দীপালি সেন: ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের হাত ধরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Calcutta) স্নাতকস্তরের পাঠ্যক্রমে ঢুকে পড়েছে জ্যোতিষচর্চা। যা প্রকাশ্যে আসতেই তুঙ্গে উঠেছে বিতর্ক। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যুগে পাঠ্যক্রমে জ্যোতিষচর্চার অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে মঙ্গলবার দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। যদিও বিষয়টি আগেই নজরে এসেছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত দে-র। এবং সংশ্লিষ্ট পদাধিকারীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বিতর্ক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী যাবতীয় সবকিছু থেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি পাঠ্যক্রমকে ছোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। অন্তর্বর্তী উপাচার্য বলেন, “সমস্ত বিতর্কিত বিষয় বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যক্রমকেও কেটে ছোট করে দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত পাঠ্যক্রম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দেওয়া হবে।”
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্যে চালু হয়েছে চার বছরের স্নাতক কোর্স। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর ও তিন বছরের স্নাতক কোর্স রয়েছে। নয়া এই পাঠ্যক্রমের অধীনেই দ্বিতীয় সেমেস্টারের পড়ুয়াদের বেছে নিতে হবে একটি ‘কমন ভ্যালু অ্যাডেড কোর্স’। এর জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ছয়টি ভ্যালু অ্যাডেড কোর্সের মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’-এর। যার হাত ধরেই পাঠ্যক্রমে জায়গা পেয়েছে বেদ, বেদান্ত, জ্যোতিষ, পুরাণ। অবস্থান-বিক্ষোভে সামিল টিএমসিপির তরফে রনি ঘোষ বলেন, “এখন প্রত্যেকটা কলেজে ধর্মচর্চা হলে মন্দির, মসজিদগুলোয় কী হবে? আর ধর্মীয় চর্চা হলে, অন্য ধর্ম কেন পড়ানো হবে না? তাই আমাদের দাবি, এগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। না করা পর্যন্ত আমাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে।”
[আরও পড়ুন: ভোটের মুখে বাড়ল পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি, ১৩ মাসে সর্বোচ্চ! পূর্বাভাস জিডিপি নিয়েও]
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেন, “আমারই অবাক লেগেছে। জ্যোতিষচর্চা বা জ্যোতিষশাস্ত্রকে কোনওভাবেই আমি অন্তত সমর্থন করব না।” যদিও, এটি মূলত শব্দচয়নের ভুল বলেই দাবি অন্তর্বর্তী উপাচার্য শান্তা দত্ত দে-র। তাঁর বক্তব্য, “ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেমের প্রথম মডিউলে ‘জ্যোতিষা’ শব্দটি রয়েছে। প্রাচীনকালে সোলার সিস্টেম ব্যাখ্যা করার জন্য ওই সংস্কৃত শব্দটি ব্যবহার করা হতো। যা অনেকটাই অ্যাস্ট্রোনমির কাছাকাছি। অ্যাস্ট্রোলজি নয়। তবে যাতে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, তা পাঠ্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি।” তাই ডিনদের নিয়ে তৈরি কমিটির সঙ্গে পাঠ্যক্রম নিয়ে বৈঠক করেন শান্তাদেবী। এবং সেই বৈঠকেই বিতর্কিত বিষয়গুলি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি, কাটছাট করা হয় পাঠ্যক্রমেও।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬৯টি কলেজের মধ্যে একটা মাত্র কলেজ ‘ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম’ কোর্সটি নিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অন্যান্য ভ্যালু অ্যাডেড কোর্সের মধ্যে রয়েছে, হ্যান্ডস অন মেশিন লার্নিং, ডোমেস্টিক অ্যাপ্লিকেশন অফ ইলেকট্রনিক্স, অকুপেশনাল হেলথ ডিসঅর্ডার অ্যান্ড দ্য ইমপর্টেন্স অফ ইগ্রোনমিকস, লাইফস্টাইল ডিজিস অ্যান্ড দেয়ার প্রিভেনশন, ভ্যালু অরিয়েন্টেড লাইফ স্কিল এডুকেশন।