সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লরেন ম্যানিং, লিন টাইনে এবং চার্লি গ্রে। কারা তাঁরা? ৯/১১ ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কী সম্পর্ক ? উত্তর হল, এই তিনজন সেই দিনের ঘটনার অন্যতম জীবিত সাক্ষী। ২০ বছর আগে দিনটা ছিল মঙ্গলবার। রোজের মতোই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের (World Trade Centre) ৭২ তলার অফিসে উত্তরের গেট দিয়েই ঢোকেন লরেন। মার্কিন এক সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টরের পদে কর্মরতা ছিলেন তিনি। তারপর…
“প্রচণ্ড আওয়াজে প্রথমে আমার মাথা ঘুরে গেল। আমার গোটা গায়ে আগুন। ওই অবস্থায় আমি রাস্তায় চলে আসি। অজ্ঞান হওয়ার আগে বুঝতে পারছিলাম, দমকলকর্মীরা আমার গায়ে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন। খানিকক্ষণের জন্য অজ্ঞানও হয়ে গিয়েছিলাম। জ্ঞান ফিরতে অনুভব করলাম গোটা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। বুঝতে পারলাম আমি পুড়ে গিয়েছি।”
[আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে ফিরেছে তালিবান, ৯/১১ হামলার প্রায় দু’দশক পর আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আল কায়দা?]
বিশ বছর আগের সেই স্মৃতি প্রায় এক লহমায় বললেন এই মার্কিন মহিলা। আজও তিনি ওই বাড়িতেই যান। সেখানে আজও তাঁর অফিস। কিন্তু সেই দিনের ঘটনা বলতে বসে লরেন জানালেন, জঙ্গি হামলায় তাঁদের অফিসের প্রায় ৬০০ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। বিমান হামলার পর লন্ডভন্ড অবস্থায় অনেকে প্রাণে বাঁচতে ৭২ তলা থেকে ঝাঁপও মেরেছিলেন। কিন্তু কী ভাবে নিজে বেঁচেছিলেন লরেন ? “আমার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মৃত্যু আমার নিশ্চিত ছিল। আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন ডাক্তার। যাঁরা ওই জায়গাতেই আমার প্রাথমিক চিকিৎসা করেছিলেন,” এখন সেই কথা মনে করে বেশ উদাস হয়ে পড়েন এই মার্কিন নাগরিক।
“হাসপাতালে ভরতি অবস্থায় একদিন আমার ছেলে দেখতে এসেছিল। তখন ও বেশ ছোট। আমাকে দেখে ভয় পেয়েছিল।” স্মৃতির পাতা ওল্টাতে বসে আজও কেঁদেই ফেলেন লরেন ম্যানিং। জানালেন, অনেক কষ্ট করেছেন। এই কুড়ি বছর বারবার ধাক্কা দিয়েছে সেই অভিশপ্ত দিন। মানসিকভাবে তাঁকে ধাক্কা দিয়েছিল। সেই লড়াই পেরিয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। স্বামী, ছেলেকে নিয়ে আজ দিব্য সংসার করছেন লরেন।
[আরও পড়ুন: Taliban Terror: ৯/১১ বর্ষপূর্তিতে বাতিল তালিবান সরকারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান]
সেদিনের স্মৃতি হাতড়াতে বসে আজও শিউরে ওঠেন আর এক মহিলা লিন টাইনে। ওই দিন টুইন টাওয়ারের ৬৮ তলায় তাঁর ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার কথা ছিল। বাড়ি থেকেও বেরিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝপথে খবর আসে জঙ্গি হামলার। ইন্টারভিউ বাতিল করেই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে এসে পৌঁছন নিউ ইয়র্ক (New York) ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি কমিশনার। সে কথা মনে করতেই লিন বলেন, “ওই দৃশ্য দেখা যায় না। গোটা এলাকা জ্বলছে। আমরা আগুন নেভাতে ভিতরে যেতে পারছি না। আর দেখছি, বাড়ির উপর থেকে খালি মৃতদেহ ছিটকে পড়ছে। আমি একজন দম্পতিকে দেখেছিলাম, যাঁরা হাতে হাত রেখে ওই দিন উপর থেকে লাফিয়ে ছিলেন।” অবশেষে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ির মধ্যে ঢুকতে পেরেছিলেন লিন।
তবে এই দু’জনের থেকেও অভিজ্ঞতা আরও ভয়ঙ্কর ছিল ব্রিটিশ ব্যবসায়ী চার্লি গ্রের। আজও এই ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ডুব দেন স্মৃতির সমুদ্রে। সেদিন তিনি বেঁচে উঠেছিলেন ভাঙা চাঙড়ের মধ্যে থেকে। “আইক্যাপ বলে এক মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে আমার বৈঠক ছিল। ২৬ তলায় তখন বৈঠক করছি। ওদের একজন কর্মীকে দেখলাম জ্বলছেন। তারপর কী হয়েছিল মনে নেই। আহত অবস্থায় নিচের তলা থেকে আমাকে উদ্ধার করা হয়েছিল।”