প্রিয় বিরাট কোহলি,
আমাদের একজন ঈশ্বর আছেন। যিনি ১০ নম্বর জার্সি গায়ে মাঠে নামতেন। তাঁর নাম শচীন রমেশ তেণ্ডুলকর। যাঁকে নিয়ে ভারতীয় হিসেবে আমাদের গর্বের অন্ত নেই। তিনি তো ঈশ্বর। ঈশ্বর তো সব পারেন। কিন্তু আপনাকে তো আমরা রক্ত মাংসের মানুষ হিসেবেই জানতাম। সে ভাবনায় জোর আঘাত হানলেন আপনি। যারা মাস্টার ব্লাস্টারের মাধুর্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সেই প্রজন্মকে গর্ব করার রসদ দিলেন। আর সেই সঙ্গে দিলেন পূর্বসূরির সামনে সংযত থাকার পাঠও। ঔদ্ধত্য নয়, সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেও ঈশ্বরকে ঈশ্বরের স্থানে রেখেই পুজো করলেন আপনি। ওয়াংখেড়েতে সেঞ্চুরির পর গ্যালারিতে হাততালিরত শচীনের উদ্দেশে যেন মনে মনে বলছিলেন, “নতজানু হয়েছিলাম তখনও, এখনও যেমন আছি…।
[আরও পড়ুন: মিস্টার সাবস্টিটিউট থেকে দেশের হৃদস্পন্দন, শামি এক লড়াইয়ের নাম]
তবে আপনাকে তো একটি ভূমিকায় দেখা গেল না। গুরুর সামনে আপনি যেমন বাধ্য শিষ্য, তেমনই তো দুনিয়ার সেরা উপহার তুলে দিয়ে স্ত্রীর মুখে হাজার ওয়াটের হাসি ফোটাতে পারা স্বামীও আপনি। একটা সময় এই অনুষ্কা শর্মার মাঠে উপস্থিতি নিয়ে কত কটূক্তিই না হজম করতে হয়েছে আপনাকে। কত রঙ্গ-তামাশা, কটাক্ষ, এমনকী ‘অপয়া’ তকমাও জুটেছে এই প্রেমের কপালে। অনুষ্কার পাশে দাঁড়িয়ে বারবার সেসবের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। কখনও আবার আপনার হয়ে কথা বলেছে আপনার ব্যাট। আর যখন কেরিয়ারে এল সেই বীভৎস সময়টা, তখন আপনার উপর দিয়ে কী ঝড়-ঝাপটা গিয়েছে, তা অতি বড় ভক্তও হয়তো অনুভব করতে পারেনি। তবে সে দুর্দিনেও একজন মানুষকে পাশে পেয়েছিলেন। স্ত্রী, বন্ধু, গাইড হিসেবে। তিনি তো অনুষ্কাই। তাই সর্বকালের সেরা হয়ে যখন তাঁকে উড়ন্ত চুম্বন দিয়ে ভালোবাসায় ভরালেন, তখন বিশ্বের নানা প্রান্তের তরুণীরা যেন প্রার্থনা করলেন, আপনার মতোই স্বামী চাই। মনে মনে কি অনুষ্কাকে বললেন, ‘বিদ্রোহ আর চুমুর দিব্যি শুধু তোমাকেই চাই….’?
সেই ২০০৮ সালে দেশের জার্সিতে ওয়ানডে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ক্রিকেটের নন্দনকাননে প্রথম সেঞ্চুরি। তারপর ধীরে ধীরে নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে একের পর এক রেকর্ডের মালিক হয়েছেন। বাকি দুনিয়ার কাছে ঈর্ষণীয় হয়েছে আপনার কেরিয়ার স্ট্যাট। সবটাই তো ওই বাইশ গজের প্রতি ভালোবাসায়। বাবার মৃত্যুর পরই মাঠে নেমে পড়া হোক কিংবা পরিস্থিতি বুঝে নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো, প্রতিটা সিদ্ধান্তই যে তেরঙ্গার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা আর সম্মানের প্রমাণ। আপনার তীক্ষ্ণ আগ্রাসনের নেপথ্য লুকিয়ে থাকা আবেগ, আত্মত্যাগ আর অদম্য জেদেরই তো বারবার প্রেমে পড়ি আমরা। একটাই তো হৃদয় কোহলি, আর কতবার জিতে নেবেন!
ইতি, আপনার এক অনুগামী।