দেব গোস্বামী, বোলপুর: শান্তিনিকেতনকে ইউনেসকোর (UNESCO) বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি ঘোষণার পরই রাস্তা ফিরে পেতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। রাজ্য সরকারের ফেরত নিয়ে নেওয়া রাস্তা ফের বিশ্বভারতীকে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন উপাচার্য। শান্তিনিকেতন (Santiniketan) থেকে শ্রীনিকেতনের সংযোগকারী প্রায় তিন কিলোমিটার আশ্রমের মাঝ বরাবর রাস্তাটি রক্ষণাবেক্ষণ করে রাজ্য সরকারের পূর্ত বিভাগ। রাস্তাটি বর্তমানে পূর্ত দপ্তরের অধীনে এবং জেলাশাসকের নিয়ন্ত্রণে।
প্রসঙ্গত, রাস্তাটি ২০১৭ সালে বিশ্বভারতীর তৎকালীন উপাচার্য স্বপন দত্তের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বভারতীর (Vishva Bharati) হাতে তুলে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। অমর্ত্য সেন, নন্দলাল বসু, গৌরী ভঞ্জ, শান্তিদেব ঘোষ-সহ বহু বিশিষ্ট আশ্রমিকদের বাসভবন এই রাস্তার ধারেই। পরবর্তীতে মুখ্যমন্ত্রীকে আশ্রমিকদের একাংশ অভিযোগ করেন, বর্তমান উপাচার্যের সময়ে যখন তখন ওই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সমস্যায় পড়ছেন বসবাসকারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য (VC) বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও মুখ্যমন্ত্রীর সংঘাত চরমে উঠলে গত ২০২০ সালে রাস্তাটি ফের ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণামত তা ফের চলে যায় রাজ্য সরকারের অধীনে।
[আরও পড়ুন: পুজোর আগে অভিনব জালিয়াতি কলকাতায়! ব্যাঙ্কের ভিতরই টাকা খোয়ালেন যুবক]
সম্প্রতি শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব হেরিটেজ (World Heritage) ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সূযোগকে কাজে লাগিয়ে রাস্তাটি ফেরত নেওয়ার তৎপরতা শুরু করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সোমবারই উপাচার্য মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “১৭ সেপ্টেম্বর ইউনেসকো শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব হেরিটেজ তকমা দিয়েছে। এই তকমা ধরে রাখতে হবে আমাদের সকলকে। এই রাস্তার দুই ধারে একাধিক ঐতিহ্যবাহী ভবন, স্থাপত্য, ভাস্কর্য রয়েছে। ভারী যান চলাচলের ফলে কম্পনে এগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এই রাস্তাটি বিশ্বভারতীকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”
ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, হেরিটেজ ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর ‘উচ্ছ্বাস’ প্রকাশ করেছেন। এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি-সহ প্রাক্তনীরা বর্ণাঢ্য পদযাত্রাও করেছে শান্তিনিকেতনে। সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছেন বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য। অধ্যাপক-কর্মীদের একাংশ বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর খুশি ব্যক্ত করেছেন এই হেরিটেজ ঘোষণায়। এবার রাস্তা ফেরতের আবেদনের মধ্যে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আদৌ কতটা আন্তরিক, তা বুঝে নিতে চান উপাচার্য। ওয়াকিবহাল মহলের মত, রাস্তা ফেরত দিলে বিশ্বভারতীরই ভালো। না দিলে মুখ্যমন্ত্রীকে দোষারোপে আবারও সুবিধা হবে।
[আরও পড়ুন: দগ্ধ মুখ, গলার নলি কাটা, বসিরহাট সীমান্তে যুবতীর দেহ উদ্ধার ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্য]
২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর বোলপুরে (Bolpur) মুখ্যমন্ত্রী গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক সভা থেকে পুনরায় রাস্তাটি ফিরিয়ে নেন তিনি। তখনই রাস্তা ফিরে পেতে ছাতিমতলায় ধর্নাতেও বসেছিলেন বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। প্রতিশোধ নিতে একাধিক রাস্তায় পাঁচিল তোলাও হয়। ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলির রক্ষণাবেক্ষণের নাম করে আবারও কি বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ আশ্রম সংলগ্ন রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে চাইছে? এই প্রশ্নই জোরাল হয়েছে শান্তিনিকেতনের অন্দরে।
তবে তা এতটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন বাসিন্দারা। কারণ এই রাস্তার উপরেই সঙ্গীত ভবন থেকে কাঁচমন্দির, ছাতিমতলা, রবীন্দ্রভবন ,মিউজিয়াম ও অন্যান্য ঐতিহাসিক নির্মাণ যেমন রয়েছে। তেমনই অজস্র স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে প্রাক্তনী ও গুণীজনদের বাড়ি রয়েছে। এই রাস্তা ফের বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে রাজ্য সরকার ফিরিয়ে দিলে সংশয়ে সমস্যায় পড়তে হবে আশ্রমিক থেকে সাধারণ মানুষজনদের। এমনই মনে করেছেন বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারা।