দেব গোস্বামী, বোলপুর: অবশেষে বিতর্কিত ফলক ভেঙে ফেলল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বুধবার সন্ধ্যায় চাপের মুখেই ভেঙে গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হল রবীন্দ্রনাথকে অবমাননা করার ফলকগুলি। পরিবর্তে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের নির্দেশমতোই প্রতিস্থাপন করা হল নতুন ফলক।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি পাওয়ার পরই শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী উপাসনাগৃহ, রবীন্দ্রভবন ও গৌরপ্রাঙ্গণে তিনটি শ্বেতপাথরের ফলক বসায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাতে আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তৎকালীন উপাচার্য হিসেবে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম ছিল। তবে ব্রাত্য স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। যা নিয়ে নিন্দা ঝড় ওঠে সর্বত্র। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১৪ দিন ধরে টানা আন্দোলন করে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-সাংসদেরাও। প্রতিবাদ জানায় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট, প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকেরা। গত ৮ নভেম্বর, বিদ্যুৎমুক্ত হতেই চাপে পড়ে অনেক টালবাহানার পর বিতর্কিত ফলক সরানোর নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক।
[আরও পড়ুন: চলন্ত গাড়িতে বেহুঁশ করে প্রাক্তন প্রেমিকাকে ‘ধর্ষণ’, পালটা অপহরণের অভিযোগ যুবকের]
অবশেষে বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্বভারতীর তরফ থেকে বিতর্ক তুঙ্গে তোলা ফলকগুলি উপড়ে ফেলা হয়। আচমকা অভিযানে নেমে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী স্থানে বসানো তিনটি ফলকই ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে নতুন ফলক প্রতিস্থাপন করা হয়। স্বাভাবিকভাবে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর পড়ুয়া অধ্যাপক থেকে শুরু করে প্রাক্তনী ও প্রবীণ আশ্রমিকেরা। নতুন ফলকে আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী বা উপাচার্যের নাম নেই। ফলকের মাঝখানে অশোক স্তম্ভ। দুপাশে ইউনেস্কো ও বিশ্বভারতীর লোগো। রবীন্দ্রপ্রেমীদের বড় অংশই মুখর হয়েছিলেন এই ফলকের বিরুদ্ধেই। আর প্রতিবাদের সেই আঁচ উপলব্ধি করেই ফলক সারানো নির্দেশ পাঠাতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক।
রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “জোর করে স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনও নির্দেশিকা ছাড়াই ফলক লাগিয়েছিলেন প্রাক্তন উপাচার্য। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১৪ দিন আন্দোলনের ফল পেলাম। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথকে বাঙালির হৃদয় থেকে মুছে ফেলার চক্রান্ত হয়েছিল। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ফলক ভেঙে ফেলায় প্রকারান্তে ভুলও স্বীকার করে নিল।” হস্তশিল্প মার্কেটের আমিনুল হুদা বলেন, “গুরুদেবের জায়গায় গুরুদেবের নাম থাকবে না। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম থাকবে। দেরিতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছেন জেনেই খুশি সকলে।”
প্রবীণ আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে রবীন্দ্রনাথের প্রতি অবমাননার প্রতিবাদে ফলক প্রসঙ্গে জানানো হয়। ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং নতুন ফলক প্রতিস্থাপন করা হয়েছে জেনেই সকলেই খুশি।” বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্মী ও অধ্যাপকদের একাংশের মত, “নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা করেছিলেন মাত্র। নিজের ইচ্ছামতোই তিনি ফলক লাগিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছেন।” যদিও বিশ্বভারতী ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতো জানান, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের নির্দেশ মতোই নতুন ফলক প্রতিস্থাপন করা হয়েছে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানে।