নন্দন দত্ত, বোলপুর: বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত তুঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লেখার হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর হুঁশিয়ারির জবাবে পালটা বিবৃতি দিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিবৃতির ছত্রে ছত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া আক্রমণ করা হয়েছে। “মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন”, বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। বিশ্বভারতীর বিবৃতির সমালোচনায় সরব সব মহল।
মঙ্গলবারই আন্দোলনরত বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার বোলপুরে জনসভার মঞ্চ থেকে আরও একবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একহাত নেন তিনি। বলেন, “এখন বিশ্বভারতীর অবস্থা দেখুন। আমরা একসময় যাকে নিয়ে গর্ব করতাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৈরি গর্বের এই হাল। শিক্ষক-শিক্ষিকারা কাঁদছে। ছাত্রছাত্রীরা কাঁদছে। লজ্জা লাগছে। শান্তিনিকেতনে মুক্ত পরিবেশে যারা শিক্ষা নিতে এসেছে তারা আজ কষ্টে আছে। লজ্জা লাগে। পড়ুয়াদের কাউকে সাসপেন্ড করে দিচ্ছে, অধ্যাপকদের কাউকে বসিয়ে দিচ্ছে। শুনে রাখুন আমি কিন্তু ছেড়ে রাখার জন্য ওদের সঙ্গে কথা বলিনি। আমি ইউক্রেনে আটকে পড়া ছাত্রছাত্রীদের ব্যবস্থা যেমন করে দিতে পারি তেমনই যারা পড়তে চান তাদের ব্যবস্থাও করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি। কোর্টের অর্ডার ওরা মানেনি। আমরা সেই ব্যাপারটা একটু দেখে নিই তারপর আপনাদের জানিয়ে দেব।”
[আরও পড়ুন: ‘দিদি একা সামলাতে পারছেন না’, মানিকের ২টি পাসপোর্টের হদিশে মন্তব্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের]
সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর সু্প্রিয় ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথাও এদিনের জনসভার মঞ্চ থেকে জানান মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর কথায়, ”সু্প্রিয় ঠাকুরও সেদিন এসে আমার কাছে দুঃখ করছিলেন। ওঁর বাড়ির সামনেও নাকি একটা পাঁচিল তুলে দিয়েছে। আশ্রমিকরা সবাই কষ্টে আছেন। প্রত্যেকের বাড়ির সামনেও পাঁচিল।” বিশ্বভারতীর উপাচার্যকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে মমতা বলেন, “সবাই জেলখানায়-ডোবাখানায় থাকবে আর উনি শুধু মুক্তখানায় থাকবে। ডুগডুগি বাজিয়ে কাউকে মারবেন, কাউকে ধরবেন, কারও নামে কুৎসা, অপপ্রচার করবেন। বিশ্বভারতী লালমাটির জায়গা, গৈরিকীকরণ করবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কেন্দ্রের আওতায় সেখানেই এই হাল। প্রধানমন্ত্রী তো চ্যান্সেলার তাঁর তো দেখা উচিত। আমি চিঠি লিখব।”
মুখ্যমন্ত্রীর এহেন চাঁচাছোলা আক্রমণের কয়েকঘণ্টা পর বিবৃতি দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “বিশ্বভারতীকে নিয়ে জনসমক্ষে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা অস্বাভাবিক নয়। মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন। তাঁকে তাঁর স্তাবকরা যা শোনান তাই বিশ্বাস করেন। আপনি চোখ দিয়ে দেখুন। কান দিয়ে নয়। তথ্য ও প্রমাণ দেখে মত তৈরি করুন। মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা। বিশ্বভারতী প্রধানমন্ত্রীর মতাদর্শে চলতে অভ্যস্ত।”
রাজ্যের নেতামন্ত্রীদের গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গ তুলেও মমতাকে নিশানা করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে উল্লেখ করে, “আজ আপনার মন্ত্রী ও উপাচার্য গারদের ভিতরে কী করে হল? আপনি স্তাবকদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই বিধ্বস্ত। আপনার প্রিয় শিষ্য যাকে না হলে আপনি বীরভূম ভাবতে পারতেন না, তিনিও জেলে। কবে বেরবেন কেউ জানে না। আগে সাবধান করলে আপনি দুর্নাম থেকে বাঁচতে পারতেন। অবশ্য আপনি যদি সত্যি অর্থে মানুষের মুখ্যমন্ত্রী হন, তাহলে এই কথাটা আপনার বোধগম্য হবে। আর যদি স্তাবক পরিবৃত্ত থাকতে ভালবাসেন তাহলে সামনে আরও বিপদের সম্মুখীন হবেন।” মুখ্যমন্ত্রী এবং বিশ্বভারতীর দ্বৈরথকে ভাল চোখে দেখছেন না শিক্ষাবিদরা।
আর কী কী রয়েছে বিশ্বভারতীর বিবৃতিতে? দেখুন একনজরে