সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের বিস্ফোরক বিশ্বভারতীর উপাচার্য। তাঁর কটাক্ষ, “শান্তিনিকেতনের জমি দখল করে রাখলেই রাবীন্দ্রিক। অন্য়ায় করলেই রাবীন্দ্রিক। বিশ্বভারতীকে অপমান করতে পারলে সে ব্য়ক্তিও রাবীন্দ্রিক।” আসলে, শান্তিনিকেতনে বসবাসকারী রাবীন্দ্রিক মানেই স্বার্থসিদ্ধির সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহারকারী, দাবি বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। যা দেখে ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ঘুরিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনকে নিশানা করেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
বিশ্বভারতীর উপাচার্যের কথায়, “শান্তিনিকেতনের জমি দখল করে রাখলেই রাবীন্দ্রিক। উপাচার্যকে গালিগালাজ করলেই রাবীন্দ্রিক। অন্যায় করলে রাবীন্দ্রিক। বিশ্বভারতীকে অপমান করতে পারলে সেই ব্যক্তিও রাবীন্দ্রিক।” তাঁর আরও সংযোজন, “বিশ্বভারতীতে উচ্চশিক্ষিত মানুষ যেমন আছেন, সেরকমই অশিক্ষিত মানুষও আছেন। অল্পশিক্ষিত মানুষ তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। তাই তাঁদের কাছে রাবীন্দ্রিক শব্দের সঠিক অর্থ পাবেন না।” বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আরও বলেন, “শান্তিনিকেতনে বসবাসকারী রাবীন্দ্রিক মানেই স্বার্থসিদ্ধির সোপান।” সবমিলিয়ে এদিন ফের একবার নাম না করে নোবেলজয়ী অর্মত্য সেনকে নিশানা করেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য।
[আরও পড়ুন: জানুয়ারিতে দক্ষিণবঙ্গে ফিরছে না শীত, সরস্বতী পুজোয় আরও বাড়বে তাপমাত্রা]
প্রসঙ্গত, গতকাল জমি ফেরত চেয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে চিঠি দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলতেই তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
চিঠিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে শান্তিনিকেতনের পৈতৃক বাড়ি ‘প্রতীচী’তে অমর্ত্য বিশ্বভারতীর ১৩ ডেসিমেল জায়গা দখল করে রেখেছেন। জমি মাপজোক করে ও রেকর্ড দেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নাকি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বসার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, অমর্ত্য অবৈধভাবে বিশ্বভারতীর কিছু জমি তাঁর পৈতৃক ভিটেতে যোগ করে নিয়েছেন। বিশ্বভারতীর অভিযোগকে তখনই কল্পনাপ্রসূত বলেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তাঁর বাবা আশুতোষ সেন ‘প্রতীচী’ বাড়ির জমি বাজার থেকে কিনেছিলেন বলে তিনি জানান। মঙ্গলবারও তিনি বলেন, “বানানো মিথ্যা কথা, ওদের রুচিতেই এটা মানায়। আগে আইনজীবীরা এ বিষয়ে জবাব দিয়েছিলেন। আগামীদিনেও তাঁরাই জবাব দেবেন।” সবচেয়ে মজার কথা, ৫০ বছর পর কেন এই অভিযোগ তোলা হল?
শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিকদের অভিযোগ, বিজেপির অঙ্গুলিহেলনেই বিশ্বভারতীর বর্তমান উপাচার্য অমর্ত্যকে হেনস্তা করতে নেমেছেন। একই কথা মনে করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলও। এবার দেশে এসেই বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে বরাবরের মতো সরব হয়েছেন অমর্ত্য। তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী দলের ঐক্যের বিষয়েও জোর দিয়েছেন। বিজেপি বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন। মমতা দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য বলেও তিনি জানিয়েছেন। এরপরই তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছে বিজেপি। অমর্ত্যকে কদর্যভাষায় আক্রমণ করে বিবৃতি দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারাও।
[আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে শুটআউট, বাড়ি ফেরার পথে তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুন, তুমুল চাঞ্চল্য]
সোমবারই শান্তিনিকেতনে পৌঁছেছেন অমর্ত্য। মঙ্গলবারই তাঁকে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে চিঠি ধরানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের জয়েন্ট রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘‘রাজ্য সরকারের ল্যান্ড রেকর্ড ও জমিতে গিয়ে সমীক্ষার পর দেখা গিয়েছে সুরুল মৌজায় অমর্ত্য সেনের প্লটে ১৩ ডেসিমেল বিশ্বভারতীর জমি রয়েছে। যা অমর্ত্য সেন অবৈধভাবে ভোগ করছেন। জমিটি ১৯৪৩ সালে অমর্ত্য সেনের পিতা আশুতোষ সেনকে লিজ দেওয়া হয়েছিল। ২০০৬ সালে যা অমর্ত্য সেনের নামে মিউটেশন করা হয়।’’চিঠিতে জয়েন্ট রেজিস্ট্রার অমর্ত্যকে যত দ্রুত সম্ভব এই ১৩ ডেসিমেল জমি ফেরত দিতে বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন, অমর্ত্য সেন চাইলে তঁার বা তঁার অ্যাডভোকেটের উপস্থিতিতে বিশ্বভারতী যুগ্মসমীক্ষাতেও রাজি।
অমর্ত্যকে বিশ্বভারতীর এই চিঠির কথা প্রকাশ পেতেই শান্তিনিকতনের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায়। বিশ্বভারতীর প্রাক্তনীরা কর্তৃপক্ষের নিন্দা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট দিতে থাকেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলও। অতীতে বিষয়টি অমর্ত্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে এনেছিলেন। মমতাও তখন অমর্ত্যর পাশে দাঁড়ান।