সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আফগানিস্তানে (Afghanistan) ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। দুর্দমনীয় সোভিয়েত হানাদারদের বিপর্যয়ের পর এবার মার্কিন মহাশক্তির ভরাডুবি দেখল ‘কাবুলিওয়ালার দেশ’। আর প্রাচীন বটবৃক্ষের মতো গোটা ঘটনাবলির সাক্ষী থাকল ঐতিহাসিক বাগরাম (Bagram) বিমানঘাঁটি।
[আরও পড়ুন: কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষে ‘ফিরলেন’ চেয়ারম্যান মাও, আমেরিকার বিরুদ্ধে গর্জন চিনের]
৯/১১ হামলার পর তালিবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর প্রায় ২০ বছর পর আফগানিস্তানের বৃহত্তম বায়ুসেনা ঘাঁটি বাগরাম থেকে আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনী নিজেদের সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিল। এই কথা জানিয়েছেন আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রকের মুখপাত্র ফাওয়াদ আমান। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে ফৌজ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একইসঙ্গে সে দেশ থেকে চলে যাবে ন্যাটো বাহিনীর সেনারাও। এবং রীতিমতো দ্রুতগতিতে চলছে সেনা সরানোর কাজ।
এই ঘটনাবলী থেকে এটা স্পষ্ট যে , এবার থেকে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার যাবতীয় দায়ভার ফের পড়তে চলেছে আফগান সেনার উপরে। বাগরামের ঘাঁটি এরপর থেকে আফগান বাহিনী নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে কি না, তার উপরেই নির্ভর করবে আগামী দিনে সে দেশে আদৌ শান্তি বজায় থাকে কি না। আর এই গোটা ঘটনাবলী নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে তালিবান। কারণ, ইতিমধ্যেই পাহাড়ি দেশটির প্রায় ৫০টি জেলা দখল করে ফলেছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি। এবার বাগরাম থেকে মার্কিন ফৌজ সরে গেলে সেই ঘাঁটিটি পুনরোদ্ধারের মরিয়া চেষ্টা করবে তালিবান। এবং তাদের কাবুলের বাহিনী আদৌ রুখতে পারবে কি না, তা সময়ই বলবে।
বিশ্লেষকদের মতে বাগরাম বায়ুসেনা ঘাঁটি আধুনিক আফগান ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতীকী স্থান। ১৯৫০ সালে আফগানিস্তানের আধুনিকীকরণ শুরু করেন দেশটির শেষ সম্রাট মহম্মদ জাহির শাহ। ওই বছরই শাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে বাগরাম বায়ুসেনা ঘাঁটিটি তৈরি করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৭৯ সালে আফগান কমিউনিস্টদের মদত দিতে ওই বায়ুসেনা ঘাঁটিতেই নামে সোভিয়েত হানাদার ফৌজ। বাকিটা ইতিহাস। এক রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে আমেরিকার মদতপুষ্ট মুজাহিদদের হাতে মার খেয়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করে লালফৌজ। কিন্তু সেদিন ওয়াশিংটনের বিজয় উল্লাস দেখে বিধাতা আড়ালে মুচকি হেসেছিলেন। নিয়তির কী অদ্ভুত পরিহাস, একবিংশ শতাব্দীতে সেই বাগরাম দেখল বিধ্বস্ত মার্কিন ফৌজের পশ্চাদপসরণ।