দেব গোস্বামী, বোলপুর: পুজোর যাবতীয় দায়িত্ব অমরনাথ দে ও বাপ্পা ঘোষদের। আয়োজনে দিনরাত পরিশ্রম করে নিশ্বাস ফেলার অবকাশ থাকে না নাসিরউদ্দিন কাজি ও রানা শেখদের। সম্প্রীতির অনন্য নজির। হিন্দু-মুসলিম মিলে নানুরের পাপুড়ি গ্রামে চলছে জোর দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। জাতপাত, ধর্মকে সরিয়ে রেখে হিন্দুদের সাথে আয়োজনে হাত লাগান মুসলিম সম্প্রদায়েরা। দেবীর আরাধনায় যেন মিলেমিশে আছে বেদ, বাইবেল, কোরান। মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস প্রায় হাতেগোনা। পুজোর চারটে দিন স্তোত্রধ্বনি চলার সময় মাথার ফেজ খুলে খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন মুসলমানেরা। আবার পবিত্র আজানের সময় দুর্গাপুজোও কিছুক্ষণ বন্ধ রাখা হয়। এই রীতি চলে আসছে ১২ ধরে।
গ্রামে দুর্গাপুজো(Village Durga Puja) হবে একসময় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন ভাবতেই পারতেন না। হিন্দু ভাইরা দুঃখ করে পুজোর কথা ‘ভাইজান’কে বলেন। তারপর থেকে গ্রামের ছেলে কাজল শেখ পুজো শুরু করেন। ওই গ্রামের জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়জুল হক ওরফে কাজল। হাজারও ব্যস্ততার মাঝে তিনি গ্রামের পুজোয় সময় দেন। পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত সকলেই। গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, উৎসবের কোনও ধর্ম হয় না। উৎসব সকলের। আর সে কারণে পুজোর সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন সকলে। একমাত্র পুজোর নিয়ম-আচার ছাড়া বাজারহাট, মণ্ডপসজ্জা, প্রতিমা কেনা থেকে নিরঞ্জন-সব কিছুতেই হাত লাগান গ্রামের মুসলমানরা।
[আরও পড়ুন: দম্পতিকে আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনা’, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আদালতে হাজিরা ‘অভিযুক্ত’ TMC নেতার]
পাপুড়ি গ্রামের বাসিন্দা অমরনাথ দে ও বাপ্পা ঘোষ বলেন, “প্রায় সাড়ে ছহাজার গ্রামবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস। হিন্দু পরিবার রয়েছে বেশ হাতেগোনা কয়েকটি। মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে দুর্গাপুজো করার সাহস এবং আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে দুর্গাপুজোয় অংশগ্রহণ করতে হত পাশের গ্রামগুলিতে। ১২ বছর আগে দুঃখের কথা ভাইজান কাজলকে বলা মাত্রই গ্রামে দুর্গাপুজোর ব্যবস্থা করেন। আর তাতেই গ্রামবাসীরা আনন্দিত।”
অন্যদিকে কাজল শেখের কথায়, “আমাদের এখানে পুজো মানেই দুর্গাপুজো, মায়ের পুজো। ওরা যদি আমাদের সঙ্গে ইদ পালন করতে পারে তাহলে আমরাও দুর্গাপুজো পালন করতে পারি। এখানে পুজো হবে, ঈদ হবে, বড়দিন হবে সব ধরনের অনুষ্ঠান হবে। আর আমরা একসঙ্গেই সবকিছুতেই সামিল হব। হিন্দু ভাইদের দুঃখ হত পাশের গ্রামে যেত পুজো দেখতে। তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। এই পুজো হিন্দু-মুসলিম সকলের।” নানুরের পাপুড়ি গ্রামে নানা জাতি, ধর্ম, বর্ণ মিলেমিশে উৎসবের আলোতে রঙিন।