সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিএনপি-র অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মানুষের দুর্দশার কথা ভেবে নামমাত্র বিরতি দেওয়া হয়েছিল অবরোধ কর্মসূচিতে। কিন্তু দুর্ভোগ বাড়িয়ে বুধবার থেকে ফের টানা ২ দিনের অবরোধ ঘোষণা করল বিএনপি। এই আবহেই এবার সুষ্ঠুভাবে কীভাবে অবাধ নির্বাচন সম্পন্ন হবে বাংলাদেশে তা জানতে চাইল আমেরিকা ও ব্রিটেন।
মানুষকে দুর্ভোগ-দুর্দশায় ফেলে টানা বন্ধ-অবরোধ দিয়েই চলেছে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। গত সপ্তাহ ও রবিবার-সোমবার দুই দফায় পাঁচ দিনের অবরোধ শেষে আবারও গোটা দেশে দুই দিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার এই অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে। অর্থাৎ আগামী বুধবার ভোর ৬টা থেকে অবরোধ শুরু হয়ে শুক্রবার ভোর ৬টায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হবে।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে হাসিনার পাশেই থাকবে দিল্লি, বিশ্বাস আওয়ামি লিগের]
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী সপ্তাহে জেনেভায় রাষ্ট্রসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউয়ের অধিবেশন বসবে। এই অধিবেশনে বাংলাদেশের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে উত্তর জানতে চাইবে আমেরিকা ও ব্রিটেন। ইউপিআরের কাঠামোর আওতায় মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি, সনদ ও আইনগুলোর প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার ও বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। এর আগে বাংলাদেশের সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় দুটি দেশের প্রতিনিধিরা তাঁদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছিলেন। এবার তাঁরা ইউপিআর অধিবেশনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করবেন।
জেনেভায় রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার জেনেভায় ইউপিআর ওয়ার্কিং গ্রুপের ৪৪তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। সূচি অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর সকালের অধিবেশনে বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। এর জন্য অগ্রিম প্রশ্ন পাঠিয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন-সহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো।
এই বিষয়ে ঢাকায় বিদেশ মন্ত্রক সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি আন্তমন্ত্রকের প্রতিনিধিদল ইউপিআর অধিবেশনে যোগ দেবে। বাংলাদেশ তার অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বাস্তব পরিস্থিতিও তুলে ধরবে। অধিবেশনে অন্য রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশকে মানবাধিকারের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন ও সুপারিশ করার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ সেসব বিষয়ে জবাব দেবে। এছাড়া যে সুপারিশগুলো যৌক্তিক মনে করবে, সেগুলো গ্রহণ করবে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ইউপিআরকে সামনে রেখে বাংলাদেশ তার মানবাধিকারের ক্ষেত্রে অঙ্গীকার ও অর্জনগুলোর বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
[আরও পড়ুন: আন্দোলনের নামে ঢাকায় বাসে আগুন, জানালা দিয়ে লাফিয়ে প্রাণরক্ষা যাত্রীদের]
এদিকে সোমবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা ও পণ্ড করা, হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অবরোধের কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবরের সংঘর্ষের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির-সহ দলের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া গ্রেপ্তার অভিযানের মুখে আত্মগোপনে আছেন বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। এই পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি এবার ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস উপলক্ষে কোনও কর্মসূচি পালন করছে না। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী জানান, দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ, নেতা-কর্মীদের অব্যাহতভাবে গ্রেপ্তার-সহ বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি’ দিবসের কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে। প্রতিবছর এই দিবসে দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি দলের পক্ষ থেকে আলোচনা-সহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। বিএনপির পাশাপাশি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোট, এলডিপি-সহ অন্যান্য দল ও জোটও একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
অন্যদিক, ঢাকায় গুলিস্থান ও মিরপুরের কয়েকটি বাস অবরোধকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া দেশের রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় মুরগির খাবার বোঝাই একটি ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে অবরোধ সমর্থকরা। সোমবার বেলা ৩টার দিকে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে মোহনপুরের নন্দনহাট মোড়ে এই কাণ্ড ঘটে। এছাড়া বিভিন্ন জেলায় যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়ার খবরও পাওয়া গিয়েছে।