সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিরিয়ার বিরুদ্ধে মিসাইল হামলা দাগল আমেরিকা৷ সিরিয়ার বায়ুঘাঁটি লক্ষ্য করে স্থানীয় সময় ভোর ৪টে ৪০ মিনিট নাগাদ অন্তত ৫৯টি টোমাহক মিসাইল ছোড়ে পেন্টাগন৷ মিসাইল হামলার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেলে নাগরিকদের প্রতি ভাষণ দেন৷ খবরটি জানিয়েছে বিবিসি৷ পেন্টাগন আরও জানিয়েছে, এদিন মিসাইল লঞ্চ করার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়াকে এই কথা জানানো হয়েছে৷
ট্রাম্প জানিয়েছেন, সিরিয়ায় আম নাগরিকদের উপর নারকীয় রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের বিরুদ্ধেই আমেরিকার এই পাল্টা আঘাত৷ প্রসঙ্গত, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশের একটি শহরের বায়ুঘাঁটি থেকে রাসায়নিক হামলায় অন্তত ২৭টি শিশুর মৃত্যু হয়৷ ওই বায়ুঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে, জানিয়েছেন ট্রাম্প৷ সিরিয়ার যুদ্ধবিমান ও রেডার সিস্টেম সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিতে শক্তিশালী ক্রুজ মিসাইল লঞ্চ করবে আমেরিকা, জানিয়েছে পেন্টাগন৷ ইউএসএস পোর্টার ও ইউএসএস রস থেকে ছোড়া মিসাইলের টার্গেট সিরিয়ার যুদ্ধবিমান, শায়রাত বায়ুঘাঁটি, অস্ত্রভাণ্ডার৷ হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আসাদের নির্দেশে যে বায়ুঘাঁটি থেকে নৃশংস রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ হয়েছিল, সেই ঘাঁটি সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে৷ যাতে ভবিষ্যতে সেখান থেকে আর কোনও এই ধরনের হামলা না চালানো যায়৷
হামলার আগে ফ্লোরিডায় তাঁর ভাষণে ট্রাম্প সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ‘স্বৈরাচারী’ বলে মন্তব্য করেন৷ আসাদই সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে জঘন্য রাসায়নিক হামলা চালিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন ট্রাম্প৷ তাঁর বক্তব্য, “বিশ্বের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন রাষ্ট্রকে বলছি, আসুন আমরা একসঙ্গে সিরিয়ায় রক্তপাত রুখে দিই৷ সবরকম জঙ্গিদের শেষ করে দিই৷ যতক্ষণ আমেরিকা ন্যায্য বিচার চাইবে, শান্তি বজায় থাকবে৷” বিষ গ্যাস কাণ্ডে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে তুরস্ক এবং ফ্রান্সও৷ ফরাসি বিদেশমন্ত্রী জ্যাঁ মার্ক আয়রাউল বৃহস্পতিবার বলেছেন, “আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি এমন একটা দিন শীঘ্রই আসবে যেদিন আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকবেন আসাদ৷ নিরীহ নাগরিকদের বিরুদ্ধে বিষ গ্যাস প্রয়োগ করার জন্য আসাদের বিরুদ্ধে রায় দেবে আদালত৷ সেদিন চরম শাস্তি পাবেন আসাদ৷ কেউ তাঁকে বাঁচাতে পারবে না৷”
[জঙ্গিদের রাসায়নিক অস্ত্র ভাণ্ডারে হামলা, সিরিয়ার হয়ে সাফাই রাশিয়ার]
যেমন কেউ বাঁচাতে পারেনি সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট মিলোসেভিচকে৷ যুগোস্লাভিয়ার গৃহযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের জন্য চরম শাস্তি হয়েছিল স্লোবোদান মিলোসেভিচের৷ প্যারিসের সি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আয়রাউল জানান, উত্তর সিরিয়ার খান শেখুঁ এলাকায় সিরিয়ার বিমানবাহিনীই গ্যাস হামলা চালিয়েছিল৷ বিদ্রোহীদের দমন করার নামে বিষ বোমা ছুড়ে হত্যা করা হয়েছে অন্তত ৯০ জনকে৷ এই কাপুরুষোচিত আক্রমণের বিচার হওয়া দরকার৷ তিনি বলেন, আসাদকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে ঘোষণা করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফ্রান্সও৷ আসাদকে রক্ষা করতে এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দিতে পারে রাশিয়া৷ তবে উদ্যোগে কোনও ঘাটতি হবে না৷ সিরিয়ার উপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির কথাও ভাবছে ফ্রান্স৷ তবে এ ব্যাপারে সব দিক ভেবেই কোনও পদক্ষেপ করা হবে৷
আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেন-সহ নিরাপত্তা পরিষদের সব দেশ আসাদকেই কাঠগড়ায় তুলেছে৷ তাঁকে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী’ হিসাবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের জন্য তোলার দাবি উঠেছে৷ এর আগেও ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট ঘোউতা প্রদেশে বিষগ্যাস প্রয়োগ করে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল আসাদের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ, সুন্নি মতাবলম্বী বিদ্রোহীবাহিনীর (সৌদি আরব ও আরব দেশগুলির মদতপুষ্ট) সমর্থকদের খতম করতে প্রায়ই সারিন ও ক্লোরিন নামের মারাত্মক বিষগ্যাস প্রয়োগ করার নির্দেশ দেন আসাদ৷ আসাদ নিজে শিয়া মতাবলম্বী৷ আসাদকে সবরকমভাবে মদত দেয় রাশিয়া ও ইরান৷ ওবামার নিষ্ক্রিয়তার জন্যই আসাদ রাসায়নিক হামলা চালিয়ে পার পেয়ে গিয়েছেন, অভিযোগ ট্রাম্পের৷
যদিও পশ্চিমী দেশগুলির দাবি উড়িয়ে দিয়ে সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রক দাবি করেছে, “আমরা কোনওদিন কখনও কোথাও রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করিনি৷ করবও না৷ এটা অপপ্রচার চলছে৷ বিদ্রোহীবাহিনীই এই অস্ত্র মজুত করেছিল, তা ধ্বংস করা হয়েছে৷” লন্ডনভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি কাউন্সিল এবং রেডক্রশ জানিয়েছে, মঙ্গলবারের হামলায় ২৭ জন শিশুসহ কমপক্ষে ৭২ জন মারা গিয়েছেন৷ এদের কেউ মুখে গ্যাঁজলা উঠে, কেউ নাকে, চোখে মুখে রক্ত উঠে, দমবন্ধ হয়ে ছটফট করতে করতে মারা গিয়েছেন৷ এখনও চিকিৎসাধীন পাঁচশোর বেশি মানুষ৷ তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, সিরিয়ার পতাকার রং দিয়ে আঁকা সিরীয় বিমানবাহিনীর মিগ যুদ্ধবিমানগুলি গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ কার্পেট বম্বিং করে খান শেখুঁ ও আশপাশ এলাকায়৷ বোমবর্ষণের মিনিট তিনেকের মধ্যে বিষগ্যাসের প্রভাবে মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন৷ গন্ধ ও বর্ণহীন সারিন গ্যাসের প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্র বিকল হয়ে মাটিতে পড়ে যান শতাধিক শিশু ও মহিলা৷ রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গিতেরেস ক্ষুব্ধ হয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, সিরিয়াতে যা চলছে তা যুদ্ধাপরাধ৷ মানবতার লজ্জা৷
দেখুন সিরিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নৌসেনার মিসাইল ছোড়ার ভিডিও:
[সিরিয়ায় রাসায়নিক হামলায় বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা]
The post সিরিয়ার বিরুদ্ধে ৫৯টি টোমাহক মিসাইল ছুড়ল আমেরিকা appeared first on Sangbad Pratidin.