অর্ণব আইচ: ”আমি তোমার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি। তবে চিন্তা করো না, পুলিশকে তোমার আসল নাম বলিনি। আমাদের সম্পর্কের কথা পুলিশ কিছু জানে না।” আনন্দপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর অভিযুক্ত অভিষেক পাণ্ডেকে ফোন করে এসব কথা বলে দিয়েছিলেন অভিযোগকারিণী যুবতী। GPRS ট্র্যাক করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এসেছে পুলিশের। এ থেকেই স্পষ্ট যে, প্রেমিকের নাম ভাঁড়িয়ে তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগ করার পরও যুবতী যোগাযোগ রাখছিলেন তার সঙ্গে। এদিন অভিষেককে আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৬ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
শনিবার রাতের ঘটনার পর যুবতী অভিষেককে আশ্বস্ত করেছিলেন যে দু’জনে মিলে থানায় গিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেবেন। কিন্তু ভরসা রাখতে পারেনি অভিষেক। এক পরিচিতের পরামর্শে সে গা ঢাকা দেয়। শেষ পর্যন্ত জিপিআরএস ট্র্যাক করে যখন মঙ্গলবার রাতে অভিষেককে পুলিশ দমদমের গোরাবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে, তখনও দিশেহারা হয়ে ঘুরছিল সে। তাকে জেরা করে বহু তথ্য মিলেছে। পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার জন্য যুবতীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, সেই বিষয়েও পুলিশ আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছে।
[আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পর আরও কড়া পুলিশ, দুর্গাপুজো নিয়ে ভুয়ো পোস্ট করে গ্রেপ্তার ২ যুবক]
পুলিশ জানিয়েছে, গত তিন বছর ধরে অভিষেকের সঙ্গে অভিযোগকারিণী যুবতীর সম্পর্ক। মাস দুয়েকের মধ্যেই বিয়ে কথা ছিল দু’জনের। লকডাউনের জন্য এই বছর তাঁদের বিয়ে আটকে যায়। লকডাউনে অভিষেকের চাকরি চলে যায়। সম্প্রতি শেক্সপিয়ার সরণি অঞ্চলে একটি সংস্থায় যোগদান করে সে। গত কয়েক মাস ধরেই একটি বড় ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা ছিল দু’জনের। অভিষেক কিছু সময় চাইছিল। তর সইছিল না যুবতীর। বিষয়টি নিয়ে বহুবার দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এই বিষয়ে আলোচনার জন্য গত শনিবার তাঁরা একসঙ্গে বের হন। দু’জনই পুলিশকে জানিয়েছেন, ফ্ল্যাট নিয়ে কথা বলার সময় তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এর আগেও রেগে গিয়ে অভিষেকের গাড়ি থেকে বহুবার নেমে গিয়েছেন যুবতী। বাড়ি ফিরেছেন ক্যাবে করে। শনিবারও একসঙ্গে খাওয়া দাওয়ার পর বাইপাস লাগোয়া বিভিন্ন রাস্তা ও বাসন্তী হাইওয়েতে ঘুরছিলেন তাঁরা। চলছিল বচসা। যুবতী একসময় অভিষেককে বলেন, তাঁদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় ভাল। অভিষেকও একই কথা বলে।
আনন্দপুরের কাছাকাছি গাড়ি পৌঁছলে গন্ডগোলও চরমে ওঠে। জানা যায়, যুবতী তাঁর প্রেমিকের আঙুল কামড়ে দেন। যুবক তাঁকে মারতে শুরু করে। তার হাতের বালা লেগে যুবতীর কপাল কেটে গিয়ে রক্ত লাগে সিটে। যুবতী গাড়ি থেকে নেমে যেতে চান। অভিষেক অন্ধকারে তাঁকে নামতে দিতে চাননি। এর মধ্যেই যুবতী ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুনে চট্টোপাধ্যায় দম্পতি অভিষেকের গাড়িটি আটকান। আহত যুবতী গাড়ি থেকে নেমে যান। দীপের গাড়ি কাটিয়ে পালানোর সময় সামনে থাকা উদ্ধারকারী নীলাঞ্জনা দেবীকে ধাক্কা দেয় অভিষেকের গাড়ি।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, তখন যুবতী বুঝতে পারেন, তাঁর পিছু হঠার জায়গা নেই। এরপরই তিনি পুলিশকে ভুল তথ্য দেন বলে অভিযোগ। অভিষেক ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যুবতীর বাড়ি গিয়ে কেয়ারটেকারকে তাঁর মোবাইল ও ব্যাগ দেয়। রাতে সে চলে যায় নিজের ফ্ল্যাটে। সকালে যুবতী হোয়াটসঅ্যাপ কল করে অভিষেককে বলেন, তিনি বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এবার ব্যাপারটি মিটমাট করে নিতে। এতে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় অভিষেক। রবিবার বাড়িতে গাড়িটি রেখে, ল্যাপটপ, ডঙ্গল ও জামাকাপড় নিয়ে পূর্ব যাদবপুরের একটি হোটেলে গিয়ে ওঠে। ফোন বন্ধ থাকলেও চালু ছিল GPRS ও নেট। সোমবার যুবতী ফের হোয়াটসঅ্যাপ কল করে অভিষেককে বলেন, তার গাড়ি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তার আসল পরিচয় জেনে গিয়েছে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: আগামী সপ্তাহ থেকেই ছুটবে কলকাতা মেট্রো, চড়তে হলে এই নিয়মগুলি মানতেই হবে]
এরপর পুলিশের নজর এড়াতে প্রথমে যাদবপুরের একটি হোটেল, সেখান থেকে বাইপাস হয়ে পার্কসার্কাস ঘুরে দমদমে পৌঁছয় অভিষেক। ততক্ষণে GPRS ট্র্যাকিংয়ে গোরাবাজারের কাছে অভিষেকের নাগাল পায় পুলিশ। আজ তাকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে, তার আইনজীবী যুক্তি দেন যে এটি কোনও অপরাধ নয়, নিজেদের মধ্যে ঝামেলা। তা সত্ত্বেও বিচারক অভিষেককে ১৬ তারিখ পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
The post পালানোর পরও অভিযুক্তের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল আনন্দপুরের যুবতীর, GPRS ট্র্যাকিংয়ে মিলল তথ্য appeared first on Sangbad Pratidin.