ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: বিতর্ক উপেক্ষা করেই বিশ্বভারতীতে (Vishva Bharati) ‘কালী পুজোর ধারণা’ শীর্ষক আলোচনা চলছে৷ উলটোদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ অব্যাহত পড়ুয়াদের একাংশের। আর সেই বিক্ষোভের আঁচ পেয়েই আলোচনা হল অনলাইনে। এমনকী অভিযোগ, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের (Amartya Sen) ভাই তথা প্রবীণ আশ্রমিক শান্তভানু সেনকেও ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিলেন না বিশ্বভারতীর নিরাপত্তারক্ষীরা।
ব্রাহ্ম বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে তৈরি বিশ্বভারতী। এখানে মূর্তিপুজোর রেওয়াজ নেই, হয় না কোনও বিশেষ ধর্মীয় আলোচনা। কিন্তু, হঠাৎ করেই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নির্দেশে ‘কালীপুজোর ধারণা’ (Kali Puja) শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনার বক্তা স্বামী সারদাত্মানন্দজি মহারাজ। আলোচনার ঘোষণা হতেই বিতর্ক তৈরি হয়। নিন্দায় সরব হয় বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, আশ্রমিক, রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষজন। সেই সব বিতর্ক উপেক্ষা করেই এদিন শুরু হয় আলোচনা। তাই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখায় পড়ুয়াদের একাংশ। যদিও, বিক্ষোভের আভাস পেয়েই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষের বদলে অনলাইনে আলোচনার আয়োজন করা হয়। এই আলোচনায় আশ্রমিকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মামাতো ভাই তথা প্রবীণ আশ্রমিক শান্তভানু সেনও ঢুকতে পারেননি।
[আরও পড়ুন: শাশুড়িকে বেহুঁশ করে শ্বশুরবাড়িতে লুট, সঙ্গী প্রেমিক! বধূর কীর্তিতে শোরগোল বনগাঁয়]
প্রসঙ্গত, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের ‘কালী’ (Kali) প্রসঙ্গ মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক হয়। তারপরেই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কালীচর্চার আয়োজন উপাচার্যের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ বলেই অভিযোগ উঠছে। আরও অভিযোগ, যেখানে NIRF র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বভারতীর শিক্ষার মান কমছে, সেখানে মান উন্নয়ন সংক্রান্ত কোনও আলোচনা নেই। অথচ, কালীপুজোর ধারণা নিয়ে আলোচনার আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ। এই আলোচনা কোন শিক্ষায় লাগবে? সেই প্রশ্নও উঠেছে।
[আরও পড়ুন: ১০ বছরের সম্পর্ক, যৌথভাবে সম্পত্তি কিনেছিলেন পার্থ-অর্পিতা! জোরাল দাবি ইডির]
বিক্ষোভকারী ছাত্রীদের মধ্যে শ্রেয়া দে ও কৃত্তিকা চক্রবর্তী বলেন, “রাজনৈতিক উদ্দেশে উপাচার্য এই আলোচনার আয়োজন করেছেন। বিশ্বভারতীতে মূর্তিপুজো হয় না, কোনও বিশেষ ধর্মের আলোচনা হয় না। সেখানে কালীপুজোর ধারণা নিয়ে আলোচনা বিশ্বভারতীর কোন কাজে লাগবে?” আশ্রমিক শান্তভানু সেন বলেন, “নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা হয় এখানে। সেই জায়গায় কালী আলোচনা কেন সেটাই শুনতে ও আমাদের বক্তব্য রাখতে এসেছিলাম। কিন্তু, নিরাপত্তারক্ষীরা ঢুকতেই দিল না।”
এই সেমিনার নিয়ে ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, বিশ্বভারতীর সংস্কৃতিকে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। কালী এবং ধর্ম বিষয়ে কোনও আলোচনা আগে হয়নি। এটা খুব দুঃখজনক। বিশ্বভারতী অধ্যাপক সংগঠন VBUFA’র সভাপতি সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, উপাচার্য প্রতিবাদের জেরে বাধ্য হয়ে অনলাইন সেমিনার করেছেন। এটা উপাচার্যের পরাজয় হিসাবে আমরা দেখছি। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে কিছু বলতে অস্বীকার করেন।