দেব গোস্বামী, বোলপুর: পুজোর বরাত পেয়ে কারও যাওয়ার কথা সান ফ্রান্সিসকো, কেউ বা যাবেন সিডনি। আবার কেউ রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে পা রাখবেন ভিনরাজ্যে। বীরভূমের ঢাকিদের কদর দেশ, বিদেশেও। তবে এবার ভিসা সমস্যার জন্য কানাডায় যেতে পারছেন না জেলার ঢাকিরা। ভারত-কানাডার সংঘাতের আবহে ভিসা পরিষেবা বন্ধ। অন্যদিকে, কানাডা থেকেও বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালিরা পুজোয় সপরিবারে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। মনখারাপ সকলেরই। করোনা সংকটকালে (Coronavirus) পরপর দু’বছর ঢাক শিল্পীদের থাবা বসিয়েছে রুজি রোজগারে। এবারে পুজো নিয়ে অন্যরকম উৎসাহ তৈরি হয়েছিল। তবে কানাডার ভিসা না মেলায় দুর্গাপুজোয় (Durga Puja 2023) কাজ না পেয়ে হতাশ জেলার শতাধিক ঢাক শিল্পীরা।
লাভপুর, নানুর, ইলামবাজার, বোলপুরের সিয়ান সুখবাজার এলাকায় এইসব পেশার সঙ্গেই বহু বাসিন্দা যুক্ত। লাভপুরের সুনীল বাদ্যকার, সিয়ানের রতন দাস বলেন, “উলটো রথের দিন কাজের বরাত মেলার সত্ত্বেও কানাডায় না যেতে পারায় উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেল। জেলায় স্থানীয় পুজো কমিটির বাজেট কাটছাঁট হওয়ায় ঢাকিদের অর্ধেকেরও কম মূল্য দেওয়া হয়। কিন্তু এখন অগত্যা স্থানীয় পুজো কমিটিই ভরসা।”
[আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ছাড়াও বাড়তি টাকা দাবি, দিতে না পারায় মাঝপথে অস্ত্রোপচার থামালেন চিকিৎসক!]
পুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে, ঢাকিপাড়ায় আগমনীর বদলে বিষাদের সুর বাজছে। যদিও বর্তমানে এখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই অন্য কাজ করে জীবন ধারণ করেন। তবে গ্রামের একাংশ পরিবার ঢাকের উপরেই নির্ভরশীল। ঢাক শিল্পীর কাছে দুর্গাপুজো মানেই আনন্দের সময়। এই পাঁচদিন ঢাক বাজিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময়ের সংসার খরচ উঠে যেত। দু মাস আগে থেকেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যেত ঢাক বাজাতে যাবেন। পছন্দমত ঢাকিদেরও বেছে নিতেন। আর ঢাকের বলে মাতিয়ে দিতেন বিদেশের পূজা মণ্ডপ।
[আরও পড়ুন: সুতিতে শুটআউট, স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জেনে ফেলায় খুন স্বামী!]
নানুরের ঢাকশিল্পী সদানন্দ রুইদাস ও সনাতন মেটে বলেন, “২০১৫ সালে আমাদের ঢাক বাজানোর ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় একজন আপলোড করেন। সেই ঢাকের বোল শুনে কানাডার পুজো উদ্যোক্তারা যোগাযোগ করেছিলেন। এর পর থেকেই নিয়মিত পুজোর বরাত পেয়ে আসছি। বিদেশে ঢাক বাজাতে গেলে বেশি পারিশ্রমিক মেলে। কিন্তু এবার মিলছে না ভিসা। আর সে কারণেই উপার্জনেরও সুযোগ নেই।” পুজোয় কোথায় ঢাক বাজানো হবে, তা নিয়ে ঢাক শিল্পীদের মধ্যে সেই নিয়েই তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা।
অন্যদিকে, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বনেদি বাড়িগুলির পুজোয় সপরিবারে বাড়িও ফিরতে পারছেন না কানাডায় কাজ করতে যাওয়া বাসিন্দারা। কানাডা থেকে সুনীল বরণ মুখোপাধ্যায় ও শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রতি বছর পুজোয় বাড়ি ফিরতাম। পরিবারের সকলের সঙ্গেই দেখা হতো। এবার ভিসা না পাওয়া পুজোয় যাওয়া হচ্ছে না। মন খারাপ সকলেরই। এবারে বাড়ির পুজো ভিডিও কল সোশাল মিডিয়ায় একমাত্র ভরসা।”