সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাঁশ থেকে ফল সংগ্রহ করে চাল তৈরি। সেই চাল থেকে সুস্বাদু ভাত, পায়েস। বাংলাদেশের উত্তর জনপদ জেলা দিনাজপুরের লালদিঘী গ্রামে এখনও বহুল প্রচলিত এই বাঁশের চাল। আদিবাসীরা পরিপক্ক বাঁশ থেকে ফল সংগ্রহ করে চাল তৈরি করে সেখান থেকে ভাত ও পায়েস তৈরি করা হচ্ছে। ইদানিং তা দেশের বাকি অংশের জনগণের মধ্যেও ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে।
বেইড়া বাঁশ থেকে তৈরি চাল। বাংলাদেশের দিনাজপুরের আদিবাসী গ্রামে জনপ্রিয় খাদ্য। ছবি: সোশাল মিডিয়া।
মূলত বেইড়া নামের বাঁশ (Bamboo) থেকে এই দানা বা চাল সংগ্রহ করা হয়। আদিবাসীদের (Tribal) কাছে তা 'বেইড়া' নামে পরিচিত। তাঁরা জানান, বাঁশ ও কঞ্চির ফোঁড়ে ফোঁড়ে ঝুলে থাকে ধানের মতো দানাদার ফল। সেই ফল সংগ্রহ করে ভরা হয় বস্তায়। ময়লা পরিষ্কার করে রোদে শুকনোর পর মাড়াই করে ধান থেকে উৎপাদিত হয় চাল। আর সেই চালেই রান্না হয় ভাত, পায়েস, খিচুড়ির মতো সুস্বাদু পদ।
[আরও পড়ুন: দিল্লি প্রদেশ সভাপতির ইস্তফার পরই কংগ্রেস কর্মীদের নিশানায় ‘বহিরাগত’ কানহাইয়া]
এই দৃশ্য দেখা যায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ি লালদিঘী গ্রামের। বাঁশের ফল থেকে ধানের মতো দেখতে দানাদার শস্য সংগ্রহ করে এলাকায় হইচই ফেলে দিয়েছেন গ্রামের কৃষক জোশেফ মুর্মু। গত এক সপ্তাহে প্রায় সাত মণ দানাদার শস্য সংগ্রহ করেছেন। ইতিমধ্যে দুই মণ চাল পেয়েছেন। জোশেফ মুর্মু নিজে যেমন রান্না করে খেয়েছেন, তেমনই আশপাশের মানুষজনের কাছে বিক্রিও করেছেন প্রতি কেজি ৪০ টাকায়। বাঁশ থেকে এই চাল (Rice) সংগ্রহের পদ্ধতি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে নানা বয়সি মানুষ ছুটে আসছেন লালদিঘী গ্রামে।
[আরও পড়ুন: বামেরা ক্ষমতায় এলে দ্বিগুণ হবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার! ভোটপ্রচারে সৃজনের মন্তব্য নিয়ে শোরগোল]
বাপ-দাদার সময় থেকেই এই চাল খেয়ে আসছেন আদিবাসী গ্রামের গৃহবধূ মাইকো বাস্কে। বাঁশের ফুল হলে সেগুলো সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চাল থেকে আটা করা হয়। জোশেফ মুর্মুর মায়ের বিয়েও হয়েছে এই চাল দিয়ে। তাঁদের দেখাদেখি আশেপাশের অনেকেই এই চাল ব্যবহার করছেন বলে জানান দিনমজুর জোশেফ। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বাঁশের ফুল থেকে দানা সংগ্রহ করে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। যা ওষধি গুণাগুণ সম্পন্ন বলে জানিয়েছেন দিনাজপুর ফুলবাড়ি উপজেলা কৃষি আধিকারিক রুম্মান আক্তার। সাধারণত কয়েক প্রজাতির বাঁশে দীর্ঘ সময় পরে ফুল ও ফল আসে। ফলটি দেখতে ধানসদৃশ। তবে প্রজাতিভেদে ২৫ থেকে ৬০ বছর পরে ফুল আসতে পারে। ফুল আসা মানেই ওই বাঁশের জীবনচক্র শেষ হওয়া।