্ত করে।
অনলাইন আলোচনায় এক ছাত্রী তপস্যা জৈন (Tapasya Jain) সকলকে মনে করিয়ে দেয় যে শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সম্পত্তি নয়। তপস্যা বলে, “শ্রোতাদের আমার অনুরোধ আপনারা সকলে বুঝুন যে তারাও মানুষ এবং এই বয়সটা তাদের উপার্জন করার সময় নয়। শিশুশ্রম শিশুদের বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতনের শিকার করে তোলে। এতে তাদের পড়াশোনার দফারফা হয়ে যায়।” নিজের হাতে তৈরি ‘স্টপ চাইল্ড লেবার’ লেখা একটি পোস্টার ক্যামেরার সামনে তুলে ধরে হরিয়ানা বিদ্যামন্দিরের এই ছাত্রীটি।
এদিকে শিশুশ্রম ছেলে-মেয়েদের জীবনে অনেক অভিশাপ নিয়ে আসে এটা জানিয়ে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যতম অতিথি চিরাগ তুলসিয়ান (Chirag Tulsian) বাকি পড়ুয়াদের জীবনে আরও উন্নতি আনতে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান। নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়ে থেকে চিরাগ জানান, একবার নিজের গ্রামে তিনি দেখেন বাচ্চারা অর্থ উপার্জনের জন্য কাজ করতে বাধ্য হচ্ছিল। তিনি বলেন, “ওদের দারিদ্রের কারণ ছিল অনাবৃষ্টি এবং অসময়ে বৃষ্টিপাত। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। যার ফলে কৃষক বাবা-মায়েরা সন্তানদের পড়াশোনা ছাড়িয়ে কাজ করতে পাঠায়।”
একমাস সেখানে থাকার সময় চিরাগ একটি শিশুকে পড়ানো শুরু করেছিলেন। তিনি দেখেন ধীরে ধীরে আরও শিশু তার সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। চিরাগ বলেন, “আমি প্রথমেই ওদের বৃষ্টির জল সংরক্ষণের বিষয়ে পড়াই। এতে তারা অসময়ে বৃষ্টির কবলে পরে কষ্ট পাওয়ার বদলে তা থেকে কীভাবে লাভবান হতে পারবে সেটা শেখে।” তার পাঠশালায় শিশুদের শিক্ষা চলতে থাকে এবং কৃষকরাও এটি পছন্দ করেন। কিছুদিন পর হঠাৎ অসময়ে বৃষ্টি হলে এমসি কেজরিওয়াল বিদ্যাপীঠের এই ছাত্রটি তার প্রচেষ্টার ফল দেখতে পায়। শিশুরা তখন এই বৃষ্টিকে তাদের কাজে লাগায়।
[আরও পড়ুন: ৫ হাজারেরও বেশি শূন্যপদে স্টেট ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগ, কারা আবেদনের যোগ্য?]
চিরাগের উদ্যোগ শুনে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের (WBCPCR) চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায় ছাত্রছাত্রীদের তাদের বাড়িতে যারা কাজ করেন তাদের বাচ্চাদের যত্ন নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “রান্নার লোক, বাড়ির কাজের লোক অথবা গাড়িচালকের ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগই প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী। এদেরকে শিশুদের ও তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলো।”
এছাড়াও, ছাত্রছাত্রীরা যে এখন যথেষ্ট মানসিক চাপের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে সেই নিয়ে খুদে বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার ক্রমবর্ধমান হার নিয়ে চিন্তা করার আহ্বান জানায়। ডিপিএস মেগাসিটি স্কুলের বাঞ্ছিত আগরওয়াল (Vaanchhit Agarwal) বলে যে জীবনে বেড়ে ওঠার সময় হতাশা তার সামনে যেন একটা বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। সে অনুরোধ জানায়, “পড়াশোনার চাপ এবং শিশুদের সহায়ক কোনও শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশে এখনও নেওয়া হয়নি। অভিভাবকদের আমি তাদের সন্তানদের প্রতি আরও সহানুভূতিশীল হতে আবদেন জানাচ্ছি এবং প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা করুন।”
[আরও পড়ুন: মেধাবী পড়ুয়াদের ভবিষ্যত গড়ার ঠিকানা, আইআইটিরও আগে KIIT!]
এই বিষয় রোটারি এবং ইউনিসেফ এই লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করবে বলে ঘোষণা করে পশ্চিমবঙ্গের ইউনিসেফের ভারপ্রাপ্ত প্রধান অমিত মেহরোত্রা বলেন, “সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি ইউনিসেফ বঞ্চিতদের কাছে পৌঁছানোর জন্য অন্য অনেক সংস্থার সঙ্গেও কাজ করার চেষ্টা করছে। শিশুদের আরও উন্নতির জন্য তাদের মতামত নেওয়া জরুরি।”
এইসব তরুণ বক্তাদের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে, অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা ইউনিসেফের কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ সুচরিতা বর্ধন বলেন, যে শিশুবিকাশের জন্য নীতি প্রণয়ন এবং তাদের নিয়ে আলোচনার সময় শিশুদের মতামতের গুরুত্ব অপরিসীম। আলোচনায় অংশ নিয়ে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিক জয়ন্ত বসু বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও সুন্দরবনের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারী মানুষের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে শিশু অধিকার আয়োগের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তীও উপস্থিত ছিলেন। রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমানে এই সংস্থার ইন্ডিয়া লিটারেসি মিশনের মুখ্য উপদেষ্টা শেখর মেহতা বলেন, ইউনিসেফ এবং রোটারি, শিশুরা তাদের যেসব বিষয় নিয়ে সবচেয়ে উদ্বিগ্ন সেইগুলো নিয়েই বিভিন্ন কাজ করবে।